ফাঁকা মাঠে গোল দিতে যাচ্ছেন কাজী মো. সালাউদ্দিন! টানা চতুর্থবারের মতো বসতে যাচ্ছেন বাফুফের মসনদে। বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং বাংলাদেশ ক্লাবস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তরফদার রুহুল আমিন বাফুফের আগামী নির্বাচনে সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পরই গণমাধ্যমে কাজী সালাউদ্দিনকে নিয়ে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। রুহুল আমিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ার দিনই ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন করেন কাজী সালাউদ্দিন। সেখানে আসন্ন নির্বাচনে আবারও সভাপতি হওয়ার বাসনা প্রকাশ করেন তিনি।
নির্বাচনে সালাউদ্দিনের সবচেয়ে বড় বাধা, পথের কাঁটা তরফদার রুহুল আমিন সরে পড়ায় ভাবা হচ্ছিল ফাঁকা মাঠেই গোল দিতে চলেছেন সালাউদ্দিন! বাফুফের সভাপতিও হয় তো মনে মনে এমনটাই ভেবেছিলেন! কিন্তু আদতে তা হচ্ছে না। বাফুফের বর্তমান সহ-সভাপতি এক সময়ের তারকা ফুটবলার বাদল রায় তা হতে দিচ্ছেন না। আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠিত বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি পদে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বাদল রায়। তিনি বলেছেন, শেষ পর্যন্ত সভাপতি পদে কেউ না দাঁড়ালে আমি আছি। সালাউদ্দিনকে ফাঁকা মাঠে গোল কিছুতেই দিতে দেবেন না। কাউন্সিলরদের প্রতি তাকে (সালাউদ্দিন) ভোট না দেয়ারও অনুরোধ করেছেন। পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন।
সালাউদ্দিনের প্যানেল থেকে গতবার সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হন বাদল রায়। একই প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন আরেক দক্ষ সংগঠক ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মহিউদ্দিন মহিও। বাদল-মহি সালাউদ্দিনের কর্মকান্ড নিয়ে বরাবরই সোচ্চার। ফুটবল যে ধ্বংসের মুখে, ফুটবলের অধঃগতি এবং দুর্নীতির জন্য সালাউদ্দিনকে দায়ী করেন বাদল রায়। গতকাল এ নিয়ে মোহামেডান ক্লাবে গণমাধ্যমের তিনি জানান, ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন সালাউদ্দিন ভাই। উনি ফুটবলের ভালো চান না। সারা দেশের ফুটবল ধ্বংস করেছেন, ক্লাব ফুটবলকে ধ্বংস করেছেন। আগামীতে তাকে সভাপতি করা হলে ফুটবল তো ধ্বংস হয়েছেই, কেবল কবর দেয়া বাকি। সেই কাজটুকুও হয়ে যাবে।’
তৃণমূল ফুটবলের উন্নয়ন, ফুটবলার তৈরিতে গেল ৩-৪ বছর ব্যাপক কাজ করেছেন তরফদার রুহুল আমিন। বাফুফের আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচন করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। কদিন আগে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বাফুফের সভাপতি পদে আপাতত নির্বাচন করছেন না বলে ঘোষণা দেন তরফদার রুহুল আমিন। হঠাৎ রুহুল আমিনের সরে যাওয়াকে মানতে পারছেন না বাদল রায়। রুহুল আমিন সরে যাননি; তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। রুহুল আমিনের সরে যাওয়ার পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন কাজী সালাউদ্দিন এমন অভিযোগ বাদল রায়ের। এ ব্যাপারে সাবেক এ ফুটবলার বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তরফদার সাহেব সরে গেছেন। আমি মনে করি তরফদার সাহেবকে সরানোর পেছনে দায়ী সালাউদ্দিন ভাই। তরফদার সাহেব সরে গেছেন; আমিও তো মরি নাই। যতদিন বেঁচে থাকব অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে যাব।’
