অবিশ্বাস্য এক কর্মকাণ্ডের জন্ম হলো অস্ট্রেলিয়ার ক্লাব ক্রিকেটে। ওয়ানডে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং দলের শেষ ওভারে প্রয়োজন ৫ রান। হাতে ৬ উইকেট। এমন পরিস্থিতিতে কেউ হারতে পারে, হয়তো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবে না।
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ করেই বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন অধিনায়ক নিজে এবং অবিশ্বাস্যভাবে একে একে ৬ বলে তুলে নিলেন ৬ উইকেট। ম্যাচ জিতে গেলো তার দল। ক্রিকেট বিশ্বে জন্ম হলো বিরল এক রেকর্ডের। এক ওভারে টানা ৬ বলে ৬ উইকেট নিয়ে এভাবে এর আগে কেউ কখনো ম্যাচ জেতাতে পারেনি।
অভাবনীয় এই ঘটনাটি ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্ট প্রিমিয়ার লিগের তৃতীয় বিভাগের ম্যাচে। ঘটনার জন্ম দিয়েছেন গ্যারেথ মর্গ্যান। তার কর্মকাণ্ড দেখে হতবাক হয়ে গেছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। কারণ এভাবে শেষ ওভারের ছয় বলে ছ’টি উইকেট নিয়ে কোনও বোলার এর আগে ম্যাচ জোততে পারেননি।
যদিও অস্ট্রেলিয়ার ক্লাব ক্রিকেটে এক ওভারে ছয় উইকেট নেওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। অতীতে এক ওভারে ছ’টি উইকেট নেওয়ার নজির আছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এক ওভারে অ্যালেড ক্যারি ছ’টি উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা এভাবে ম্যাচের জয়-পরাজয় নির্ধারক ছিল না।
শনিবার কারারা কমিউনিটি সেন্টারে গোল্ড কোস্ট প্রিমিয়ার লিগের তৃতীয় বিভাগের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল মুদগিরাবা নেরাং অ্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট ক্লাব এবং সারফার্স প্যারাডাইস। ৪০ ওভারের ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ১৭৮ রানে অল-আউট হয়ে গিয়েছিল মুদগিরাবা।
সেই রান তাড়া করতে নেমে ভালো জায়গায় ছিল সারফার্স। ৩৯ ওভারের শেষে সারফার্সের স্কোর ছিল চার উইকেটে ১৭৪ রান। অর্থাৎ জয়ের জন্য শেষ ওভারে মাত্র ৫ রান দরকার ছিল সারফার্সের। আর তারপরই ঘটে অভাবনীয় ঘটনা।
হঠাৎই বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক গ্যারেথ মর্গ্যান। তিনি এসে প্রথম বলেই ওপেনার জ্যাক গারল্যান্ডকে আউট করে দেন। যিনি ব্যাট করছিলেন ৬৫ রানে। ডিপ মিড-উইকেটে ধরা পড়ে যান জ্যাক। এরপরের ৫ ব্যাটার আউট হয়ে গেলেন গোল্ডেন ডাক মেরে।
দ্বিতীয় বলে মিড-অনে যায় কোন্নর ম্যাথিসনের ক্যাচ। তৃতীয় বলে মাইকেল কুর্তিনের ক্যাচ যায় মিড-উইকেট। এবার ক্যাচ ধরেন ইশান সান্ধু। চতুর্থ বলে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান ওয়েড ম্যাকডুগল। ক্যাচ ধরেন পয়েন্টের ফিল্ডার আরমান সিধু। প্রথম চার বলে ক্যাচ আউট। শেষ দুটি বলে বোল্ড করেন মর্গ্যান। পঞ্চম বলে আউট করেন রিলে এককার্লস্লেকে। শেষ বলে ব্রডি ফ্রেলানকে আউট করে দেন। তার ফলে চার উইকেটে ১৭৪ রান থেকে ১৭৪ রানে অল-আউট হয়ে যায় সারফার্স। হেরে যায় চার রানে।
আর মর্গ্যানের বোলিং ফিগার ছিল – ৭ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৭ উইকেট। যিনি ম্যাচের শেষে সেই অবিশ্বাস্য কীর্তি নিয়ে কিছুটা মজা করেন মুদগিরাবা নেরাং অ্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট ক্লাবের বোলার। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য গোল্ড কোস্ট বুলেটিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মর্গ্যান জানান যে, তার কীর্তি দেখে সকলে হতবাক হয়ে গিয়েছেন।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মর্গ্যানের কথায়, ‘এটা মজাদার। ওভারের শুরুতে আম্পায়ার বলেছিলেন যে ম্যাচটা জেতার জন্য আমায় হ্যাটট্রিক করতে হবে বা অভাবনীয় কিছু করতে হবে। যখন একে একে সবাই আউট হতে থাকে এবং শেষ বলেও ব্যাটার বোল্ড হলেন, তখন উনি (আম্পায়ার) শুধু আমার দিকে অপলকে তাকিয়ে ছিলেন।’
মর্গ্যান এই ঘটনাকে বর্ণনা করেন, পরাবাস্তব হিসেবে। তিনি নিজেই যা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। গোল্ড কোস্ট বুলেটিন এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম এবিসিকে মর্গ্যান বলেন, ‘এটা সত্যিই একটি পরাবাস্তব ঘটনা। আমি হ্যাটট্রিক করে ফেলার পর চিন্তা করতে থাকি, এই ম্যাচটি কোনোভাবেই হারা যাবে না। এরপর যা হলো, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। যখন আমি দেখলাম শেষ বলেও স্ট্যাম্প উপড়ে গেলো, সত্যি বলতে বিশ্বাস হচ্ছিলো না আমার। এ ধরনের ঘটনা তো এর আগে কখনো দেখিনি!’
পেশাদার ক্রিকেটে মর্গ্যানের এই রেকর্ডকে বলা হচ্ছে একক। টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্টে বলা হচ্ছে, এর আগে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। পেশাদার ক্রিকেটে এর আগে এক ওভারে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড হলো ৫টি। এবিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে নিউজিল্যান্ডের নেইল ওয়াগনার, ২০১৩ সালে বাংলাদেশের আল আমিন হোসেন, ২০১৯ সালে ভারতের অভিমন্যু মিথুন এক ওভারে সর্বোচ্চ ৫টি করে উইকেট নিয়েছিলেন, যা রেকর্ড।
মর্গ্যানের এই কীর্তি নিঃসন্দেহে ক্রিকেটের যে কোনো পর্যায়ে অবিশ্বাস্য এবং অবিস্মরণীয় একটি ঘটনা হিসেবে রয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।