কবিরুল ইসলাম, নেপাল থেকে
সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে সোনায় মোড়ানো একটা দিন কাটলো বাংলাদেশের। গেমসের তৃতীয় দিনে এসে তিনটি সোনার পদকের দেখা পেয়েছে লাল-সবুজের দল। নেপালের কাঠমান্ডুর সাদ্দোবাদোর ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আজ মঙ্গলবার তিনবার বেজে ওঠে জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। কারাতে ইভেন্ট থেকে আসা তিনটি স্বর্ণ পদক জয় করেন আল আমিন ইসলাম, মারজান হক প্রিয়া ও হুমায়রা আক্তার অন্তরা। এ নিয়ে বাংলাদেশের ঝুলিতে জমা হলো চারটি স্বর্ণ। আগের দিন দেশের হয়ে প্রথম স্বর্ণ জয় করেছিলেন দিপু চাকমা। তায়কোয়ানদোর পুমসে ইভেন্ট থেকে এসেছিল পদকটি। সব মিলিয়ে গত আসরের সাফল্যকে ছুঁয়ে ফেলেছে লাল-সবুজরা। এখন আরো এগিয়ে যাওয়ার পালা।
মঙ্গলবার সকালে দিনের প্রথম স্বর্ণটি এসেছিল আল আমিনের হাত ধরে। তার পথ ধরে মারজান হক ও হুমায়রা আক্তার অন্তরাও দেশকে উপহার দেন সোনার পদক। সকাল নয়টায় কুমি ইভেন্টের পুরুষ একক অনূর্ধ্ব-৬১ কেজি ওজন শ্রেনীতে পাকিস্তানের জাফরকে ৭-৩ পয়েন্টে পরাজিত করে আল আমিন দিনের প্রথম স্বর্ণ পদক এনে দেন দেশকে। তার আগে সেমি ফাইনালে তিনি স্বাগতিক নেপালের প্রতিযোগিকে ৭-৫ পয়েন্টে হারান। স্বর্ণ জিতেই আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ম্যাটে শুয়ে পড়েন রাজশাহীর এই কারাতেকা। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সত্যিই খুব আনন্দিত। দেশের হয়ে স্বর্ণপদক জিতেছি। এরচেয়ে বড় পাওয়া আর কি আছে। আমি যখন কোর্টে নেমেছি, তখন মনে হয়েছে দেশের মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে কিছু করতেই হবে। সে ভাবনা থেকেই মনপ্রান উজার করে খেলেছি। আর তাতেই গোল্ড পেয়ে গেছি। আমার প্রিয় এই ইভেন্ট থেকে পদক জয়ের প্রত্যাশা ছিল। প্রথমবারের মতো এসএ গেমসে খেলতে এসেই সেরা হওয়ার আনন্দ আসলেই আলাদা। আমি আমার কোচ, অফিসিয়ালদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা আমার উপর ভরসা রেখেছিলেন, তাদের সেই আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছি সেটাই বড় কথা।’
আল আমিনের স্বর্ণ জয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই কোর্টে নামেন মারজান হক প্রিয়া। অনূর্ধ্ব-৫৫ কেজি ওজন শ্রেণীতে পাকিস্তানের কউসার সানাকে ৪-৩ পয়েন্টে পরাজিত করে দেশের হয়ে তৃতীয় স্বর্ণপদক জয় করেন। সানার একটি পাঞ্চ সরাসরি আঘাত হেনেছিল প্রিয়ার নাকে। সাথে সাথেই বের হয় রক্ত। মেডিকেল টিম এসে তাকে চিকিংসাও দেন। রক্তাক্ত অবস্থাতেই লড়াই চালিয়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত সাফল্য পান প্রিয়া। স্বর্ণ জয়ের পরও তার নাকে রক্তের জমাট ছিল স্পষ্ট। তবুও হাসি যেনো তার ঠোঁটে লেগেই ছিল। স্বর্ণ জয়ের এমন মুহূর্তে তিনি বলেন, ‘আমি এ খুশী ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। এরচেয়ে বড় খুশী আমি কখনো হইনি। এটি আমার জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন। গতকাল রাতেও আমি আমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলেছিলাম। কথা বলতে বলতে বাবা কেঁদে ফেলেছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমার কাছে স্বর্ণ প্রত্যাশা করছি।’ বাবার কথা শুনে আমিও প্রতিজ্ঞা করি যেনো দেশের মাটিতে স্বর্ণ পদক নিয়ে পা রাখতে পারি। আজ সে আশা পূর্ণ হয়েছে।’ চলতি এ আসরে প্রথম মহিলা এথলেট হিসেবে দেশকে স্বর্ণ এনে দিতে পেরে বেশ আনন্দিত ২১ বছর বয়সী এ এথলেট, ‘গতকাল পর্যন্ত আমি একটু হতাশ ছিলাম। কিন্তু দিনের প্রথম ইভেন্টে আল আমিন যখন স্বর্ণ জয় করেন তখন আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’
তবে এবারের আসরে বাংলাদেশ প্রথম পদক পেয়েছিল হুমায়রা আক্তার অন্তরার হাত ধরে। ব্রোঞ্জ পদক দিয়ে শুরু করা এই মহিলা এথলেট কিছুটা হতাশ ছিলেন। কিন্তু সেই হতাশা কেটে গেলো স্বর্ণ জয়ের মাধ্যমে। মেয়েদের কুমি ইভেন্টের অনূর্ধ্ব-৬১ কেজি ওজন শ্রেনির ফাইনালে নেপালের প্রতিযোগি অনু গুরুংকে ৫-২ পয়েন্টে পরাস্ত করে স্বর্ণ জয়ের উৎসবে মেতে উঠেন তিনি। নিজের এমন সফলতায় বেশ আনন্দিত অন্তরা, ‘আমার স্বপ্নই ছিল এসএ গেমসের স্বর্ণ জয় করা। সেটা আমার পূরণ হয়েছে। এই গেমসটির জন্য আমি মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারিনি। আজ যদি জিততে না পারতাম, তাহলে সে কষ্টটা থেকে যেতো। এখন আমার কষ্ট অনেকটাই কমে গেছে।’