এক সময় বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে দ্বৈরথ জমতো বেশ। তবে সময়ের পরিক্রমায় দুই দলের লড়াই উত্তেজনা হারিয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতির গ্রাফ বেশ ঊর্ধ্বগতি। অন্যদিকে ক্রিকেট রাজনীতি আর মাঠের পারফরম্যান্সের বেহাল দশায় সোনালি দিন পেছনে ফেলে এসেছে জিম্বাবুয়ে। তবুও পরিসংখানে সমানে সমান দুই দল। ১৭ টেস্টে সমান ৭টি করে জয়। এবার এগিয়ে যাওয়ার মিশনে মাঠে নামবে জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ।
আইসিসির স্বীকৃত টেস্ট খেলুড়ে দেশ আছে সর্বমোট ১২টি। তবে আফগানিস্তান আর আয়ারল্যান্ডের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ছাড়পত্র পায়নি জিম্বাবুয়ে। তারা তো বটেই, তাদের সঙ্গে যারা এই কেতাবি সংস্করণের লড়াইয়ে নামে তারাও বঞ্চিত হয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তোলা থেকে। তেমনই এক ম্যাচের সিরিজে বুধবার জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায়।
করোনাভাইরাসের পর ক্রিকেটীয় প্রত্যাবর্তনে অবশ্য খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি টাইগাররা। মাঠে ফিরে এখন পর্যন্ত সাদা পোশাকে ৪টি ম্যাচ খেলেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। যেখানে অধরা রয়ে গেছে জয়। শক্তিমত্তার বিচারে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ দল। ধারণা করা হচ্ছে এই ম্যাচ দিয়েই সেই আক্ষেপ দূর হবে অধিনায়ক মুমিনুল হকের দলের। যদিও এই ম্যাচে অনিশ্চিত দলের নিয়মিত পারফরমার তামিম ইকবাল। তার পরিবর্তে ওপেনিংয়ে সুযোগ মিলতে পারে সাদমান ইসলামের।
জিম্বাবুয়ে শিবিরেও স্বস্তি নেই। দলের আস্থার প্রতীক নিয়মিত অধিনায়ক শন উইলিয়ামস খেলতে পারবেন না আইসোলেশনে। যদিও তিনি আক্রান্ত হননি, পরিবারের সদস্য করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সতর্কতা মেনে আইসোলেশনে গেছেন উইলিয়ামস। একই কারণে খেলবেন না ক্রেইগ আরভিনও। তবে পরিসংখ্যাসন স্বস্তি দিচ্ছে না সফরকারীদের। জিম্বাবুয়ে গিয়ে এ যাবৎ ৭টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ দল। সেখান জয় মাত্র একটি। অমীমাংসিত এক ম্যাচ। বাকি পাঁচটিই পরাজয়ের স্বাদ নিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে টাইগারদের।
স্বস্তি বলতে সাকিব আল হাসানের ফেরা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ছিলেন না টাইগার অলরাউন্ডার। এবার সাদা পোশাকে ফিরছেন তিনি। লাল বলের ক্রিকেটে পারফরম্যান্স খুব বেশি সুখকর না হলেও জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে এই ম্যাচ হারলে যে সমর্থকদের কটু কথা শুনতে হবে সেটি ভালোভাবে জানেন বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুমিনল হক।
ম্যাচ শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে সেটি মনে করিয়ে দিলেন তিনি। যদিও পরাজয়ের শঙ্কা ঝেড়ে ফেলে আশার বাণী শোনালেন মুমিনুল, ‘শুধু জিম্বাবুয়ে না, যেকোন দলের সঙ্গেই যখন বিদেশের মাটিতে খেলব, তখন ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন দিকটাই ভালো করতে হয়, ফোকাস রাখতে হয়। সেই সাথে টিম ওয়ার্কটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এদিকটায় ভালো করলে আশা করি টেস্ট ম্যাচটা জিততে পারবো।’
মুমিনুলের আশার পালে হাওয়া দিচ্ছে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স, ‘এখানে আসার পর এক সপ্তাহ ধরে লাল বলে অনুশীলন করছি। প্রস্তুতি ম্যাচটাতে সবাই খুব ভালো করেছে। তাই যে ঘাটতি ছিল সেটা এখন নেই, আশা করি টেস্ট ম্যাচটা ভালো কাটবে। আর শুধু জিম্বাবুয়েতে না, যেকোন দেশেই অ্যাওয়ে ম্যাচ চ্যালেঞ্জিং হয়। তবে প্রস্তুতির দিক থেকে আমি আশাবাদি যে পাঁচদিন ভালো ক্রিকেট খেললে অবশ্যই ফল আমাদের দিকে আসবে।’
উইলিয়ামসের অনুপস্থিতিতে জিম্বাবুয়ে দলের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ব্রেন্ডন টেলর। দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য না থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বীতার আভাস দিয়ে রাখলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। সংবাদ সম্মেলনে টেলর জানালেন, ‘এই সিরিজটি বেশ প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে, বিশেষ করে আমাদের হোম কন্ডিশন বলে। আমরা আমাদের কন্ডিশন বেশ ভালোভাবে বুঝি। আশা করি আমরা আমাদের কন্ডিশনের সুবিধা নিতে পারবো। আমাদের একটি তরুণ প্রাণবন্ত দল রয়েছে আর তা নিয়েই এগিয়ে যেতে মুখিয়ে আছি।’
এই ম্যাচে দারুণ এক মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। টেস্ট ফরম্যাটে বল হাতে ২১০ উইকেটের মালিক তিনি। ব্যাটিংয়ে করেছেন ৩ হাজার ৯৩০ রান। আর ৭০ রান করলেই চার হাজার রানের কোটা পূরণ করবেন সাকিব। এতে টেস্টের এলিট ক্লাবে নাম তুলবেন। ৪০০০ রান ও ২০০ উইকেট নেওয়ার মালিক বনে যাবেন তিনি।