দেশের ঘরোয়া ফুটবলে দীর্ঘদিনের পুরনো নাম পিডব্লিউডি। স্বাধীনতার পর থেকেই ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই সরকারি সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তরের ক্রীড়া দল অবশেষে ফিরছে শীর্ষ আসরে। গতকাল বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে লিটল ফ্রেন্ডস সোসাইটিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে প্রায় তিন দশক পর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে জায়গা নিশ্চিত করেছে পিডব্লিউডি স্পোর্টস ক্লাব।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ। এখান থেকে শীর্ষ দুটি দল সুযোগ পায় প্রিমিয়ার লিগে খেলার। চলতি মৌসুমে ১৫ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে পিডব্লিউডি আছে শীর্ষে। সমান ম্যাচে আরামবাগের পয়েন্ট ৩৩ ও সিটি ক্লাবের ২৭। লিগে পিডব্লিউডির এখনো তিন ম্যাচ বাকি থাকলেও, তৃতীয় স্থানে থাকা সিটি ক্লাবের সঙ্গে ব্যবধান এতটাই বেশি যে বাকি সব ম্যাচে হারলেও দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত। ফলে নিশ্চিত হয়েছে তাদের প্রিমিয়ার লিগে জায়গা।
তবে প্রিমিয়ার লিগে ওঠার মতো গৌরব অর্জন করেও বাফুফের পক্ষ থেকে নেই কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। গত মৌসুমে বসুন্ধরা কিংস শিরোপা নিশ্চিত করার পরপরই বাফুফের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছিল অভিনন্দন বার্তা। অথচ এবার চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের পয়েন্ট তালিকাও নিয়মিতভাবে দেওয়া হচ্ছে না। সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগেই সংগ্রহ করতে হচ্ছে তথ্য। এমনকি লিগ কমিটি যে ফেসবুক পেজটি চালু করেছিল, তা-ও নেই ধারাবাহিকতায়। ফলে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ নিয়ে চলছে ব্যাপক অনিয়ম।
তবে এসবের বাইরে নিজেদের কাজ ঠিক রেখেছে পিডব্লিউডি। ক্লাবটির ফুটবল দলের ম্যানেজার ও সংস্থার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ইফতেখার সাদ জানান, ‘গতবার দীর্ঘ সময় লিগের শীর্ষে থেকেও প্রিমিয়ারে উঠতে পারিনি। এবার যদিও চ্যাম্পিয়ন হওয়া এখনও নিশ্চিত নয়, তবে প্রিমিয়ার লিগে খেলা নিশ্চিত হয়েছে। আমাদের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমের পর আমরা শীর্ষ লিগে আর খেলিনি। সেই হিসেবে দীর্ঘ ৩০ বছর পর আবার প্রিমিয়ারে ফিরছে পিডব্লিউডি।’
স্বাধীনতার পর ঢাকার প্রথম বিভাগ লিগই ছিল দেশের শীর্ষ ফুটবল প্রতিযোগিতা। নব্বইয়ের দশকে চালু হয় প্রিমিয়ার লিগ, তখন প্রথম বিভাগ হয় দ্বিতীয় স্তর। পিডব্লিউডি নিয়মিত খেলেছে প্রথম বিভাগে। এরপর ২০০৭ সালে প্রিমিয়ার লিগ পেশাদার রূপ পায়। আর ২০১১-১২ মৌসুমে চালু হয় চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ, যা দ্বিতীয় স্তরে পরিণত হয়। তখন প্রথম বিভাগ নেমে আসে তৃতীয় স্তরে। কয়েক মৌসুম আগে প্রথম বিভাগ থেকে উঠে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলে এবার শীর্ষ আসরে জায়গা করে নিল পিডব্লিউডি।
তবে প্রিমিয়ারে খেলাটা শুধু মাঠের পারফরম্যান্সে নির্ধারিত হয় না, দরকার আর্থিক সামর্থ্যও। কারণ দল গঠন, ক্যাম্প পরিচালনা, মৌসুমজুড়ে খেলার ব্যয় মেটাতে লাগে কোটি টাকার বেশি। অনেক ক্লাব সেই ব্যয় সামাল দিতে না পেরে শীর্ষ লিগে না খেলেই ফিরে যায়। কিন্তু পিডব্লিউডির লক্ষ্য এবার পরিষ্কার।
ইফতেখার সাদ বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের সৃষ্টি ১৯৫৪ সালে। প্রিমিয়ারে খেলার জন্য প্রয়োজনীয় নিবন্ধনসহ আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম আজ থেকেই শুরু করেছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে দল গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
গণপূর্ত অধিদপ্তরের (পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট) অধীনস্থ একটি ক্রীড়া সংগঠন পিডব্লিউডি স্পোর্টস ক্লাব। নির্বাহী কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয় তাদের ক্রীড়া কার্যক্রম। শুধু ফুটবল নয়, দেশের আরেক শীর্ষ খেলা হকিতেও প্রথম বিভাগে অংশ নেয় দলটি।
তিন দশক পর দেশের শীর্ষ ফুটবল লিগে পিডব্লিউডির প্রত্যাবর্তন নিঃসন্দেহে ঘরোয়া ফুটবলের জন্যই একটি বড় পাওয়া। এখন দেখার পালা, মাঠে এবং মাঠের বাইরে কতটা ভালোভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির ফুটবল দল।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।