মহান বিজয় দিবসের আনন্দকে দ্বিগুণ করে তুললো লিটন দাসের দল। ক্যারিবিয়ানে সেন্ট ভিনসেন্টের কিংসটাউনের আর্নস ভেল স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচ উপভোগ করলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। যেখানে শেষ ওভারের নাটকীয়তায় প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ দল। সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ১৯.৫ ওভারে ১৪০ রানে থামে ক্যারিবীয়রা। এতে ৬ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি-টোয়েন্টিতে হারাল বাংলাদেশ।
শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১০ রান। ক্রিজে তখনও ছিলেন বিধ্বংসী ব্যাটার রোভমান পাওয়েল। রোমারিও শেফার্ডের সঙ্গে যার ৩৩ বলে ৬৭ রানের জুটি বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকেই ছিটকে দিচ্ছিলেন প্রায়। হাসান মাহমুদের শেষ ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য হলেন তিনি। সাজঘরে ফেরেন ৩৫ বলে খেলেন ৬০ রানের ইনিংস খেলে। তিনি ফিরতেই মূলত জয়টা নিশ্চিত হয়ে যায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের জন্য। এরপর এক বল বিরতি দিয়ে বোল্ড আলজারি জোসেফ। তাতেই নিশ্চিত দারুণ এক জয়।
১৪৭ রানের মাঝারি পুজি নিয়েও বল হাতে দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে প্রথম বলেই উইকেট নিলেন তাসকিন আহমেদ। ব্র্যান্ডন কিংকে ফেরান টাইগার এই পেসার। পরের ওভারে মেহেদী নিলেন পুরানের উইকেট। এতে ২ রানে ২ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পঞ্চম ওভারে মেহেদীর বলে হাসান মাহমুদের ক্যাচে পরিণত হয় চার্লস (১২ বলে ২০)।
সপ্তম ওভারে মেহেদীর জোড়া আঘাতে ৩৮ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ৬.৩ ওভারে শুরুতে আন্দ্রে ফ্লেচারকে শূন্য রানে স্টাম্পড করিয়েছেন। এক বল পর চেজকেও (৭) ফিরিয়েছেন লিটনের গ্লাভসবন্দি করে। যা ছিল মেহেদীর চতুর্থ শিকার! শুরুতে অবশ্য চেজকে আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউ নেওয়াতেই মিলে সাফল্য।
১তম ওভারে গুডাকেশ মোতিকে (৬) লিটনের গ্লাভসবন্দি করে ষষ্ঠ উইকেট তুলে নেন তানজিম সাকিব। পরের ওভারে আঘাত হানেন রিশাদ হোসেনও। তাকে মেরে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন নতুন ব্যাটার আকিল হোসেন (২)। তার বিদায়ে ৬১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে স্বাগতিক দল।
শেষ ১৮ বলে ২০ রান দরকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বোলিংয়ে আসেন তাসকিন। প্রথম বলেই রিশাদের ক্যাচ বানিয়ে শেফার্ডকে ফেরালেন। উইন্ডিজ এই ব্যাটার ফিরলেন ১৭ বলে ২২ রান করে। তবে ফিফটি করে টিকে ছিলেন রোভমান পাওয়েল। শেষওভারে ১০ রান দরকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের। হাসান মাহমুদের বলে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পাওয়েল। ৩৫ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। ১ বল পরই শেষ ব্যাটার ওবেদ ম্যাকয়কে বোল্ড করে বাংলাদেশকে ৭ রানের জয় এনে দিলেন হাসান মাহমুদ।
১৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা পারফরম্যান্স মেহেদীর। দুটি করে উইকেট নেন হাসান ও তাসকিন। ১টি করে পান রিশাদ ও তানজিম সাকিব।
এর আগে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নেস ভেলে স্টেডিয়ামে টস হেরে বোলিংয়ে নেমে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রান তোলে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে সবচেয়ে বেশি ৪৩ রান করেছেন সৌম্য সরকার।
টসে জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রোভমান পাওয়েল। ওপেনিংয়ে নামেন তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকার। প্রথম দুই ওভারেই তারা তুলে নেন ১৫ রান। তবে পরের ওভারেই ভেঙে যায় এই জুটি। ১১ বলে মাত্র ৬ রান করে আকিল হোসেইনের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান তানজিদ হাসান তামিম। তার বিদায়ে ১৫ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
পরের বলে লিটন দাস আকিলকেই ক্যাচ দিয়ে আউট হন। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আফিফ হোসেনকেও হারায় বাংলাদেশ। রোস্টন চেজের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে সোজা থার্ড ম্যানে আকিল হোসেনকে ক্যাচ দেন ৮ রান করা আফিফ। ফিরতে পারতেন সৌম্যও। তবে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন তিনি। চেজের বলে সৌম্যকে কট বিহাইন্ড দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিলে দেখা যায় বল সৌম্যের ব্যাটে লাগেনি।
৩০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন সৌম্য সরকার ও জাকের আলী অনিক। এই জুটিতে ভর করে শুরুর ধাক্কা কিছুটা উঠতে থাকে বাংলাদেশ। তবে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই এই জুটিকে থামান রোমারিও শেফার্ড। রোমারিও শেফার্ডের বলে রভম্যান পাওয়েলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান জাকের। আউট হওয়ার আগে করেন ২৭ বলে ২৭ রান। তার বিদায়ে ভাঙে ৫৭ রানের জুটি।
জাকেরের বিদায়ের পর সাজঘরে ফিরে যান একপ্রান্ত আগলে রাখা সৌম্য সরকার। ৩২ বলে ৪৩ রান করে ওবেড ম্যাককয়ের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। তার বিদায়ে ৯৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপরেই জুটি গড়েন শামীম হোসেন পাটোয়ারী ও শেখ মেহেদী হাসান। ষষ্ঠ উইকেটে এই জুটির ৪৯ রানে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রান তোলে বাংলাদেশ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।