স্বর্ণযুগে জিম্বাবুয়ে ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের সমীহ জাগানো দল। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পথচলায় জিম্বাবুয়ের অবদান কম নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যখন চরম দুঃসময় কাটাচ্ছিল বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্র পেয়েছিল। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ আজ বিশ্ব ক্রিকেটের সমীহ জাগানো শক্তি। বিশ্বকাপ শিরোপা জেতারও স্বপ্ন দেখছে, তখন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট আকাশ ঢাকা অনিশ্চয়তার মেঘে।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের এক সময়ের নিয়মিত দল জিম্বাবুয়ে এখন বাছাই পর্বই পার হতে পারে না। গত আসরের মতো এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দর্শক হয়েই থাকতে হচ্ছে ফ্লাওয়ার ভ্রাতৃদ্বয়, অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, হিথ স্ট্রিক, ব্রেন্ডন টেলরের উত্তরসূরিরা। বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া দলটার সঙ্গে ঘরের মাঠে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলছে টাইগাররা। এই সিরিজ খেলে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সারতে চায় টাইগাররা।
চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের বোলারদের সামনে খাবি খেয়েছে সফরকারী দলের ব্যাটাররা। তাই দ্বিতীয় ম্যাচে দলে দুটি পরিবর্তন এনেছে সিকান্দার রাজার দল। শন উইলিয়ামস ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে বসিয়ে দুই নতুন মুখ জোনাথন ক্যাম্পবেল ও আইনসলে এনডিলভুর অভিষেক ঘটিয়েছে জিম্বাবুয়ে।
এদের মধ্যে জোনাথান ক্যাম্পবেল বাঁহাতি ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ ব্রেক বোলিং করে থাকেন। অভিষেক ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন এই ২৬ বছর বয়সী অলরাউন্ডার।
সাত নম্বরে নেমে মাত্র ২৪ বলে ৪৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন ক্যাম্পবেল। শরিফুল ইসলামের বলে আউট হওয়ার আগে হাঁকিয়েছেন ৪টি চার ও ৩টি ছয়।
অথচ তিনি যখন নামেন জিম্বাবুয়ে ১০ ওভারের বেশি ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৪২ রান তুলে ধুঁকছে। সেখান থেকেই ব্রায়ান বেনেটের সঙ্গে দুর্দান্ত জুটি গড়েন ক্যাম্পবেল। ৪৩ বলে ৭৩ রান যোগ করেন তারা দুজন। ক্যাম্পবেল আউট হলেও ২৯ বলে ২ চার ও ৩ ছয়ে ৪৪ রান করে অপরাজিত থাকেন বেনেট। এই জুটিতে ভর করেই একটা ভদ্রস্থ সংগ্রহ পেয়েছে সফরকারীরা।
অভিষেকে চমক দেখানো জোনাথনের আরও একটা পরিচয় আছে। তিনি জিম্বাবুয়ের স্বর্ণযুগের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ছেলে। অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল জিম্বাবুয়ের স্বর্ণযুগে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দলকে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। এছাড়া তার নেতৃত্বেই ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সুপার সিক্সে খেলেছিল দেশটি।
বাবা অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের মহারথীদের একজন। আইসিস নকআউট ট্রফির (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন তিনিই।
ছেলে জোনাথন আজ যেভাবে বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়েছেন, বাবা অ্যালিস্টার তার চেয়েও বেশি জ্বালিয়েছেন টাইগারদের। সে সময়ের পুঁচকে বাংলাদেশকে পেলেই জ্বলে উঠতেন তিনি। টাইগারদের বিপক্ষে ১৯৯৭-২০০১ সাল পর্যন্ত মোট ৭টি ওয়ানডে খেলেছেন অ্যালিস্টার। তাতে ৪৭ গড়ে ৩২৯ রান করেছেন তিনি। একটি সেঞ্চুরি ছাড়াও আছে দুটি হাফ সেঞ্চুরি। বল হাতেও বাংলাদেশের বিপক্ষে জ্বলে উঠতেন এই পার্টটাইমার। ২২.৫০ গড়ে ২ উইকেট শিকার করেছেন টাইগারদের বিপক্ষে।
বাবার দেখানো পথেই হাঁটলেন জোনাথন। বাংলাদেশকে পেয়েই জ্বলে উঠলেন। নিশ্চয়ই এখানে থেমে থাকতে চাইবেন না তিনি। বাবার মতোই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের স্বর্ণযুগের সারথি হতে চাইবেন জোনাথন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।