বিকেল সাড়ে ৪টায় কিংস অ্যারেনায় ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলন। নির্ধারিত সময়ের আগেই অস্ট্রেলিয়া মিডিয়া বিভাগের কর্তাদের পায়চারি। একেবারে সাড়ে ৪টায় হেড কোচ গ্রাহাম আরনল্ড আসলেন সিনিয়র ফুটবলার কাই রোলসকে নিয়ে। নির্ধারিত ১৫ মিনিটের প্রশ্ন-উত্তর পর্ব শেষ হতেই সম্মেলন কক্ষ থেকে বের হওয়ার তাগাদা।
বাংলাদেশ দলও তখন সম্মেলন কক্ষের পথেই ছিল। বাফুফের মিডিয়া ম্যানেজারের অনুরোধ দুই দলের কোচ-অধিনায়কের একসঙ্গে ছবি তোলার। সেই অনুরোধ রক্ষায় বড় জোর এক মিনিট অপেক্ষা করল অস্ট্রেলিয়া দল। এরপরই অনুশীলন ভেন্যুর দিকে রওনা। সময়ানুবর্তিতা ও পেশাদারিত্বের ছোট্ট নিদর্শন এটি। উপমহাদেশ বা এশিয়ার অন্য দেশ হলে দুই দলের ফটোসেশনের জন্য সম্মেলন কক্ষে কয়েক মিনিট বিলম্ব অথবা অনুশীলনও কয়েক মিনিট পিছিয়ে যেত।
ফিফা–এএফসির নিয়মানুযায়ী ম্যাচের আগেরদিন সফরকারী দল ম্যাচ ভেন্যুতে অনুশীলনের সুযোগ পায়। আজ (বুধবার) দুপুরের পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আকস্মিক বৃষ্টিতে কিংস অ্যারেনার মাঠ খানিকটা ভারী ছিল। ম্যাচ কমিশনার তাই ভেন্যুতে দুই দলের অনুশীলনই বাতিল করেছে। ম্যাচের আগে ভেন্যুতে অনুশীলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই ভেন্যুতে অনুশীলনের সুযোগ না পেয়েও বেশ উদার অস্ট্রেলিয়ান কোচ, ‘ম্যাচের দিন সেরা মাঠটি প্রয়োজন। তাই এটা (অনুশীলন করতে না দেওয়া) খুব ভালো সিদ্ধান্ত। আমরা গতকাল দুপুরে এসেছি। এখনও (সম্মেলন পর্যন্ত) অনুশীলনে নামতে পারিনি।’
উন্নত বিশ্বে ফুটবল ক্লাবগুলোর নিজস্ব স্টেডিয়াম রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার গল্পটি অবশ্য ভিন্ন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন দল বসুন্ধরা কিংস নিজেদের অর্থায়নে এই স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স গড়েছে। পরিবেশ ও অনুশীলন ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষই প্রকাশ করলেন অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলার কাই, ‘এখানকার পরিবেশ ও স্টেডিয়াম দেখে ভালোই লাগল, বেশ সুন্দর পরিবেশ।’
মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে ৭-০ গোলে হারিয়েছিল। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ যৌথ বাছাইয়ে টানা চার ম্যাচ জিতে অস্ট্রেলিয়ার এশিয়ান কাপ নিশ্চিতের পাশাপাশি বিশ্বকাপের পরের ধাপের বাছাইও নিশ্চিত। তাই বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় রেখে তারা ঢাকায় এসেছে। বাংলাদেশ দল হোম কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপহার দিতে চায়। বাংলাদেশের শক্তি নিজেদের মাঠ, আবহাওয়া ও দর্শক। প্রতিপক্ষের শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ান কোচ বলেন, ‘কন্ডিশন কোনো সমস্যা বা অজুহাত হবে না। আমাদের এখানে অনেক খেলোয়াড় আর্জেন্টাইন হাজার হাজার দর্শকের সামনে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।’
১৯৭৪ সালের পর অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘদিন বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারেনি। ২০০৫ সালে ওশেনিয়া মহাদেশ থেকে এশিয়ায় আসার পরই বিশ্বকাপে তাদের অংশগ্রহণ নিয়মিত হচ্ছে। ২০০৬ থেকে ২০২২, টানা প্রতিবারই বিশ্বকাপ খেলেছে সকারুজরা। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের গণ্ডি মূলত দক্ষিণ এশিয়ার অঞ্চলে। ফলে বিশ্বকাপ খেলা দলের সঙ্গে খেলার সুযোগ হয় কালেভদ্রে।
দল আসার আগেই অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধি দলের দুই জন আগেই এসে সব কিছু পরখ করে গেছেন। সকল কিছু তত্ত্বাবধান করছেন অস্ট্রেলিয়ানরা নিজেরাই। অস্ট্রেলিয়ার অনুশীলনেও দেখা গেল সিরিয়াস–ভাব। গোলরক্ষক কোচ আলাদাভাবে নেমে পড়লেন গোলরক্ষকদের নিয়ে। হেড কোচ ছক আঁকছেন বাংলাদেশ বধের। খেলোয়াড়রা মূল অনুশীলন শুরুর আগে সারিবদ্ধভাবে দৌড়াচ্ছিলেন। ম্যানেজার ও বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলন শেষ হতে হতেই অনুশীলন ভেন্যুতে বল নিয়ে নেমে পড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ানরা। মিডিয়াও ধীরে ধীরে ভিড় জমাতে শুরু করে। অস্ট্রেলিয়ার এই বহরে মিডিয়া বিভাগ থেকে এসেছেন তিনজন। একজন ছবি ও ভিডিও তুলছেন, আরেকজন সমন্বয় ও অন্যজন সামগ্রিক তদারকিতে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।