বিরাট কোহলি এরআগে শেষ যে টেস্ট খেলেছিলেন ৩৬ রানে অলআউট হয়েছিল ভারত। অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম টেস্ট সেটি। তিন টেস্ট পরে ফিরে এলেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে, আবার সিরিজের প্রথম টেস্টে। এবারও হারল ভারত। দ্বিতীয় (টেস্টের চতুর্থ) ইনিংসে এবার মোট রান ১৯২। ভারতের মাটিতে ইংল্যান্ড শুরু করল প্রথম টেস্ট ২২৭ রানে জিতে। বিরাট কোহলির নতুন শুরুতে আবারও লজ্জাজনক হার। এই পরাজয় এবার ঘরের মাঠে।
ভারতের অধিনায়ক চেষ্টা করেছিলেন নিজের মতো করে। ১০৪ বলে ৭২ রান করলেন, ইনিংসে ৯ বাউন্ডারি। দরকার ছিল অন্তত ১৭২, বা ২১২! সে তো আর বলেই হয় না। আউট হলেন যখন, ভারতের অষ্টম উইকেট পড়েছিল ১৭৯ রানে। জয়ের ৪২০ অনেক দূর, দিনের খেলা শেষ হতেও অন্তত ঘণ্টা তিন বাকি। একা কুম্ভ হয়ে উঠতে পারেননি। তাঁর দলের বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানরাও সেই সুযোগ দেননি তাঁকে, প্রথম ইনিংস থেকেই।
ভারতের মাঠে টেস্ট ক্রিকেটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ টস জেতা। জো রুটের পক্ষে ছিল টসভাগ্য। তারপর, রুটের ব্যাট পার্থক্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সঙ্গে ছিল ভারতীয়দের নিয়মিত ক্যাচ ফেলা, স্টাম্পিং মিস। ফলে, ৫৭৮ রানের পাগাড়ে চড়ে বসেছিল ইংল্যান্ড। দরকার ছিল প্রথম ইনিংসে বড় রান।
সুনীল গাভাসকার একসময় বলেছিলেন ভারতীয়রা দ্বিতীয় ইনিংসটা যদি প্রথমে খেলত! এই যেমন বিরাট নিজেও যদি প্রথম ইনিংসে পারতেন এমন একটা ইনিংস খেলতে, ১১-র জায়গায় ৭২ করতে, ভারতকে হয়ত ২৪১-এর পরিবর্তে শ'দেড়েক রানে পিছিয়ে থাকতে হত। অবশ্য, খেলায় এমন কিছুই বলা যায় না। তখন হয়ত আবার ঋষভ পন্থ অমন ঝোড়ো ব্যাট চালানোর সুযোগ পেতেন না। কিন্তু মোদ্দা ঝামেলাটা থেকে গেল ওখানেই। প্রথম ইনিংসে বড় রান না তুলতে পারলে, বিশেষত এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে, শেষ দিন চারশোর কাছাকাছি রান তাড়া করতে হলে ভারতীয় ব্যাটিং-এর ফ্যাব ফাইভ-এর উপস্থিতি জরুরি, যা বিরাটের দলে নেই – বাস্তব!
শেষ দিনে আবার জেমস অ্যান্ডারসনের একটা স্পেল, চার বলে শুভমান গিল আর অজিঙ্ক রাহানের উইকেট, পাল্টে দিল ভারতের ভাগ্য। প্রতিরোধের চেষ্টা শেষ ওখানেই। রাহানে অধিনায়ক হয়েই একটা শতরান করেছিলেন মেলবোর্নে। সেই ১১২-র পর তাঁর রান সংখ্যাগুলো এমন – ২৭ অপরাজিত, ২২, ৪, ৩৭, ২৪, ১ ও ০। শেষ দুটি, অর্থাৎ ১ এবং শূন্য চেন্নাইতে। সব ম্যাচে। সঞ্জয় মঞ্জরেকার টুইট করে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন, অধিনায়ক রাহানের সমস্যা ব্যাটসম্যান রাহানে বলে। সে জন্য তাঁকে আবার হয়ত ঝামেলায় পড়তে হবে!
একা রাহানেও তো নন, রোহিত শর্মাই বা কী করছেন, প্রশ্ন উঠবে। আবার, সবই ঠিকঠাক হয়ে যাবে দুটো টেস্টে ঘরের মাঠে টস জিতে আগে ব্যাট করলেই হয়তবা। অস্ট্রেলিয়া সফর অতীত, ঠিক। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজেই আবার ফিরতে হবে ভারতকে, অনুপ্রেণা খুঁজতে। দলে পরিবর্তন হওয়া উচিত দ্বিতীয় টেস্টে। কিন্তু ভারতীয় দল পরিচালন সমিতি করবে কি? ভাল ব্যাট করেছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। বাদ যাবেন? ভারতীয় দলে নির্বাচিত হওয়ার মাপকাঠিতে এই মুহূর্তের ভাবনায় বেঠিক। কারণ, ব্যাট করতে জানাটাই এখন ভারতের প্রথম একাদশে থাকার যোগ্যতা বলে বিবেচিত। ঋষভ সম্পর্কে যেমন বলা হচ্ছে, ‘কিপিংটা ঠিক শিখে যাবে’। যেন এটা জাতীয় দল নয়, আকাদেমির কোনও দল যেখানে থাকতে থাকতে শিখতে হবে! প্রতিভার পরিচর্যা বলে কথা!
‘একটা বাজে দিন অফিসে’ কোচ-অধিনায়ক জানিয়ে দেবেন। ফিরবেন অস্ট্রেলিয়াতে আবার, ‘আমরা কি অ্যাডিলেডের পর ঘুরে দাঁড়াইনি’ প্রশ্ন তুলে। ঠিকই। তবে, এই ইংল্যান্ড দল যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে মাথায় রেখে, খামখেয়ালিপনা ছেড়ে দল নির্বাচনে যোগ্যতার জয়গান গাইলে ভাল হয়, এই আর কী!
দ্বিতীয় টেস্টে এই মাঠেই দর্শকের সঙ্গে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে টেস্ট ম্যাচের হিসাবে বড় রান ফিরলেই মঙ্গল।