এম এস সাহাব, গোল্ড কোস্ট, অস্ট্রেলিয়া থেকে
গত এসএ গেমসের কথা মনে আছে? স্বর্ণ জিতে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। তার আনন্দাশ্রু কাঁদিয়েছিল গোটা দেশকে। টিভি স্ক্রিনে চোখ রাখা সবাই সেদিন কেঁদেছিলেন ‘আনন্দ’-এ। সেই মাবিয়াকে নিয়ে এবারও কমনওয়েলথ গেমসে ক্ষুদ্র স্বপ্ন বুনেছিল বাংলাদেশ। পথ ছিল কঠিন। ভারোত্তোলনে তিনি কোনো পদক পাবেন- এমন জোরালো নিশ্চিয়তা ছিল না। তবে মনে মনে বাসনা ছিল, যদি আরেকবার মাবিয়া দেশবাসীকে কাঁদাতে পারেন!
বাংলাদেশের বিভিন্ন এ্যাথলেটদের টানা কয়েকদিনের হতাশাজনক ফলাফলের পর আজ শনিবার মাবিয়া ঠিকই নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেন ক্রীড়ামোদীদের। লক্ষ্যের অনেকটাই কাছে গিয়েছিলেন। মনে হচ্ছিল এবার বোধহয় হয়ে যাবে! সীমান্ত’র (মাবিয়া আক্তার) সীমাহীন চেষ্টা, কিন্তু শেষ হাসি আর হাসা হয়নি। ষষ্ট হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হলো তাকে। আর বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদীদের জন্য এতটুকু সান্ত্বনা- এবারের গেমসে বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়াবিদের এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।
গোল্ড কোস্টের কারারা স্পোর্টস এন্ড লেজার সেন্টারে আজ ৬৩ কেজি বিভাগে অংশ নেন মাবিয়া। প্রাণপণ চেষ্টা করেন। স্ন্যাচে প্রথম ও তৃতীয়বারে তুলে নেন ৭৩ ও ৭৮ কেজি। দ্বিতীয়টিতে ব্যর্থ হন ৭৭ কেজি তুলতে। ক্লিন ও জার্কেও দু’বার সফল হন। আর একবার ব্যর্থ। প্রথম দুই দফায় তুলে নেন ৯৮ ও ১০২ কেজি। কিন্তু শেষটায় ১০৩ তুলতে ব্যর্থ হন। ফলে তিনি ১৩ প্রতিযোগীর মধ্যে ষষ্ঠ হন।
এই ইভেন্টে কানাডার মাউডি ক্যারন (৯৮+১২২) মোট ২২০ কেজি ওজন তুলে স্বর্ণ পদক জয় করেন। ইংল্যান্ডের জো স্মিথ (৯২+১১৫) রৌপ্য ও রাশিয়ার মনা প্রেটরিয়াস (৯১+১১৫) ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন। মাবিয়ার এর আগে কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশীপে ২০১৩ সালে ৫৮ ওজন বিভাগে ১৫১ কেজি ও ২০১৫ সালে ৬৩ কেজি বিভাগে ১৭৬ কেজি ওজন তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। এবারই প্রথম তিনি মোট ১৮০ কেজি ওজন তোলেন।
এর আগের দিন বাংলাদেশের তিন ভারোত্তোলক পুরুষ ভারোত্তোলনের ৬৯ কেজি ওজন শ্রেণীর ইভেন্টে লাল-সবুজ দলের শিমুল কান্তি সিনহা অংশ নিয়ে চরম ব্যর্থ হন। এই ইভেন্টে ১৪ জনের মধ্যে ১৩তম হন তিনি। প্রতিযোগিতায় নেমে শিমুল স্ন্যাচে প্রথমবার ১১৫ কেজি তুললেও পরের দুইবার ১২০ কেজি তুলতে গিয়ে ব্যর্থ হন। তিনি ক্লিন এন্ড জার্কেও ১৪০ কেজি তুলতে গিয়ে টানা তিনবার ব্যর্থ হন। বাংলাদেশের শিমুল কান্তি সিনহা ও নিউজিল্যান্ডের ভিসতার ভিলানো- এ দু’জন প্রতিযোগী মাত্র একবার করে ভার তুলতে সক্ষম হন।
আর মহিলাদের ৫৩ কেজি ওজন শ্রেণীতে বাংলাদেশের ফুলপতি চাকমাও ব্যর্থতার পরিচয় দেন। তিনি ১৪ জনের মধ্যে ১২তম স্থান পান। ফুলপতি স্ন্যাচে তুলেন যথাক্রমে ৬২, ৬৬ ও ৬৮ কেজি ভার। ক্লিন এন্ড জার্কে ৮০ ও ৮৫ কেজি তুললেও ৮৬ কেজি তুললে গিয়ে ব্যর্থ হন। মেয়েদের ৫৮ কেজি ওজন শ্রেণীতে বাংলাদেশের ফাহিমা আক্তার শুরুর ভালো করেও যথারীতি ব্যর্থ পরিচয় দেন। তিনি স্ন্যাচে ৬৩ ও ৬৬ কেজি ভার তুললেও অল্পের জন্য ব্যর্থ হন ৬৯ কেজি তুলতে। ক্লিন এন্ড জার্কে তুলেন ৮০, ৮৫ ও ৮৮ কেজি ভার। ফলে ১৫ জন প্রতিযোগীর মধ্যে তার জায়গা হয় ১৩তম স্থানে।
ভারোত্তোলনে বাংলাদেশের শেষ প্রতিযোগী জহুরা খাতুন নিশা আগামীকাল রোববার পরীক্ষায় নামছেন। তিনি অংশ নেবেন ৭৫ কেজি ওজন বিভাগে। সর্বশেষ কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশীপে তিনি সর্বোচ্চ (৬৩+৮০) ১৪৩ কেজি ওজন তুলেছিলেন।