ওয়ানডে বিশ^কাপে সেমিফাইনালে এগিয়ে যাবার লক্ষে আগামীকাল নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে মুখোমুখি হবে তাসমান সাগড় পাড়ের দুই দেশ, চিরপ্রতিদ্বন্দি নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। বিশ^কাপে প্রথম দল হিসেবে শততম ম্যাচ খেলতে নামবে অসিরা।
৫ ম্যাচ শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ৮ পয়েন্ট, অস্ট্রেলিয়ার আছে ৬ পয়েন্ট। সর্বশেষ তিন ম্যাচ জিতে দারুণ ছন্দে আছে অসিরা। আগের ম্যাচে প্রথম এবারের আসরে হারের স্বাদ পাওয়া নিউজিল্যান্ড জয়ের ধারায় ফিরতে মরিয়া । ধর্মশালাতে বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায় শুরু হবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড লড়াই।
আগামীকাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমে বিশ^কাপে নিজেদের শততম ম্যাচ খেলার অনন্য এক রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ^কাপে এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ৯৯ ম্যাচের মধ্যে ৭২টি জয় পেয়েছে, ২৫ ম্যাচে পরাজিত হয়েছে। এছাড়া তাদের ১টি করে টাই ও পরিত্যক্ত হয়েছে।
বিশ^কাপে নিজেদের প্রথম চার ম্যাচেই জয় পেয়েছে গত আসরের রার্নাস-আপ নিউজিল্যান্ড। গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৯ উইকেটে, নেদারল্যান্ডসকে ৯৯ রানে, বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে এবং আফগানিস্তানকে ১৪৯ রানের বড় ব্যবধানে হারায় নিউজিল্যান্ড। টানা চার জয় নিয়ে পঞ্চম ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হয় কিউইরা। ঐ সময় টানা চার জয় ছিলো ভারতেরও। টুর্নামেন্টে এই দু’দলই শুধুমাত্র অপরাজিত ছিলো। রান রেটে এগিয়ে টেবিলের শীর্ষে ছিলো নিউজিল্যান্ড।
তবে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে ভারতের কাছে ৪ উইকেটে হেরে টুর্নামেন্টে প্রথম হারের স্বাদ পায় নিউজিল্যান্ড। সেই সাথে ভারতের কাছে শীর্ষস্থান হারায় কিউইরা। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ১৪৯ রানের বিশাল জয়ে তৃতীয়স্থানে নেমে যায় নিউজিল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকার সমান ৮ পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে পিছিয়ে পড়ে কিউইরা। তৃতীয়স্থানে নেমে গেলেও সেমির পথে বেশ ভালো অবস্থায় আছে নিউজিল্যান্ড।
তারপরও পুনরায় জয়ের ধারায় ফিরতে মরিয়া নিউজিল্যান্ড। এমনটাই জানালেন দলের কোচ গ্যারি স্টিড, ‘প্রথম চার ম্যাচ দারুন কেটেছে আমাদের। ভারতের বিপক্ষে হারলেও, দল ভালো খেলেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আবারও জয়ের ধারায় ফিরতে চাই আমরা।’
অস্ট্রেলিয়াকে বিপক্ষে সতর্ক স্টিড বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া দারুনভাবে ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর হ্যাট্টিক জয় তাদের সঙ্গী। জয়ের ধারায় থাকতে এক বিন্দুও ছাড় দিবে না তারা। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, পাল্লা দিয়ে লড়াই করতে হবে। জয়ের জন্য মাঠে নিজেদের সেরাটা উজার করে দিতে হবে ছেলেদের।’
ব্যাট হাতে দারুন ফর্মে রয়েছে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা। ৫টি করে ম্যাচ খেলে রাচিন রবীন্দ্র ২৯০, ড্যারিল মিচেল ২৬৮ ও ডেভন কনওয়ে ২৪৯ রান করেছেন। বোলিংয়ে এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে শীর্ষ পাঁচ বোলারের মধ্যে আছেন কিউই স্পিনার মিচেল স্যান্টনার ও পেসার ম্যাট হেনরি। ১২ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিকারী স্যান্টনার। ১০ উইকেট নিয়ে পঞ্চমস্থানে আছেন হেনরি।
বিশ^কাপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে যাত্রা শুরু করেছিলো অস্ট্রেলিয়া। ভারতের কাছে ৬ উইকেটে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৩৪ রানের লজ্জার হারের লজ্জা পায় অসিরা। ১৯৯২ সালের পর প্রথমবার বিশ^কাপ মঞ্চে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে যায় অস্ট্রেলিয়া।
