প্রথমবারের মতো ২০ দলকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ আসর। ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠছে যার।
প্রতিবেশী দুই দেশ এবারই প্রথম পা রেখেছে বিশ্বকাপের মঞ্চে। কানাডাকে বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসতে হলেও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপ খেলছে যৌথ-আয়োজক হিসেবে। এই দুই দলের প্রতিন্দ্বন্দ্বিতাকে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে পুরনো দ্বৈরথ বললেও ভুল হবে না!
তবে কেউ কেউ অবশ্য ভ্রু কুঁচকাতে পারেন। কেননা কানাডা বা যুক্তরাষ্ট্র কেউই ক্রিকেটে খুব পরিচিত মুখ নয়। তার ওপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম আনুষ্ঠানিক ম্যাচ হয়েছিল ১৮৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের লড়াই দিয়ে। সবচেয়ে পুরনো দ্বৈরথের কথা বললে একবাক্যে সবার মুখেই চলে আসে অ্যাশেজের নাম!
কিন্তু প্রথম টেস্টেরও ৩৩ বছর আগে (১৮৪৪ সালে) নিউইয়র্ক প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা। তখনো ফুটবল তো বটেই আন্তর্জাতিকভাবে আলোর মুখ দেখেনি বাস্কেটবল, সেইলিংয়ের আমেরিকান কাপও। তাই অনেক ইতিহাসবিদ বিশ্বাস করেন, যেকোনো খেলার ইতিহাসে দুটি দেশ প্রথম মুখোমুখি হয়েছে সেই ম্যাচের মাধ্যমেই।
যদিও আরও চার বছর আগেই এর শুরু হতে পারত। ১৮৪০ সালের এক গ্রীষ্মে নিউইয়র্কের সেন্ট জর্জেস ক্লাবকে টরোন্টো ক্লাবের বিপক্ষে খেলার আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলেন কানাডার জর্জ ফিলপটস নামের এক খেলোয়াড়। সেই আমন্ত্রণে সাড়া তো দিয়েছেই, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কানাডায় পা রাখে সেন্ট জর্জেস। কিন্তু সেখানে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয় তারা। কেননা টরোন্টো ক্লাব দাবি করে, এমন প্রস্তাবনার ব্যাপারে কিছুই জানে না তারা। সেই ফিলপটসকেও পরে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সেন্ট জর্জেসকে অবশ্য মলিন মুখে ফেরায়নি টরোন্টো। কোনোমতে একটি দল সাজিয়ে সেন্ট জর্জেসের বিপক্ষে খেলে তারা। যদিও হারতে হয়েছিল ১০ উইকেটের ব্যবধানে।
চার বছর পর এবার আনুষ্ঠানিকভাবে টরোন্টো ক্লাবকে দুই দিনের ম্যাচ খেলার প্রস্তাব পাঠায়। পত্রিকায় বিজ্ঞাপনে যা ছাপা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা ম্যাচ হিসেবে। ম্যানহাটানে সেন্ট জর্জেসের ঘরের মাঠেই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত। নিউইয়র্কে প্রায় সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই ম্যাচ। কেননা তখন সময়টি ছিল বাজির রমরমার।
১ হাজার ডলারের প্রাইজমানির ম্যাচে বাজি ধরা হয়েছিল ১ লাখ ডলারের বেশি। ম্যাচের প্রথম দিন ২৪ সেপ্টেম্বর মাঠে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৫ হাজার দর্শক। বৃষ্টির কারণে ২৫ সেপ্টেম্বরের খেলা মাঠে গড়ায় ২৬ সেপ্টেম্বর।
প্রথম দিন আগে ব্যাট করতে নেমে ৮২ রানেই গুটিয়ে যায় কানাডা। জবাব দিতে নেমে ৯ উইকেটে ৬১ রান নিয়ে দিন শেষ করে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় অবশ্য ৬৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় তারা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৩ রান যোগ করে যুক্তরাষ্ট্রকে ৮২ রানের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয় কানাডা। কিন্তু স্বাগতিকরা ৫৮ রানের বেশি করতে পারেনি। কানাডা তাই মেতে ওঠে ২৩ রানের জয়ের উল্লাসে। পরের বছর আবার মুখোমুখি হয় দুই দল। কিন্তু এবারও হারের মুখ দেখে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এই দ্বৈরথ থেমে থাকেনি। পরে যার নামকরণ করা হয়েছে ‘অটি কাপ’ হিসেবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ কমতেই থাকে। এর কারণ হিসেবে ১৮৬১ সালের গৃহযুদ্ধকেই দায়ী করা হয়ে থাকে। ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের আমেরিকান ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ টিম লকলি ১৯৯৯ সালে দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছিলেন, ‘ক্রিকেট সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় খেলা ছিল। যখন এটি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিল, তখনই ১৮৬১ সালে শুরু হলো গৃহযুদ্ধ। সেই যুদ্ধের শিকার হলো খেলাটি। ‘ এরপর ক্রিকেটের জায়গা দখল করে নিতে শুরু করে বেসবল।
তবুও যে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, তা কিন্তু নয়। নইলে কীভাবে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মঞ্চে দেখা মিলত সবচেয়ে প্রাচীন দ্বৈরথটির। যদিও এর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় ১৮০ বছর!
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।