অনূর্ধ্ব ১৯ এবং নারী দলের ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে ফিট রাখতে মনোবিদের শরণাপন্ন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ক্রিকেট বন্ধ থাকায় মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে আকবর-তৌহিদদের। সারা বছর সীমিত ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাওয়া সালমা-জাহানারাদের জন্যও বর্তমান পরিস্থিতি বেশ কঠিন। সেকারণেই কানাডাপ্রবাসী অভিজ্ঞ মনোবিদ আজহার আলী খানের সাহায্য নেয়ার পক্ষে বিসিবি। বোর্ডের নারী বিভাগের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এমনটাই জানান।
প্রায় ৪ মাস ধরে মাঠে ক্রিকেট নেই। গত ১৯শে মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের ক্রিকেট স্থগিত রয়েছে। বাড়িতে অনুশীলন আর জিম করে ক্রিকেটাররাও বিরক্ত। বিশেষ করে অনভিজ্ঞ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের তরুণ আর নারী ক্রিকেটারদের জন্য সময়টা কঠিনই, জাতীয় পুরুষ দলের তুলনায়। অভিজ্ঞতা ও উন্নত জিম ব্যবহার করে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীমরা যতটা ফিট থাকতে পারছেন ততটা অন্যদের পক্ষে নয়। যে কারণে বিসিবি আবার শরণাপন্ন হচ্ছে কানাডাপ্রবাসী মনোবিদ আজহার আলী খানের।
শুরুতেই তিনি দুটি সেশনে ক্লাস নিবেন অনূর্ধ্ব-১৯ ও নারী ক্রিকেট দলের। ২৫ জন নারী ক্রিকেটার অনলাইনে এই ক্লাসে অংশ নিবেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিসিবির নারী বিভাগের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। আর ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান জানান, যদি জাতীয় পুরুষ দলের কেউ চায় সেই ক্ষেত্রে মনোবিদেন সঙ্গে ক্লাস করতে পারবে।
নারী বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেক দিন হয়ে গেল মাঠে খেলা নেই। পরিস্থিতিটা নারী ক্রিকেট দলের জন্য বেশ কঠিন। কারণ আমাদের নারী দলের এমনিতেই খেলার সুযোগ কম। আর আমাদের এখানে পরিবেশও ভিন্ন। যে কারণে নারী দলকে চাঙ্গা করতে মনোবিদের প্রয়োজন। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহে দুটি সেশনে ক্লাস নিবেন মনোবিদ। এই ক্লাসে নারী দলের ২৫ জন ক্রিকেটারকে রাখা হবে।’
মনোবিদ আজহার আলী খানের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগের প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে মনোবিদের সঙ্গে কথা বলেছি। যদি সব ঠিক থাকে তাহলে অনূর্ধ্ব-১৯ ও নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে অনলাইনে সেশন করবেন আলী খান। আমি মনে করি অনেক লম্বা সময় ধরে ক্রিকেটাররা বাসায় থাকতে থাকতে নানারকম মানসিক চিন্তায় ভুগতে পারে। অনেকেই ভেঙে পড়তে পারে। বিশেষ করে তরুণ ও নারী ক্রিকেটাররা। তাই শুরুটা তাদের নিয়ে করতে চাই। এখন শুধু বিসিবির অনুমোদন প্রয়োজন। গেম ডেভালপমেন্ট, নারী বিভাগ ও বিসিবির সিইও সবুজ সংকেত দিলেই মনোবিদ কাজ শুরু করতে পারে।’
আকবরদের মনোবিদের শরণাপন্ন হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছেন বিসিবির গেম ডেভলপমেন্টের ম্যানেজার আবু ইনাম মোহাম্মদ কায়সার। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টা নিয়ে বেশ চিন্তা করছি। কারণ বছরের শুরুতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে আসার পর আকবরদের আর তেমন কোনো খেলার সুযোগ হয়নি। ৫ মাস হয়ে গেছে ওরা বাড়িতে বন্দি। খারাপ আছে বলবো না সবাই ভালো আছে। নিজেদের মতো জিম করছে। তারপরও ওরা অনভিজ্ঞ তরুণ। ওদের মানসিক সাপোর্টটা বেশ জরুরী। যে কারণে মনোবিদের সেশনের ভাবনা হচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ওদের নিয়ে মনোবিদ আজহার আলী খান অনলাইনে ক্লাস নিবেন। এতে করে ওরা অনেক মানসিক শক্তি পাবে। পরিস্থিতি ভালো হলেও মাঠে নামতে ওদের মনোবল ভালো থাকবে। কারো যদি অবসাদ এসে থাকে তাও দূর হয়ে যাবে। সব কিছু ঠিক থাকলে হয়তো আগামী সপ্তাহেই ক্লাস শুরু করবেন মনোবিদ। কয়েকটা সেশন হবে। শুরুতে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সিনিয়ররা থাকবে।’
মনোবিদ আজহার আলী খান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে সেই ২০১৪ থেকে কাজ করছেন। দেবাশিষ চৌধুরী বলেন, ‘আলী খান কানাডাপ্রবাসী বাঙালী, তিনি বাংলাতেই সেশন করেন। যে কারণে আমাদের ক্রিকেটারদের সঙ্গে তার যোগাযোগটা ভালো হয়।’