ব্রাজিলের সবচেয়ে বিখ্যাত ফুটবল স্টেডিয়াম বললেই চোখে ভেসে উঠবে মারাকানা। সেই মারাকানাতেই ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে দুঃখের হার, দু’লক্ষ দর্শকের সামনে, যেকারণে ব্রাজিলীয় ফুটবলের সবচেয়ে দুঃখের স্মৃতির নাম ‘মারাকানাজো’।
রিও ডি জেনেরোর সেই স্টেডিয়ামের নাম হতে চলেছে পেলের নামে। ব্রাজিল এবং ফুটবলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলারের আসল নাম ‘এডসন আরান্তেস দো নাসিমেনতো’ স্টেডিয়াম হতে চলেছে মারাকানার নতুন নাম। সংক্ষেপে ‘রেই পেলে’ স্টেডিয়াম। পর্তুগিজে ‘রেই’ মানে ‘রাজা’। অর্থাৎ ফুটবলের 'রাজা পেলে'স্টেডিয়াম।
এই মাঠেই ১৯৬৯ সালে পেলে করেছিলেন তাঁর হাজারতম গোল, পেনাল্টিতে। পেলের ক্লাব সান্তোস খেলছিল রিও-র স্থানীয় ক্লাব ভাস্কো দা গামার বিরুদ্ধে।
রিও ডি জেনেরোর রাজ্যসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে নামবদলের। এই নামবদল পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, ‘এমন একজন মানুষকে শ্রদ্ধার্ঘ্য যাঁকে গোটা বিশ্ব একনামে চেনে। ব্রাজিলীয় ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি হিসাবে যিনি দেশের জন্য কাজ করেছেন চিরকাল।’
তবে রাজ্যসভার সিদ্ধান্ত, শুধু স্টেডিয়ামেরই নামবদল হবে, স্টেডিয়াম সংলগ্ন কমপ্লেক্সের নাম মারাকানা-ই থাকবে। অর্থাৎ মারাকানা চত্ত্বরের স্টেডিয়াম হিসাবে পরিচিতি পেতে চলেছে ‘রেই পেলে স্টেডিয়াম’।
সমস্যা অবশ্য অন্যত্র। রিও-র মানুষের কাছে এই পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে না। আর রাজ্যসভা সিদ্ধান্ত নিলেও যতক্ষণ না রিও-র রাজ্যপাল এই নাম পরিবর্তনে সম্মতি দিচ্ছেন সরকারিভাবে নাম বদলানো সম্ভব নয়।
রিও-র মানুষ মনে করছেন, পেলের থেকেও মারিও ফিলিও-র নামে এই স্টেডিয়াম হলে ভাল হতো। মারিও ফিলিও ছিলেন ফুটবল লিখিয়ে। ১৯২৬ থেকে কাগজে কাজ করা শুরু করেন। ১৯৬৬ পর্যন্ত বেঁচে থাকাকালীন বিভিন্ন কাগজে এবং সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছিলেন খেলা এবং প্রধানত ফুটবল নিয়েই। কাগজে এবং পত্রপত্রিকায় ফুটবল নিয়ে তাঁর লেখা, স্থানীয় ভাষায় এবং স্থানীয় শব্দের বহুল-ব্যবহার, জনপ্রিয়তার শিখরে নিয়ে গিয়েছিল তাঁর প্রতিবেদনগুলিকে। ফুটবল কী করে লিখতে হবে, তাঁর লেখা পড়েই শিখেছিল ব্রাজিলের পরবর্তী প্রজন্মের ফুটবল সাংবাদিকরা, এতটাই ছিল তাঁর প্রভাব। রিও-র দুই ক্লাবের চিরশত্রুতা, ফ্লেমেংগো এবং ফ্লুমিনেনসে, তাঁর লেখানুসারে ফ্লা-ফ্লু যুদ্ধ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিল। এখনও সে নামেই ডাকা হয় রিও-ডার্বিকে। ফুটবলকে দেশজুড়ে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে ফিলিওর অবদান সবচেয়ে বেশি, মেনে নিয়েছে ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসও।
শুধু তাই নয়, ১৯৫০ বিশ্বকাপের জন্য যখন ব্রাজিলের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করবে, ফিলিও-র পরামর্শেই তৈরি হয়েছিল মারাকানা স্টেডিয়াম। ১৯৪৮ সালে মারাকানা তৈরি হওয়ার পর গত ৭৩ বছরে শুধু স্টেডিয়াম হিসেবেই ফুটবল ইতিহাসে চিরস্থায়ী স্থান পেয়েছে। ১৯৫০ বিশ্বকাপের পর ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালও হয়েছিল এই স্টেডিয়ামেই। এমনকি, ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে ব্রাজিলের ফুটবলে একমাত্র সোনাজয়ের ঘটনাও এই মারাকানাতেই। সেই স্টেডিয়ামের পরিকল্পনা যেহেতু ফিলিওরই, তাঁর নাম থাকাটাই স্বাভাবিক বলে রিও'র মানুষের অভিমত।
তাদের দাবি, নাম বদলানো হলে ‘মারিও ফিলিও’ স্টেডিয়াম হোক। রিও'র মানুষ ছিলেন ফিলিও। পেলের জন্ম মানাস গেরাইস-এ এবং পেলে সারা জীবন খেলেছিলেন সাও পাওলো-র সান্তোস ক্লাবে। সেই হিসাবেও রিও-র স্টেডিয়াম পেলের নামে হওয়া উচিত নয় বলে মনে করছেন তাঁরা।
কিন্তু রিওর রাজ্যসভায় পেলের নামে স্টেডিয়াম হওয়ার প্রস্তাব পাস হয়ে যাওয়ার পর রাজ্যপালের সম্মতির অপেক্ষায় থাকা এই নাম পরিবর্তন কি আর রুখতে পারবে রিও'র!