রুহুল আমিন সরে যাওয়াতে নির্বাচন নিয়ে একটা সংকট তৈরি হয়েছে। কাউন্সিলরদের অনেকে নাকি এমনটা বলেছেন মন্তব্য বাদল রায়ের। নির্বাচন নিয়ে যে একটা গুমোট পরিবেশ তৈরি হয়েছে সেটা অস্বীকার করছেন না বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীও। বাদল রায় এ বিষয়ে সালাম মুর্শেদীকে ফোন করেছিলেন; তখন এমন কথা নাকি বলেছেন সালাম মুর্শেদী। ফুটবলের সংকটে ছিলাম, সাফল্যেও এমন মন্তব্যে করে বাদল রায় বলেন, ‘১২ বছর সভাপতি পদে আছেন কাজী সালাউদ্দিন। ১২ বছরে ৫টা খেলোয়াড়ও তৈরি করতে পারেননি।’ তরফদার সাহেব যখন ফুটবলের স্পন্সর ছিলেন; তখন অনেক কাজ হয়েছে। চুক্তির মেয়াদ থাকতে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এমপি অ্যান্ড সিলভা নাকি বেশি টাকা দিয়েছে তাই তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে। ঢাকা মহানগরীর ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করেছে তরফদার। অথচ আজ পাইওনিয়ার লিগ বন্ধ।
ক্যাসিনো কা-ে ঢাকার ক্লাবগুলো যখন বন্ধের উপক্রম ওই সময় কাজী সালাউদ্দিনকে এ বিষয়ে একটা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছিলেন বাদল রায়। গুটি কয়েক মানুষের জন্য ক্লাব বন্ধ হতে পারে না এমনটা সালাউদ্দিনকে জানিয়েছিলেন। এমনকি মোহামেডান ক্লাব যখন প্রিমিয়ার লিগের দলবদলের তারিখ পেছানোর অনুরোধ করেছিল, দলবদল করতে পারছিল না তখন মোহামেডানের পাশে দাঁড়াননি কাজী সালাউদ্দিন। মোহামেডান ক্লাব থেকে অনেক ফুটবলার উঠে এসেছে। মোহামেডান ক্লাব অনেক ফুটবলারকে জন্ম দিয়েছে। অথচ এমন একটি ক্লাব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে তার (কাজী সালাউদ্দিন) এতটুকু মায়া কাজ করেনি বলেন বাদল রায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালের বন্ধু বলে নিজেকে বরাবরই পরিচয় দেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। অথচ গেল ১২ বছরে শেখ কামালকে নাকি এতটুকু সম্মান দেখাননি সালাউদ্দিন মন্তব্য বাদল রায়ের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ কামালকে যদি সম্মান জানিয়ে থাকেন সে তরফদার রুহুল আমিন। তরফদার সাহেব তিনবার শেখ কামালের নামে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছেন। আর সালাউদ্দিন ভাই বঙ্গবন্ধুর নামে টুর্নামেন্ট করেছেন; তাও মানহীন দল এনে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী সামনে রেখে ওনি যে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজন করেছে সেখানে নি¤œমানের দল এনে খেলিয়েছেন।’ শেখ কামাল আধুনিক ফুটবলের প্রবক্তা। শেখ কামালের কারণেই দেশের ফুটবল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমীহ জাগানিয়া পর্যায়ে যেতে পেরেছে মন্তব্য বাদল রায়ের।
সালাউদ্দিনের কমিটিতে থাকলেও সব সময় ফুটবলের উন্নয়ন, উন্নতি নিয়ে ভেবেছেন। এমন কোনো কাজ নাকি বাদল রায় করেননি; যার জন্য ফুটবলের ক্ষতি হয়। সিলেট একাডেমি গড়ার পেছনে নিজের ভূমিকার কথা জানান; একই সঙ্গে দেশের ৩৮০ উপজেলায় তৃণমূলের ফুটবল উন্নয়নে কাজ করেছেন বলেও মন্তব্য করেন। সালাউদ্দিনের কারণে একাডেমি বন্ধ হয়েছে, একাডেমির ফুটবলাররা টোকাইয়ের মতো রাস্তায় ঘুরছে জানান বাদল রায়। তিনি যখন অসুস্থ হয়ে বিদেশে মাটিতে তখনও নাকি ভাবনায় ছিলে তার একাডেমি এবং সেখানকার ফুটবলাররা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাদল রায় বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি বহু আগেই মায়ের আসনে বসিয়েছি। ওনার কারণে আমার পূনর্জন্ম হয়েছে। যতদিন বেঁচে থাকব অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে যাব।’