বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় লাভ হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার। এ যেনো ’নেপোয় মারে দই’ অবস্থা। দক্ষিণ আফ্রিকা সরাসরি পৌছে গেছে বিশ্বকাপের আসরে। তবে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা করে নিতে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করার বিকল্প ছিল না আয়ারল্যান্ডের। বৃষ্টির কারণে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে পরিত্যক্ত হওয়ায় সেই সুযোগ আর পাচ্ছে না অ্যান্ড্রু বালবির্নির দল। ফলে অষ্টম দল হিসেবে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ পেল সাউথ আফ্রিকা। আর শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে বাছাই পর্ব খেলবে আয়ারল্যান্ড।
জয়ের জন্য ২৪৭ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা বেশ ভালোই করে আয়ারল্যান্ড। তৃতীয় ওভারে হাসান মাহমুদকে দুটি চার মেরেছিলেন পল স্টার্লিং। তাতে করে খানিকটা বিধ্বংসী হওয়ার আভাস দেন ডানহাতি এই ওপেনার। তবে স্টার্লিংকে ইনিংস বড় করার সুযোগ দেননি শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা মেহেদি হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
১৫ রান করা স্টার্লিং ফেরার পর অ্যান্ড্রু বালবির্নিকে শুরুতেই বিদায় করেছেন হাসান। ডানহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া ডেলিভারিতে ইনসুইং করলে সেটা পড়তে পারেননি বালবির্নি। তাতে মাত্র ৫ রানে ফিরে যেতে হয় আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ককে। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। যেখানে সমান সংখ্যক উইকেট হারিয়ে আইরিশরা তুলতে পেরেছে ৩৯ রান।
স্টার্লি ও বালবির্নিকে হারানোর পর স্বাগতিকদের চাপ কমানোর চেষ্টা করেন স্টিফেন দোহানি ও হ্যারি টেক্টর। তবে তাদের জুটি খুব বেশি বড় হতে দেননি তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে পুশ করতে চেয়েছিলেন দোহানি। ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক করতে না পারায় ক্যাচ চলে যায় বোলার তাইজুলের কাছে। খানিকটা সামনে ঝুঁকে ফিরতে ক্যাচ দিয়ে ১৭ রান করা দোহানিকে ফেরান বাঁহাতি এই স্পিনার।
এর কিছুক্ষণ পরই বাগড়া দেয় বেরসিক বৃষ্টি। যার ফলে লম্বা সময় বন্ধ থাকে খেলা। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬.৩ ওভারের সময় হানা দেয় বৃষ্টি। পরবর্তীতে বৃষ্টি থামলেও মাঠ খেলার উপযুক্ত ছিল না। আর আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিং ইনিংসে ২০ ওভার খেলা না হওয়ায় ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ১৬.৩ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ৬৫ রান তুলেছিল স্বাগতিকরা। যেখানে ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন টেক্টর।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। জশুয়া লিটলের ফুলারে লেংথে পড়া ইনসুইং ইয়র্কারে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন লিটন দাস। বল আগে বুটে লাগায় রিভিউ নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি ডানহাতি এই ব্যাটার। তাতে শূন্য রানেই ফিরে যেতে হয় লিটনকে। বেশ কয়েকদিন ধরেই চেমসফোর্ডে চলছে রোদ-বৃষ্টির খেলা।
উইকেটে খুব বেশি ঘাস না থাকলেও শুরুতে দারুণ সুইং পেয়েছেন মার্ক অ্যাডায়ার-লিটলরা। সেটা কাজে লাগিয়ে তামিম ইকবালকে বিদায় করেছে অ্যাডায়ার। ডানহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে উইকেটকিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। স্টাম্প মাইকে স্পষ্ট আওয়াজ শোনা গেলেও আউট দেননি আম্পায়ার মাইকেল গফ।
যদিও অ্যান্ড্রু বালবার্নি রিভিউ নিয়ে ১৯ বলে ১৪ রান তামিমকে ফেরায় আয়ারল্যান্ড। পাওয়ার প্লেতে অবশ্য আর কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। প্রথম দশ ওভারে সফরকারীদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৫০ রান। এদিকে শুরু থেকে দারুণ ব্যাটিং করলেও শেষ পর্যন্ত উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেছেন সাকিব আল হাসান। গ্রাহাম হিউমের লেংথ বলটি অ্যাক্রোস দ্য লাইনে খেলতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি তিনি।
ফলে বোল্ড হয়ে ফিরে যেতে হয় ২১ বলে ২০ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটারকে। এরপর অবশ্য জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহীদ হৃদয়। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৫০ রান। তাদের জুটির হাফ সেঞ্চুরি হওয়ার পরই বিদায় নিয়েছেন শান্ত। কার্টিস ক্যাম্ফারের নিচু হওয়া শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে থাকা অ্যাডায়ারকে ক্যাচ দিয়েছেন।
হাফ সেঞ্চুরির আক্ষেপে পোড়া শান্ত আউট হয়েছেন ৬৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলে। শান্ত ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি হৃদয়ও। হিউমের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তরুণ এই ব্যাটার। লরকান টাকার খানিকটা ডানদিকে লাফিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ দিয়ে ২৭ রানে ফিরে যেতে হয় হৃদয়কে। এরপর অবশ্য মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন মুশফিক।
তারা দুজনে মিলে আইরিশ বোলারদের বেশ ভালোভাবেই সামলাচ্ছিলেন। তবে থিতু হয়ে উইকেট দিয়ে আসেন মিরাজ। জর্জ ডকরেলের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে স্লগ সুইপ করেছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। টপ এজ হওয়ায় ডিপ স্কয়ার লেগে থাকা স্টিফেন দোহানিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় ৩৪ বলে ২৭ রান করা মিরাজকে। সাতে নামা এই ব্যাটার ফেরার পর ৪১.৫ ওভারে দুইশ স্পর্শ করে বাংলাদেশ।
শান্ত হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপে পুড়লেও পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন মুশফিক। হিউমের লেংথ ডেলিভারিতে কভার পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে এক রান নিয়ে ৬৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ডানহাতি এই উইকেট কিপার ব্যাটার। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ চার ইনিংসে এটি মুশফিকের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি। যদিও পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি।
অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে পয়েন্টে থাকা দোহানির হাতে ক্যাচ দিয়ে ৭০ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলে ফিরেছেন মুশফিক। এরপর বাংলাদেশের রান খানিকটা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি এই ব্যাটারের ১৬ রানের ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ২৪৬ রানে থামে সফরকারীরা। আগামী ১২ মে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দু’দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ- ২৪৬/৯ (৫০ ওভার) ( শান্ত ৪৪, মুশফিক ৬১; লিটল ৩/৬১)।
আয়ারল্যান্ড- ৬৫/৩ (১৬.৩ ওভার) (দোহানি ১৭, টেক্টর ২১*; তাইজুল ১/৫, হাসান ১/২১, শরিফুল ১/২১)।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।