আগের দুই ম্যাচে দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড ভাঙা-গড়া হওয়ার পর তৃতীয় ওয়ানডেতেও অনন্য নজির গড়লেন টাইগাররা। নিজেদের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১০ উইকেটের জয় পেলো তামিম ইকবালের দল। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পুরো সিরিজেই রেকর্ডের ফুলঝুরি ছুটিয়েছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগের দুই ম্যাচের মতো এদিনও টস জিতে আয়ারল্যান্ড। কিন্তু এবার বেছে নেয় ব্যাটিং। আগের দুই ম্যাচে প্রায় একই কন্ডিশনে আগে বোলিং করে তেমন সুবিধা করে উঠতে না পারা-ই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেটাও কাজে লাগেনি। টাইগার পেসারদের আগ্রাসনে দাঁড়াতেই পারেননি তেমন কেউ-ই।
দলীয় ১২ রানে প্রথম আঘাত হানেন হাসান মাহমুদ। স্টেফেন ডোহেনির ক্যাচ মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দি করলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন এই ব্যাটার। এরপর বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি পল স্টার্লিং ও হ্যারি টেক্টর। হাসান মাহমুদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিকারে পরিণত হন তারা। পরে ব্যক্তিগত ৬ রানে অ্যান্ডি বালবার্নিকে সাজঘরে ফেরান তাসকিন। ২৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় আইরিশরা।
পাল্টা আক্রমণে জুটি গড়ার পথে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন ক্যাম্পার-টাকার। তবে এ জুটিকে আটকে দেন ইবাদত। দারুণ এক ইয়র্কারে ফেরান টাকারকে। ইবাদতের ইয়র্কারে সামনের পায়ে খেলার চেষ্টা করেছিলেন আয়ারল্যান্ডের কিপার-ব্যাটসম্যান। ব্যাট নেমে আসার আগেই বল আঘাত হানে তার পায়ের পাতায়। আউটের সিদ্ধান্ত জানাতে সময় নেননি আম্পায়ার।
রিভিউ নিয়েও সফল হননি টাকার। ৪ চারে ৩১ বলে ২৮ রান করেন তিনি। টাকারের বিদায়ে ভাঙে ক্যাম্পারের সঙ্গে ৪১ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি। বাংলাদেশের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে আইরিশদের সর্বোচ্চ জুটি এটি। পরের বলে ফের আঘাত হানেন ইবাদত। অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি পুরোপুরি ভুল লাইনে খেলে বোল্ড হন জর্জ ডকরেল।
তাসকিনের করা ২২তম ওভারের প্রথম বলে খাটো লেন্থের ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইন। টাইমিংয়ের গড়বড়ে ক্যাচ উঠে যায় শর্ট মিড উইকেটে। অনায়াসে সেটি লুফে নেন নাসুম। দুই বল পর মিডল স্ট্যাম্প লাইনের ডেলিভারি ফেরাতে পারেননি মার্ক অ্যাডায়ার। তার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। রানের খাতা খোলার আগেই তাসকিনের ৩য় শিকার হয়ে বিদায় নেন তিনিও।
শেষের দিকে ক্যাম্ফার চেষ্টা করলেও বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি। দলীয় ৯৬ রানে হাসানের বলে আউট হন এ আইরিশ অলরাউন্ডার। এরপর ১০১ রানে গ্রাহাম হিউমকে আউট করেন হাসান মাহমুদ। যার ফলে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট পেলেন তিনি। এছাড়াও পেসার তাসকিন নিয়েছেন ৩ উইকেট ও ইবাদত নেন ২টি উইকেট। আইরিশদের হয়ে ব্যাটার কার্টিস ক্যাম্ফার করেছেন সর্বোচ্চ ৩৭ রান।
১০২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জয় তুলে নিতে কোনো বেগই পেতে হয়নি টাইগারদের। শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করে দুই ওপেনারের ব্যাটে পৌঁছে যায় লক্ষ্যে। লক্ষ্য ছোট হলেও নিয়মিত বাউন্ডারি মেরে স্বাভাবিক ব্যাটিং করেন দুই ওপেনার। তবে দেখার বিষয় ছিল, কে তুলে নিতে পারেন ফিফটি। শেষ পর্যন্ত পেরেছেন লিটন। ৫০ রানে থাকেন অপরাজিত। ৩৮ বলে ১০টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ৪১ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় করেন হার না মানা ৪১ রান।
সেই সাথে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ১০ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। বিনা উইকেটে ১০২ রান তাড়া করে তিন ম্যাচের সিরিজটাও ২-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে তামিম ইকবালের দল।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।