প্রথম দুই ম্যাচ হেরেও আত্মবিশ^াস হারায়নি অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় ম্যাচেই জ¦লে উঠে শ্রীলংকাকে ৫ উইকেটে হারায় অসিরা। চতুর্থ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬২ রানের দারুন জয়ে ছন্দে ফিরে প্যাট কামিন্সের দল। সর্বশেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নিজেদের সেরা রুপ ফুটিয়ে তুলে অস্ট্রেলিয়া।
সর্বশেষ নেদারল্যান্ডসকে ৩০৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে বিশ^কাপ ইতিহাসে রেকর্ড জয়ের নজির গড়ে অস্ট্রেলিয়া। ডাচদের বিপক্ষে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ৩৯৯ রানের পাহাড় গড়ে অসিরা। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির ইনিংসে ১০৪ রান করেন ওয়ার্নার। বিশ^কাপ ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির ইনিংসটি ৯টি চার ও ৮টি ছক্কায় সাজান ৪৪ বলে ১০৬ রান করা ম্যাক্সওয়েল। জবাবে ৯০ রানে গুটিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। এই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে উঠে আসে অসিরা।
দুই সেঞ্চুরিতে ৩৩২ রান নিয়ে এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন ওয়ার্নার। বোলিংয়ে সেরা ফর্মে রয়েছেন স্পিনার এডাম জাম্পা। ৫ ইনিংসে ১৩ উইকেট নিয়ে এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ শিকারী জাম্পা। টানা তিন ম্যাচে ৪টি করে উইকেট নিয়েছেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও নিজেদের সেরাটা দিতে বদ্ধপরিকর জাম্পা। তিনি বলেন, ‘নিজের বোলিং পারফরমেন্স নিয়ে আমি খুশি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও নিজের সেরাটা অব্যাহত রাখতে চাই। তবে কাজটি কঠিন হবে। কারন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা ফর্মে রয়েছে। এজন্য আমাকে আরো ভাল বোলিং করতে হবে।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের জন্য আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার কথা জানালেন জাম্পা, ‘টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দল নিউজিল্যান্ড। প্রথম চার ম্যাচ নিজেদের প্রমান করেছে তারা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও আগ্রাসী খেলতে চাই আমরা। যেমনটা শেষ তিন ম্যাচে খেলেছি ।’
এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ১৪১বার মুখোমুখি হয়েছে নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া। এরমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৯৫টিতে, নিউজিল্যান্ডের জয় ৩৯টিতে এবং ৭টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছে নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া। নিজ মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতেছে অসিরা।
এখন পর্যন্ত বিশ^কাপে ১১বার মুখোমুখি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। এরমধ্যে জয়ের পাল্লা ভারী অসিদের। ৮বার জয় পেয়েছে তারা। ৩বার জিতেছে নিউজিল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়া দল : প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), সিন অ্যাবট, মার্নাস লাবুশেন, অ্যালেক্স ক্যারি, ক্যামেরন গ্রিন, জশ হ্যাজলউড, ট্রাভিস হেড, জশ ইংলিস, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, স্টিভেন স্মিথ, মিচেল স্টার্ক, মার্কাস স্টয়নিস, ডেভিড ওয়ার্নার ও এডাম জাম্পা।
নিউজিল্যান্ড দল : টম লাথাম (অধিনায়ক), ট্রেন্ট বোল্ট, মার্ক চাপম্যান, ডেভন কনওয়ে, লুকি ফার্গুসন, ম্যাট হেনরি, ড্যারিল মিচেল, জিমি নিশাম, গ্লেন ফিলিপস, কেন উইলিয়ামসন, রাচিন রবীন্দ্র, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি, টিম সাউদি, উইল ইয়ং।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।