মাউন্ট মুঙ্গানুইতে পারলে ঘরের মাঠে কেন নয়?
হোক তা ভিন্ন ফরম্যাট, টি-টোয়েন্টিতে। তাতে কি? ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের প্রতিশোধটা কড়ায়-গণ্ডায় উসুল করে নিচ্ছে ভারত। ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে অসিদের নাস্তানাবুদ করে ২-০তে এগিয়ে গেছে ভারতীয়রা।
ভারতের মতো অন্য ফরম্যাটে ভালো খেলে বিশ্বকাপের ব্যর্থতা মোচনের সুযোগ আছে বাংলাদেশের সামনেও। রাত পোহালেই পূণ্যভূমি সিলেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ ম্যাচ সিরিজেল প্রথম টেস্ট খেলতে নামবে টিম বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে নয়টায়।
বিশ্বকাপের পুরো আসরে দুর্দান্ত খেলে ফাইনালে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছেই কেবল হেরেছিল রোহিত শর্মার দল। কাজেই বাংলাদেশের ব্যাপারটা ঠিক ভারতের মতো নয়। সাকিব আল হাসানের দল আর বিশেষ কোনো দলের কাছে হেরে বাদ পড়েনি বা নির্দিষ্ট কোনো ম্যাচে হেরে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় নীল হয়নি গোটা বাংলাদেশ।
পুরো আসরে ব্যর্থতার ঘানি টেনেছে সাকিব বাহিনী। অভিজ্ঞ অথচ শেষ মুহূর্তে দলে জায়গা পাওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছাড়া অধিনায়ক সাকিব, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, তানজিদ তামিম, তাওহিদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম আর নাসুম আহমেদরা ছিলেন একদম সুপার ফ্লপ।
৫০ ওভারের ফরম্যাটে না পারার ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে ৫ দিনের টেস্টে কিউইদের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল?
নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব, এক নম্বর ওপেনার তামিম ইকবাল, মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের অন্যতম নির্ভরতা আর অন্যতম স্ট্রাইকবোলার এবাদত নেই এই টেস্ট সিরিজে। তাদের বদলে এক ঝাঁক তরুণই ভরসা শান্ত বাহিনীর।
এখন প্রশ্ন হলো, অন্য ফরম্যাটে হলেও বিশ্বকাপের ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার মিশনে এই এক ঝাঁক তরুণ নির্ভরযোগ্য ও সফল পারফরমারদের ছাড়া কীভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারবে শান্তর দল?
ইতিহাস কিন্তু আশা জাগাচ্ছে। পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, ঠিক ২৩ মাস (২০২২ সালের ১ জানুয়ারি) আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে মাউন্ট মুঙ্গানুই প্রথম টেস্টে টম ল্যাথামের দলকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিল মুমিনুল হকের দল। সবচেয়ে বড় খবর হলো, সে ম্যাচেও ছিলেন না দুই প্রধান তারকা ও দলের মূল চালিকাশক্তি তামিম আর সাকিব।
তবে লিটন দাস আর পেসার এবাদত ঠিকই ছিলেন। অধিনায়ক মুমিনুল হকের (৮৮) সাথে ৬ নম্বরে নেমে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে জয়ের ভিত গড়তে বড় ভূমিকা রাখেন লিটন (৮৬)।
ওই ম্যাচে ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় (৭৮), ওয়ানডাউনে নাজমুল হোসেন শান্ত (৬৪), আর নিচের দিকে মেহেদী হাসান মিরাজের ( ৪৭) ব্যাটেও ছিল রান।
বোলিং ব্যাকআপটাও হয়েছিল দারুণ। দুই পেসার তাসকিন (৩ উইকেট) এবং শরিফুলকে (৩ উইকেট) সঙ্গে নিয়ে বল হাতে আগুন ঝরিয়ে (দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৪৬) ম্যাচ জেতানো বোলিং করেছিলেন পেসার এবাদত হোসেন।
মূলত দ্বিতীয় ইনিংসে এবাদতের বোলিং তোপের মুখে ঘরের মাঠে টাইগারদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেননি ল্যাথাম, উইল ইয়াং, ডেভিড কনওয়ে, রস টেলর, কেন উইলিয়ামসন, হেনরি নিকোলস, ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি ও রাচিন রাবিন্দ্রাদের নিয়ে গড়া শক্তিশালী কিউই বাহিনী।
অবশ্য ক্রাইস্টচার্চে পরের টেস্টে আর দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ইনিংস ও ১১৭ রানে জিতে সিরিজে সমতা ফিরিয়ে এনেছিল টম ল্যাথামের দল।
তারপর আর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে টেস্টে দেখা হয়নি বাংলাদেশের। প্রায় ২ বছর পর আবার মুখোমুখি টাইগার ও ব্লাক-ক্যাপসরা। এবার কী হবে?
আরও একটি আশা জাগানো তথ্য আছে। ঘরের মাঠে ১০ বছর পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের অক্টোবরে দেশের মাটিতে শেষবার কিউইদের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মাঠে নেমেছিল টাইগাররা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম আর ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে হওয়া দুটি টেস্টই ড্র হয়েছিল। ভাববেন না, বৃষ্টির সহায়তায়। নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্যের ওপর ভর করে ব্যাট ও বোলিংয়ে দৃঢ়তায় সেই সিরিজের দুটি টেস্টই ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করেছিল মুশফিকুর রহিমের বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন মুমিনুল হক ( ৩৭৭ মিনিটে ২৭৪ বলে ২৭ বাউন্ডারিতে ১৮১ রান)।
সাদা বলে জাতীয় দলের সাথে না থাকা এই বাঁহাতি ব্যাটার মুমিনুল কি এবার সেই সোনালি দিন ফিরে পাবেন? এবারও তামিম-সাকিব নেই। তবে সঙ্গে আরও নেই লিটন-এবাদত। এ দুই টাইগারের অভাব মেটাবেন কারা?
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।