দারুনভাবে লড়াইয়ে ফিরে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদকে ৪-২ গোলে পরাজিত করে দুই লেগ মিরিয়ে ৫-৪ ব্যবধানে এগিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। ২০১৩ সালের পর এই প্রথম ইউরোপীয়ান সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের শেষ চারে উঠেছে জার্মান জায়ান্টরা।
স্পেনে প্রথম লেগের ম্যাচে ২-১ গোলে পরাজিত হয়েছিল ডর্টমুন্ড। কাল ঘরের মাঠ সিগন্যাল ইডুনা পার্কে বিরতির আগে জুলিয়ান ব্র্যান্ডেট ও ইয়ান মাস্তেনের গোলে ২-০ ব্যবধান গড়ে স্বাগতিকরা। সফরকারী কোচ দিয়েগো সিমিওনে ম্যাচে ফিরে আসার তাগিদে বিরতির পর তিনটি পরিবর্তন করেও সফল হতে পারেননি। এর মধ্যে বদলী হিসেবে সবচেয়ে সফল ছিলেন এ্যাঞ্জেল কোরেয়া। ম্যাটস হামেলসের আত্মঘাতি গোলে সমতায় ফিরে এ্যাথলেটিকো। এরপর আর্জেন্টাইন কোরেয়ার গোলে এ্যাথলেটিকো আবারো এগিয়ে যায়। কিন্তু ৭১ থেকে ৭৪ মিনিট অর্থাৎ তিন মিনিটের মধ্যে নিকলাস ফুয়েলক্রুগ ও মার্সেল সাবিটাইজারের দ্রুত দুই গোলে বুন্দেসলিগার ক্লাবটির জয় নিশ্চিত হয়।
ম্যাচ শেষে গোলদাতা ফুয়েলক্রুগ বলেছেন, ‘এটা সত্যিই অভাবনীয় এক ম্যাচ ছিল। আমি মোটেই বাড়িয়ে বলছি না, কিন্তু এভাবেও ফিরে আসা যায়, আজ আমরা তারই প্রমান দিলাম। পুরো স্টেডিয়াম আজ আমাদের দারুনভাবে সমর্থন দিয়েছে।’
সাবেক বিজয়ী ডর্টমুন্ড বুন্দেসলিগা টেবিলের পঞ্চম স্থানে রয়েছে। আগামী বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জনে এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী ১ জুন ওয়েম্বলিতে ফাইনাল নিশ্চিতের পথে শেষ চারে তাদের প্রতিপক্ষ পিএসজি।
ব্র্যান্ডেট বলেছেন, ‘আমরা তাদেরকে সুযোগ দিয়েছি এবং সেগুলো কাজে লাগিয়ে বিরতির পর ১৫ মিনিটে তারা ম্যাচে ফিরে এসেছে। এই জায়গাগুলোতে আমাদের অবশ্যই উন্নতি করতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা দারুনভাবে প্রতিরোধ করেছি।’
সাত বছরে এই প্রথমবারের মত এ্যাথলেটিকো শেষ চারে খেলার লক্ষ্যে মাঠে নেমেছিল। কিন্তু কেয়ার্টার ফাইনালে পাঁচ মৌসুমে তৃতীয়বারের মত তাদের যাত্রা থেমে গেল।
এ্যাথলেটিকো অধিনায়ক কোকে বলেছেন, ‘ম্যাচটা কঠিন ছিল। তাদের গোলগুলো আমাদের দারুনভাবে হতাশ করেছে। আসলে তারা দ্রুত গোলগুলো করাতে আমরা খেই হারিয়ে ফেলি। এই ম্যাচটা আমাদের জেতা উচিৎ ছিল। এটাই ফুটবল, এখানে সবকিছুই সম্ভব।’
তিন মিনিটের মধ্যে স্বাগতিকরা ম্যাচে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু সাবিটাইজার সহজ সেই সুযোগটি হাতছাড়া করেন। পরের মিনিটেই এ্যাথলেটিকো বড় সুযোগ পেয়েছিল। গোলরক্ষক গ্রেগর কোবেলকে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন আলভারো মোরাতা। এই আক্ষেপ হয়তো কখনই ভুলতে পারবেন না মোরাতা। ৮০ হাজার সমর্থকের জোড়ালো সমর্থনকে উপেক্ষা করে গত সপ্তাহে স্পেনে ডর্টমুন্ড নিজেদের এগিয়ে নেবার চেষ্টা করেছিল। কাল তারই বিপরীতে ডর্টমুন্ড হয়ে উঠেছিল অপ্রতিরোধ্য। করিম আদেইয়েমির শট সরাসির এ্যাথলেটিকো গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাকের হাতে ধরা পড়ে। ৩৪ মিনিটে অবশ্য আর শেষরক্ষা হয়নি। হামেলসের চিপ থেকে ব্যান্ডেটের গোলে ডর্টমুন্ড সমতায় ফিরে। পাঁচ মিনিট পর মাস্তেনের গোলে এগিয়ে যায় ডর্টমুন্ড।
চতুর্থবারের মত সিমিওনের অধীনে এ্যাথলেটিকো সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিল। কিন্তু এবার আর সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। বিরতির পর দলে পরিবর্তন করেও সফল হতে পারেননি সিমিওনে। এমনকি নিষ্ক্রিয় মোরাতার পরিবর্তে কোরেয়াকে মাঠে নামান সিমিওনে। হঠাৎ করেই এ্যাথলেটিকো ম্যাচে ফিরে আসার ইঙ্গিত দেয়। কর্ণার থেকে মারিও হারমোসোর হেড ক্লিয়ার করতে গিয়ে হামেলস নিজের জালে বল জড়ালে আত্মঘাতি গোলের লজ্জায় পড়ে ডর্টমুন্ড। পরের মিনিটেই কোরেয়ার শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৬৪ মিনিটে অবশ্য আর কোন ভুল করেননি বিশ^কাপ জয়ী এই তারকা। এই গোলে আরো নড়েচড়ে বসে ডর্টমুন্ড। তিন মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে এডিন টারজির দল স্বাগতিক সমর্থকদের হতাশ করেনি। সাবিটাইজারের ক্রস থেক ফুয়েলক্রুগের হেডের পর অস্ট্রিয়ান মিডফিল্ডার নিজেই এক গোল করেছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।