ক্রিকেটের এই যুগে ক্রিকেটারই হওয়ার ইচ্ছে ছিলো পূজা দাসের। সেই ইচ্ছের মূল্য দিতে বিকেএসপিতে ভর্তিও হয়েছিলেন। বাংলাদেশের ‘স্পোর্টসের হাব’ বলে পরিচিত নড়াইলের এই তরুণী শুধুমাত্র খেলার জন্যই এখন রাজধানী ঢাকার অধিবাসী। তবে ক্রিকেট খেলার মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ক্রীড়াঙ্গনে থ্রোবলই পূজা দাস রাত্রিকে পরিচিত এনে দিয়েছে। এখন তিনি থ্রোবল জাতীয় দলের অপরিহার্য খেলোয়াড়। তাকে ছাড়া জাতীয় দলের কথা যেনো ভাবাই যায়না। তবে প্রিয় খেলা ক্রিকেটকে কিন্তু ভুলে যাননি রাত্রি। ব্যাটে-বলের সাথে সখীতা এখনও নিবিড় তার।
৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার রাত্রি ২০১৭ সালে প্রথম জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামেন। তারপর সময়ের সাথে সাথে জাতীয় দলে নিজেকে অপরিহার্য করে তুলেছেন। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ আনসারের হয়ে যেমন সাফল্যের কমতি নেই তেমনি জাতীয় দলের হয়েও সাফল্যের সোনালী রঙে রঙিন হয়েছেন পূজা দাস রাত্রি। দেশকে তারা এনে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জয়ীর মুকুট।
থ্রোবল এদেশে একেবারে নতুন খেলা হলেও, ভলিবলের সাথে রয়েছে তার দারুণ মিল। একসময় অদ্ভূত ধরণের এই খেলাটিই কেড়ে নেয় পূজা দাস রাত্রির সব মনোযোগ। কারণে তিনি যে বরাবরই সবকিছু থেকে আলাদা। সবকিছুতে ভিন্নতাই খুঁজে বেরান। তাই একেবারে ভিন্ন আঙ্গিকের খেলা এই থ্রোবলই হয়ে ওঠে রাত্রি’র ধ্যান-জ্ঞান।
আনসারের হয়েও খেলেন মন-প্রাণ ঢেলে। তিনবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জিতেছে তাদের দল। চারবার স্বাধীনতা কাপে দলকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন তিনি। আর একমাত্র লিগ শিরোপাও জিতেছে পূজা দাস রাত্রির দল বাংলাদেশ আনসার। অবশ্য চাকুরির সুবাদে খেলা হলেও, খেলাটিকে ভালোবেসেই খেলে থাকেন তিনি। যে কারণে সাফল্যেরা এসে লুটিয়ে পড়েছে তার পায়ে। এই তো গেলো ঘরের মাঠে খেলার কথা।
থ্রোবল এদেশে একেবারে নতুন খেলা হলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সাফল্য কম নেই বাংলাদেশের। এই নারী খেলোয়াড়রাই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন। তারাই সাফল্য এনে দিয়েছেন দেশকে। লাল-সবুজের দল ২০১৭ সালে প্রথম থ্রোবলের কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। সেই দলের হয়ে খেলেছিলেন পূজা দাস রাত্রি। প্রথম জাতীয় দল, প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। ভয়ে ভয়ে অংশ নিলেও সেবার স্বাগতিক ভারতকে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ দল। কিন্তু ফাইনালে গিয়ে আর পেরে ওঠেনি। রানার্সআপ শিরোপা নিয়েই তুষ্ট থাকতে হয় পূজা দাসদের। তবে প্রথম টুর্নামেন্ট হিসেবে অর্জনটা বেশ বড়ই বলা যায়।
এখানেই থেমে থাকতে চায়নি বাংলাদেশ নারী থ্রোবল দলের খেলোয়াড়রা। তাই শিরোপা জয়ের ছক কষতে থাকে তারা। পরের বছর মুর্শিদাবাদে নারী থ্রোবল চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জেতে পূজাদের দল। এটাই কোনো আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশের নারীদের প্রথম শিরোপা জয়। দেশের জন্য একে দারুণ এক অর্জন বলেই মনে করেন পূজা। এরপর ২০১৯ সালে মালয়েশিয়া এবং শ্রীলঙ্কা দলকেও পরাজিত করার অনন্য রেকর্ড গড়ে পূজাদের নিয়ে গড়া বাংলাদেশ নারী থ্রোবল দল।
অলোক দাস আর লক্ষ্মীরানী দাসের এক ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে পূজা দাস রাত্রিই বড়। খেলা ছাড়াও ভালোবাসেন ঘুরে বেরাতে। যদি খেলোয়াড় না হতেন তবে একজন ভালো পুলিশ অফিসারই হওয়ার চেষ্টা করতেন বলে জানান পূজা দাস। কোনো আক্ষেপ নেই, পছন্দের খেলায় নিজেকে অপরিহার্য করে তুলতে পেরেছেন এটাই বা কম কিসে। তবে সবচেয়ে বড় চিন্তা পূজা দাস রাত্রির পারফরমেন্সের উন্নতি করা। আরো ভালো নৈপুন্য দিয়ে দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরো সাফল্য পাইয়ে দেওয়া।