এক আসর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টাইগার স্কোয়াডে ফিরেছেন শেখ মাহেদি হাসান। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিয়মিত মুখ তিনি না হলেও সব শেষ কয়েক সিরিজ ধরেই তাকে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করেছেন টাইগার কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। আর তারও রয়েছে এক বিশেষ কারণ। সেটা হলো এই মাহেদি পাওয়ার প্লেতে বেশ দক্ষ একজন বোলার।
টি-টোয়েন্টি মূলত রান ওঠা শুরু হয় ইনিংস শুরুর পাওয়ার প্লেতেই। সে সময় বল হাতে কার্যত ভূমিকা রাখতে পারেন এই স্পিন অলরাউন্ডার। বিসিবির বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে ধারাবাহিক ভিডিও সাক্ষাৎকারের গতকালকের পর্বে ছিলেন মাহেদি। সেখানে তিনি কথা বলেছেন একাধিক বিষয় নিয়ে সে সময়ই উঠে এসেছে তার পাওয়া প্লে-তে বোলিং করার অনুভূতি। পাশাপাশি মাহেদি জানিয়েছেন ক্রিকেটে তার আইডলের নাম।
লাল-সবুজদের জার্সি গায়ে জড়িয়ে ২০১৮ সালে অভিষেক হয় মাহেদির তবে ঐ ম্যাচের পর দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলতে প্রায় ২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল এই অলরাউন্ডারকে। ২০২০ সাল থেকে জাতীয় দলে প্রায় নিয়মিতই ছিলেন, ২০২১ সালের বিশ্বকাপেও খেলেছেন। কিন্তু পরের বছরের বিশ্বকাপে সুযোগ পাননি আর, সেবার এশিয়া কাপ খেলে বাদ পড়েন। আবার এক বছরের জন্য টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের বাহিরে চলে যান তিনি। এর পর আবার ফিরেছে দলে সুযোগ পেয়েছে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে তবে এ ফেরাটা সহজ ছিল না। এ প্রসঙ্গে মাহেদি বলেন, ‘দল থেকে বাদ পড়লে যে কোনো খেলোয়াড়েরই খারাপ লাগে আমার ক্ষেত্রেও একই ছিল। ফেরাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল কিন্তু আবার ফিরতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ।’
এদিকে পাওয়ার প্লেতে বৃত্তের বাইরে দুজনের বেশি ফিল্ডার থাকতে পারেন না বলে প্রতিপক্ষের রানের গতি আটকানোর চ্যালেঞ্জও থাকে উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি। সেখানেও তিনি বেশ সফল। ক্যারিয়ারে ইকোনমি রেট ৬.৩৮ হলেও প্রথম ৬ ওভারে মেহেদী মাত্র ৫.৬৭ করে রান দিয়েছেন। এছাড়া এখন পর্যন্ত খেলা নিজের ক্যারিয়ারের ৪৭ ম্যাচের মধ্যে ২৭ বারই তিনি উদ্বোধনী বোলিংয়ে আনা হয়েছে।
শুরুতে বোলিংয়ে এসে সাফল্যও পেয়েছেন মাহেদি। এ নিয়ে বলেন, ‘উপভোগ করা থেকে চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি সেখানে। যেহেতু পাওয়া প্লেতে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট রানের খেলা। এখানে যত কম রানে আটকানো যায় আর কি বোলিং করে। ঐ চ্যালেঞ্জটাই বেশি থাকে। উপভোগ থেকে চ্যালেঞ্জটা বেশি থাকে। কঠিন পরিস্থিতি থাকে পাওয়ার প্লেতে। উপভোগ তো একদমই থাকে না। সেখানে যদি উপভোগ করতে পারি, তাহলে দলের লাভটাই বেশি হয়।’
টাইগারদের এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রয়েছেন দুই জন খেলোয়াড়। তাড়া হলেন—সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই দুই ক্রিকেটারই মাহেদির বেশ প্রিয়। তাদের মধ্যে সাকিবকে তো তার আইডল বলেই জানিয়ে দিয়েছে এছাড়া মাহমুদউল্লাহর ফিনাশার হিসেবে ঝোড়ো ব্যাটিং মাহেদির খুব প্রিয়। এ নিয়ে বলেন, ‘ছোটো বেলায় যখন থেকে আমি ক্রিকেট খেলা বুঝি তখন থেকে সাকিব ভাইয়ের (সাকিব আল হাসান) খেলা খুব ভালো লাগত। যখন আমি নিজেকে সাত-আটে ব্যাটিং করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য যে প্রক্রিয়া ছিল সেখানে রিয়াদ ভাইয়ের (মাহমুদউল্লাহ) ব্যাটিংটা আমার ভালো লাগত। তো সাকিব ভাইকে আমার আইডল বলতে পারেন। আর রিয়াদ ভাইয়ের ব্যাটিং আমার ভালো লাগে ঐ পরিস্থিতে ব্যাটিং করার কৌশলটা।’
এসময় ‘আদর্শ’ সাকিবকে প্রথম বারের মতো সামনে থেকে দেখার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমি যখন এনসিএল খেলি তখন হয়তো সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম একটা ম্যাচ খেলেছিলাম। আমি আর সাকিব ভাই তখন একসঙ্গে ব্যাটিং করছিলাম। এরপর যখন সাকিব ভাই বোলিং করছিল আমি মাঠে শুধু তাকেই দেখছিলাম। এটা আমার জন্য একটা বড় অভিজ্ঞতা ছিল এবং ভেতরে রোমাঞ্চিত ছিলাম। কারণ সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে আমি খেলতে পারছি নিজের মধ্যে একটা গর্ব কাজ করছিল।’
বিশ্বকাপ কিংবা বড় কোনো টুর্নামেন্টে ভালো ফলাফল নির্ধারণ করে খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুমের পরিবেশের ওপর। যদি সবার সঙ্গে সবার বন্ডিং ভালো থাকে এবং ড্রেসিং রুমে সবার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে তাহলে দলীয়ভাবে যে কোনো বাধাই উতরে যাওয়া সম্ভব। যদিও গেল বছর টাইগারদের ড্রেসিংরুমে ঝামেলা নিয়ে বিভিন্ন খবর বাইরে এসেছিল।
তবে বর্তমানে সেরকম ঝামেলা নেই বলেই জানিয়েছেন মাহেদি। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রিয়াদ ভাই বয়স হিসেবে এখানে (স্কোয়াডে) সব থেকে সিনিয়র খেলোয়াড়। তবে রিয়াদ ভাইয়ের সঙ্গে আমরা যেভাবে মিশি খুবই আন্তরিকভাবে। তিনিও আমাদের সঙ্গে খুব মজা করে ঠাট্টা করে। এটাই আমাদের ড্রেসিং রুমের পরিবেশ। এখানে কোনো সিনিয়র জুনিয়র নেই। সবার সঙ্গে সবাই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে এভাবেই মজা করে আমরা সময় কাটাই আর কাজের সময় খুব সিরিয়াস থাকি।’ এবারের বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত একটা চ্যালেঞ্জও নিয়েছেন, ‘ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ আছে (বিশ্বকাপে)। প্রথম রাউন্ড শেষ করে পরের রাউন্ডে আগে যাওয়া।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।