সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের নারী ক্রিকেটে ইতিহাস গড়ে স্বর্ণ জিতেছে বাংলাদেশ। প্রথমবার যুক্ত হওয়া এই ইভেন্টের শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ২ রানে হারিয়ে সোনা জয় করে সালমা-জাহানারারা। রোববার পোখরা ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আগে ব্যাট করে লাল-সবুজের দল সংগ্রহ করেছিল মাত্র ৯১ রান। জয়ের জন্য যা মোটেও যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু বল হাতে নাহিদা-জাহানারা-ফাহিমারা দূর্দান্ত বোলিং করলে লঙ্কানরা ৯ উইকেটে ৮৯ রান সংগ্রহ করতে পারে। ২ রানের জয় নিয়ে ইতিহাসে নিজেদের নাম লেখায় বাংলারবাঘিনীরা।
টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা মোটেও ভালো ছিল না। ১৬ রানেই ওপেনার মুরশিদা খাতুনের উইকেট হারায়। পাওয়ার প্লে’তে মাত্র ৩৬ রান আসে। কিন্তু ইনিংসের সপ্তম ওভারেই বল হাতে ঝড় তুলে বাংলাদেশকে বড় বিপদে ফেলে দিয়েছিলেন থিমাসিনি। ঐ ওভারে তিনি চার উইকেট তুলে নেন। আয়েশা রহমান (২), সানজিদা ইসলাম (১৫), ফারজানা (০) ও রিতু মনি (০) কে সাজঘরে ফেরান এই লঙ্কান স্পিনার। ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন ধুঁকছিল, তখন ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন নিগার সুলতানা।
কিন্তু তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন অধিনায়ক সালমা খাতুন। ৬ রান পর তিনিও সাজঘরের পথ ধরেন। এরপর মাঠে আসা ফাহিমাকে সাথে নিয়ে বেশ সাবধানে স্কোর উর্ধ্বমূখী করতে থাকেন নিগার। লঙ্কান বোলারদের দেখে-শুনে খেলে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। ফাহিমা ১৫ রানে সন্দিপানির শিকারে পরিনত হন। আর জাহানারা আলম ২ রানে আউট হয়ে যান। তবে অপরাজিত ছিলেন নিগার সুলতানা। তার ৩৮ বলে খেলা ২৯ রানের ইনিংসে ভর করেই ৯১ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। লঙ্কান স্পিনার থিমাসিনি একাই তুলে নেন ৪ উইকেট।
জয়ের জন্য এ স্কোর যে খুব বড় কিছু ছিল না, সেটা বেশ ভালোই জানা সবার। কিন্তু ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। কখন কি ঘটে যায় তা কেউ বলতে পারে না। জয়ের জন্য ৯২ রানের লক্ষ্যে মাঠে নেমে লঙ্কানরাও খুব ভালো শুরু পায়নি। বাংলাদেশী বোলারদের ঘূর্ণি বলের ফাঁদে পড়ে মাত্র ৩০ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। বল হাতে উইকেট উৎসবের শুরুটা করেছিলেন সালমা খাতুন। ওপেনার এনালিকে (১) রানে সাজঘরে ফেরান তিনি। এরপর নাহিদা আক্তার ও খাদিজা-তুল-কুবরা লঙ্কানদের তিন উইকেট তুলে নিয়ে লাল-সবুজদের ম্যাচে ফেরান।
তবে পঞ্চম উইকেট জুঁটিতে কিছুটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠার চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক মাধবী ও অপ্সরা। কিন্তু ১৩ রান পরেই এ জুঁটিকে থামিয়ে দেন পেসার জাহানারা আলম। ৩৩ বলে ৩২ রান করে বাংলাদেশের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়া অধিনায়ক মাধবীকে উইকেটের পেছনে নিগার সুলতানার ক্যাচে পরিনত করেন। দলীয় ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারালেও বাংলাদেশী বোলারদের পাত্তা না দিয়ে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন অপ্সরা। তার ব্যাটে ভর করেই জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে শ্রীলঙ্কানরা। সান্দামানি (১০) ও জিমাঞ্জলি (১) রানে বিদায় নিলে আবারো চাপে পড়ে লঙ্কানরা।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল মাত্র ৭ রান। বল হাতে আসেন জাহানারা আলম। দারুণ চাপের মুখেও দূর্দান্ত বোলিং করে ২৫ রান করা অপ্সরাকে রান আউটের ফাঁদে ফেলেন এই পেসার। আর শেষ বলে মালশা রানাতুঙ্গাকেও রান আউট করে দলকে ২ রানের জয় এনে দেন জাহানারা। বাংলাদেশের হয়ে নাহিদা দু’টি উইকেট নেন। ম্যাচ সেরাও হন তিনি।