লক্ষ্য ৩৮৯। কিন্তু শেষ বল পর্যন্ত হাল ছাড়লো না নিউজিল্যান্ড। দুর্দান্ত রান তাড়ায় প্রায় তীরে পৌঁছে গিয়েছিল কিউইরা। তীরে এসে ডুবলো তরী। শেষ বলে এসে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৫ রানে হারলো নিউজিল্যান্ড।
৭৭১ রানের রুদ্ধশ্বাস এক লড়াইয়ে শেষ হাসি অস্ট্রেলিয়ার। এই জয়ে সেমির লড়াইয়ে নিজেদের ভালোভাবেই টিকিয়ে রেখেছে প্রাট কামিন্সের দল।
শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ১৯ রান। মারকুটে হাফসেঞ্চুরি তোলা জিমি নিশাম ক্রিজে থাকায় ভালো সম্ভাবনা ছিল কিউইদের। ওই ওভারের দ্বিতীয় বলে আবার ওয়াইডসহ পাঁচ রান দিয়ে বসেন মিচেল স্টার্ক।
শেষ ৩ বলে দরকার ছিল ৯ রান। জিমি নিশাম তৃতীয় আর চতুর্থ বলে দুই করে রান নিলে ২ বলে নিউজিল্যান্ডের লাগে ৭। পঞ্চম বলে নিশাম দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হন ৩৯ বলে ৫৮ করে। শেষ বলে দরকার লাগে ছক্কা। ফার্গুসন আর রান নিতে পারেননি। রুদ্ধশ্বাস এক জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।
বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে থাকেন দুই কিউই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও উইল ইয়ং। ওপেনিং জুটিতে ৬১ রান করেন তারা।
১৭ বলে ২৮ রান করে আউট হয়ে যান কনওয়ে। এরপর ১১ রান তুলতে গিয়ে দ্বিতীয় উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। এবার পেসার হ্যাজলউডের বলে স্টার্কের হাতে ক্যাচ হয়ে ফেরেন ইয়ং (৩৭ বলে ৩২)। তবু দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যায় কিউইদের স্কোরবোর্ড।
এরপর দলের হাল ধরেন ডেরেইল মিচেল ও রাচিন রাবিন্দ্রা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে এই দুই ব্যাটার সংগ্রহ করেন ৮৬ বলে ৯৬ রান। মিচেল তুলে নেন দুর্দান্ত ফিফটি। তবে ফিফটি করার পর ইনিংস বড় করতে পারেননি ডানহাতি এই ব্যাটার। ৫১ বলে ৫৪ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি। এডাম জাম্পার বলে স্টার্কের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।
অধিনায়ক টম লাথামও ভালোই শুরু করেছিলেন। কিন্তু উইকেটে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। জাম্পার বলে হ্যাজলউডের হাতে ধরা পড়েন তিনি। আউট হওয়ার আগে ২২ বলে ২১ রান করেন তিনি।
চার উইকেট হারালেও নিউজিল্যান্ডের রান তোলার গতিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে দেননি। রান তাড়ায় দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন রাবিন্দ্রা। তিনি ৮৯ বলে ৯ চার আর ৫ ছক্কায় খেলেন ১১৬ রানের ইনিংস। কিন্তু দল না জেতায় বিফলে গেছে রাচিনের এই ইনিংসটি।
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জাম্পা ৩টি, জস হ্যাজেলউড আর প্যাট কামিন্স নেন দুটি করে উইকেট।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ঝড় তুলেছিলো অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা। শেষে ঝড় তুললেন নিউজিল্যান্ডের বোলাররা। ৬ উইকেটে ৩৮৭ রান থেকে ৩৮৮ রানেই অলআউট হয়ে গেলো অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা। মাত্র ১ রানের ব্যবধানে পড়লো ৪ উইকেট।
ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন মাঠে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ওয়ার্নার এবং ট্রাভিস হেডের ব্যাটে রীতিমত টর্নেডো বইয়ে দিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কিউই বোলারদের আগুনে বোলিংয়ের সামনে ৪৯.২ ওভারে ৩৮৮ রানে অলআউট হয়েছে প্যাট কামিন্সের দল।
টস জিতে বোলিংয়ে কিছুটা সুবিধা আদায় করা যাবে, এ চিন্তা থেকে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো নিউজিল্যান্ড। ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ঝড় তোলেন দুই অসি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার এবং ট্রাভিস হেড। দু’জন মিলে ১৭৫ রানের বিশাল জুটি গড়েন ১৯.১ ওভারে।
৬৫ বলে ৮১ রান করে আউট হন ডেভিড ওয়ার্নার। ট্রাভিস হেড শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি পূরণ করেন ৬০ বলে এবং ৬৭ বলে ১০৯ রান করে আউট হন তিনি। ১০টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৭টি ছক্কার মার মারেন তিনি।
ইনজুরির পরও কেন তাকে দলে রাখা হয়েছিলো, প্রমাণ করে দিলেন ওপেনার ট্রাভিস হেড। হাতের ইনজুরির কারণে অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গে প্রথমে ভারতেও আসেননি তিনি। নিজের দেশে থেকেই ইনজুরি সারানোর ব্যবস্থা করেন। অবশেষে বিশ্বকাপে এসে দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে প্রথম সুযোগেই সেঞ্চুরি তুলে নিলেন তিনি।
দুই অসি ওপেনারের ঝড় দেখে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়াটা ভুল হয়ে গেলো কি না, তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম?
তবে তাকে স্বস্তি দেন শেষের বোলাররা। বিশেষ করে ম্যাট হেনরি এবং ট্রেন্ট বোল্টের আগুতে বোলিংয়ে শেষের দিকে দ্রুত উইকেট হারায় তারা।
ট্রাভিস হেড এবং ওয়ার্নারের জুটিই অস্ট্রেলিয়াকে বড় ইনিংস গড়তে সাহায্য করে। পরের ব্যাটাররা খুব বড় কোনো স্কোর গড়তে পারেননি। মিচেল মার্শ ৫১ বলে করেন ৩৬ রান। স্টিভ স্মিথ ১৭ বলে ১৮ রান সংগ্রহ করেন। মার্নাস লাবুশেন ১৮ রান করেন। ২৪ বলে ৪১ রান করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ২৮ বলে ৩৮ রান করেন জস ইংলিস। ১৪ বলে ৩৭ রান করেন প্যাট কামিন্স।
৩টি করে উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট এবং গ্লেন ফিলিপস। ২ উইকেট নেন মিচেল সান্তনার। ১টি করে উইকেট নেন ম্যাট হেনরি এবং জিমি নিশাম।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।