কোটি কোটি ভক্তের হৃদয় বিদীর্ণ করে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন ফুটবল-ঈশ^র দিয়েগো ম্যারাডোনা। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বিশ^কাপ জয়ী এই কিংবদন্তি ফুটবলার। আর্জেন্টাইন সংবাদ মাধ্যম জানান, নিজ বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ম্যারাডোনা। পরে হাসপাতালে নিলে ডাক্তাররা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ম্যারাডোনার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোশ্যাল মিডিয়ার এই দুনিয়ায় আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইরিস থেকে সংবাদটা বাংলাদেশে আসতে বেশি সময় লাগেনি। ৬০ বছরেই থেমে গেলেন ফুটবল-ঈশ^র দিয়েগো ম্যারাডোনা।
৩০ অক্টোবর ষাটতম জন্মদিন পালনের তিনদিন পরই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ফুটবলের নান্দনিক কারিগর দিয়েগো ম্যারাডোনা। মাথায় রক্ত জমাট বাঁধায় অস্ত্রোপচার করতে হয়। আটদিন হাসপাতালে থেকে সুস্থ হয়ে দুসপ্তাহ আগেই বাড়ি ফেরেন। এরপর নেশামুক্তির জন্য বাড়িতেই রিহ্যাবে রাখা হয়েছিল ম্যারাডোনাকে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। নিজ বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পৃথিবীর লক্ষ-কোটি মানুষের অনুপ্রেরণা ম্যারাডোনা। তাঁর মহাপ্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা বিশ্ব।
১৭ বছর আর্জেন্টিনার জার্সিতে খেলেছেন ম্যারাডোনা। বল পায়ে তুলির টানে গোল করতেন। ১৯৮২ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলেন। চারবছর পর, মেক্সিকো বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে প্রায় একক ক্যারিশমায় চ্যাম্পিয়ন করেন। ‘হ্যান্ড অফ গড’ নিয়ে যেমন সমালোচিত হয়েছিলেন তেমনি আবার ১৯৮৬-র বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডের পাঁচজনকে কাটিয়ে করা দ্বিতীয় গোলটি ম্যারাডোনাকে অমরত্ব এনে দেয়। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানীকে ৩-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৯০ সালেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তোলেন ম্যারাডোনা। কিন্তু সেবার আর বিরুদ্ধ শক্তির সাথে পেরে ওঠেনি ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা।
জাতীয় দলের হয়ে ৯১ ম্যাচে মারাডোনার গোল আছে ৩৪টি। শুধু দেশ নয়, আপন প্রতিভার আলোয় ক্লাব ফুটবলকেও আলোকিত করেছেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত খেলে, সাধারণ এক ক্লাব ইটালির নাপোলিকে পরিণত করেন শীর্ষদলে। তবে ১৯৯৭ সালে নিজের শৈশবের দল বোকা জুনিয়ার্সে খেলে জার্সি-বুট তুলে রাখেন ম্যারাডোনা।
মৃত্যুর আগে আর্জেন্টিনার ঘরোয়া ক্লাব জিমনাশিয়ার কোচ ছিলেন মারাডোনা। জাতীয় দল আর ক্লাবের হয়ে ম্যারাডোনার যে সাফল্য তা দেখাতে পারেননি কোচিং ক্যারিয়ারে।
বন্ধুত্ব শুধু পার্থিব নয়, বিস্তৃত হয় মহাকালে- তাই বোধহয়, ২০১৬ থেকে ২০২০ চার বছরের মাথায় পরপারে চলে যাওয়ার জন্য প্রিয়বন্ধু ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মহাপ্রয়াণের দিনকে বেছে নিলেন ম্যারাডোনা।