দূতাবাসের দাওয়াতে সবাই কেতাদূরস্ত। আগের দিনের বিষণ্নতা ভুলে ক্রিকেটাররা ব্যস্ত গল্পে। তাতে ক্রিকেটও যে অবধারিতভাবে আছে, তা তাদের ব্যাটের শ্যাডো কিংবা বল ছাড়াই হাতের গ্রিপ দেখে বোঝা যাচ্ছিল। এর মধ্যে ঢেকে রাখা খাবার কিছুক্ষণ দেখলেন সাকিব আল হাসান, এরপর খাওয়া-দাওয়ার পর্বটা শুরুও হলো তার হাত ধরে। তাকে তো আসলে নেতা হতে হবে এখন সবখানে!
সাকিবের কণ্ঠেও হতাশা লুকিয়ে ছিল নেদারল্যান্ডস ম্যাচের পর। দুদিনের মাথায় ফের সংবাদ সম্মেলনে আসা অধিনায়ক পাকিস্তান ম্যাচের আগে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে। কেন? তিনি বলেছেন ওই কারণও, ‘আসলে খারাপ অনুভব করতে থাকলে তো চলবে না। সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে আমাদের। ’
সামনের পথটা আসলে কী? এ প্রশ্নও আসে। ইডেন গার্ডেন্সেই বাংলাদেশের আগের ম্যাচের আগেও মিটি মিটি করে জ্বলা বিশ্বকাপ আশার আলোতে এখন দিয়াশলাইয়ের বারবার চেষ্টাতেও আগুন ধরছে না। স্বাভাবিকভাবেই তাই আলোও নেই।
পাকিস্তান ম্যাচের আগে ঠিক হয়ে গেছে নতুন স্বপ্ন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে অধিনায়ক সাকিবসহ কয়েকজন ক্রিকেটারের আশার কথা শোনা গিয়েছিল আগে। ওই টুর্নামেন্ট খেলেই অবসরে যাবেন, এমন কথাও বলেছেন কেউ কেউ। কিন্তু এখন সেটিতে খেলা নিয়েও সংশয়।
বিশ্বকাপের প্রথম ছয় ম্যাচের কেবল একটিতে জেতায় বাংলাদেশ আছে পয়েন্ট টেবিলের দশে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে বাকি তিন ম্যাচের দুটিতে জিততে হবে অবধারিতভাবে।
ইডেন গার্ডেন্সে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আলোচনায় বিশ্বকাপ ব্যর্থতা। সাকিব আল হাসান সেসবে যেতে চাননি একদমই।
তার আশা-ভরসার জায়গার সবটুকুজুড়েই পরের তিন ম্যাচ। পাকিস্তান যতই টানা চার ম্যাচ হারুক আর টালমাটাল থাকুক তাদের ক্রিকেট; চ্যালেঞ্জটা যে কমবে না, তা ভালো জানার কথা সাকিবেরও। প্রতিপক্ষের হার বাড়তি মোটিভেশন দেবে কি না প্রশ্নে তাই তার উত্তর ‘ওরাও তো একই কথা বলে মোটিভেশন নিতে পারে!’
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সঙ্গে পরিসংখ্যান অবশ্য মন্দ নয় বাংলাদেশের। এখন অবধি দুটি ম্যাচ খেলেছে। এর একটির কথা স্পষ্টভাবেই মনে থাকার কথা যেকোনো বাংলাদেশি ক্রিকেট সমর্থকের। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে তাদের বিপক্ষে ওই জয়ই পথ খুলে দিয়েছিল দেশের ক্রিকেটের। পরেরটি গত বিশ্বকাপে, ওখানে অবশ্য জুটেছিল বড় হার।
সবমিলিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৮ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় পাঁচটি। তবে বাংলাদেশের জন্য চোখ রাঙানি অন্য জায়গায়। ইডেন গার্ডেন্সে ছয় ওয়ানডে খেলে পাকিস্তানের হার কেবল একটিতে। সেটিও ১৯৮৭ সালে তারা যখন প্রথমবার খেলেছিল এখানে।
এরপর ভারতকে তিনবার ও শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একবার করে হারিয়েছে তারা। এই ভেন্যুতেই পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে হবে বাংলাদেশকে, পরিসংখ্যানটা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল সাকিবকে। তিনি বলেছেন, ‘পরিচিতির দিক থেকে কি না সেটা বলা মুশকিল কারণ আমরা কখনো ভারতে ওয়ানডে সিরিজ খেলিনি। ’
‘যারা আইপিএল খেলেছে, তাদের হয়তো একটু ধারণা আছে। তবে এসব কোন ম্যাটার করবে না। তাদের কোচ যদি বলে থাকেন যে এখানে দু দলই শেষ ১০-১৫ বছর খুব বেশি ম্যাচ খেলেনি, সেদিক থেকে এটা খুব পরিচিত আমাদের নয়, যদিও খুব কাছাকাছি দেশ। ’
বাংলাদেশ ম্যাচের আগে অবশ্য বিপর্যস্ত পাকিস্তানের ক্রিকেট। দেশটির বোর্ডের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পর এ নিয়ে ধোঁয়াশা বেড়েছে আরও। পদত্যাগ করেছেন প্রধান নির্বাচক ইনজামাম উল হকও। তবুও এখনও স্বপ্ন টিকে আছে তাদের।
বাংলাদেশ ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষের জন্য সম্মান রাখার কথাই জানিয়ে গেছেন দলটির কোচ গ্র্যান্ড ব্র্যাডবার্ন। মাঠের ক্রিকেটে নিশ্চয়ই ছাড় দেবেন না তারা। তাদের স্বপ্নটা টিকিয়ে রাখার ইচ্ছে, বাংলাদেশের অবশ্য ভিন্ন লড়াই।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।