নিজেদের ইতিহাসে কখনোই ইংল্যান্ডকে হারতে পারেনি স্লোভাকিয়া। আর কখনোই কোনো টুর্নামেন্টের নক আউট পর্বে পায়নি জয়। আর দুটিই একবারে ঘটে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল। প্রথমার্ধে গোল করে গোটা ম্যাচই লিড ধরে রাখে স্লোভাকিয়া। কিন্তু ৯৫তম মিনিটে জুড বেলিংহামের অবিশ্বাস্য ওভারহেড শটে গোলে সমতায় ফেরে ইংলিশরা। এরপর খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেই প্রথম মিনিটে গোল করে ইংলিশদের জয় এনে দেন হ্যারি কেইন।
বিজ্ঞাপন
শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতে নেয় ২-১ গোলের ব্যবধানে। আর তাতেই স্লোভাকিয়ার স্বপ্ন ভেঙে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় ইংল্যান্ড।
ইউরোর গ্রুপ পর্বে বাজে পারফরম্যান্সের পরেও সেরা হয়েই নক আউটে জায়গা করে নেয় ইংল্যান্ড। নক আউট পর্বের শুরু থেকেই ভিন্ন এক ইংল্যান্ডের দেখা পাওয়ার আশায় ছিল সমর্থকরা। তবে গ্রুপ পর্বের সেই বিবর্ণ পারফরম্যান্সেরই দেখা মিলল স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচেও। স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে প্রথমার্ধে দেখা মেলে দুর্বল ও ভঙ্গুর এক ইংল্যান্ড দলের। হজম করে তারা গোলও। বিরতির পর মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালালেও গোলের দেখা পাচ্ছিল না গ্যারেথ সাউথগেটের দল। শেষ মুহূর্তে দুর্দান্ত এক গোলে দলকে ম্যাচে ফেরালেন জুড বেলিংহাম। অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে জালের দেখা পেলেন হ্যারি কেইন। বিদায়ের চোখ রাঙানি এড়িয়ে, স্লোভাকিয়ার স্বপ্ন ভেঙে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল গতবারের ফাইনালিস্টরা।
জার্মানির পশ্চিমের শহর গেলসেনকিরশেনে রোববার শেষ ষোলোর অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছে ইংল্যান্ড। প্রথমার্ধে ইভান শারাঞ্জ স্লোভাকিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার পর ৯৫তম মিনিটে সমতা টানেন বেলিংহাম। অতিরিক্ত সময়ে ব্যবধান গড়ে দেন কেইন।
ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে লিড নেওয়ার খুব কাছে ছিল স্লোভাকিয়া। হারাসলিন বাঁ দিক থেকে বক্সে ঢুকে লক্ষ্যে শট নেন। ইংলিশ কিপার জর্ডান পিকফোর্ডের নাগালের বাইরে দিয়ে যায় বল। কিন্তু একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দূরের পোস্ট ঘেষে মাঠের বাইরে চলে যায় বল। চার মিনিট পর ভালো সুযোগ নষ্ট করে ইংল্যান্ড। গোলমুখের খানিকটা সামনে থেকে বেলিংহামের ক্রস আকাশের দিকে মারেন ট্রিপিয়ের।
ইংলিশদের ছন্দহীন খেলার সুযোগ নিতে শুরু করে স্লোভাকিয়া। ২৫ মিনিটে তার মাশুল গোনে গতবারের রানারআপরা। তাদের এক ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ডেভিড স্ট্রেলেকের পায়ে দেন। স্লোভাক স্ট্রাইকার ইংল্যান্ডের রক্ষণ চিড়ে পাস দেন। ইভান শারাঞ্জ সাইডফুটে পিকফোর্ডকে পরাস্ত করে জাল কাঁপান। তৃতীয় গোলে জার্মানির জামাল মুসিয়ালা ও জর্জিয়ার জর্জেস মিকাউতাদজের সঙ্গে যৌথভাবে এই আসরের শীর্ষ গোলদাতা হন তিনি।
এরপরও নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে খেলতে পারেনি ইংল্যান্ড। বার বার বল হারানো থেকে শুরু করে দিশাহারা আক্রমণ সবদিক থেকেই এলোমেল ইংলিশরা। এমন পারফরম্যান্সে প্রথমার্ধে গোল বরাবর কোনো শটই রাখতে পারেনি ইংল্যান্ড। আর কোনো মেজর টুর্নামেন্টের নকআউটে ৪৮ বছর পর প্রথমবার প্রথমার্ধে লক্ষ্যে কোনও শট নিতে ব্যর্থ হয় ইংল্যান্ড। ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে এমন কাণ্ড করেছিল তারা।
তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দারুণ আক্রমণ করতে থাকে ইংল্যান্ড। ফলাফল আসে ৫০তম মিনিটেই। ট্রিপিয়েরের বানিয়ে দেওয়া বলে গোলমুখের সামনে থেকে সহজ গোল করেন ফিল ফোডেন। কিন্তু রেফারি ভিএআর চেক করে গোল বাতিল করে দেন তিনি অফসাইডে থাকায়। এরপর উল্টো বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করে স্লোভাকিয়া।
ম্যাচ তখন গড়াচ্ছে শেষের দিকে। ইংল্যান্ড পিছিয়ে ১-০ গোলের ব্যবধানে। টুর্নামেন্টে নিজেদের ধরে রাখতে গোলের বিকল্প নেই। ৮১ মিনিটে ডেকলান রাইসের শট গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসে, হ্যারি কেইন ফিরতি শট নিলেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তাতে হতাশা বাড়ে ইংল্যান্ডের।
লিড ধরে রেখে স্লোভাকিয়া জয়ের সুবাস পেতে থাকে। ইনজুরি টাইমের সাত মিনিটের তখন পঞ্চম মিনিট। এমন সময় আচমকা গোল করে ইংল্যান্ডের গ্যালারি কাঁপিয়ে তোলেন বেলিংহাম। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে মার্ক গুয়েহি হেড পাস দেন, ইংলিশ মিডফিল্ডার ঠাণ্ডা মাথায় ওভারহেড কিকে জালে বল জড়ান।
হারতে বসা ইংল্যান্ড হঠাৎ আশার আলো খুঁজে পায়। ম্যাচ গড়ায় একস্ট্রা টাইমে। আর শুরুতেই গোল করে তারা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ৯১ মিনিটে কোল পালমারের ক্রস স্লোভাক গোলকিপার ক্লিয়ার করলে বল পান এবেরেচি এজে, তার শটে টনি হেড করেন কেইনের দিকে। সামান্য লাফিয়ে হেড করে জাল কাঁপান ইংলিশ অধিনায়ক। পিটার শিল্টনকে পেছনে ফেলে ইংল্যান্ডের জার্সিতে রেকর্ড ৭৯তম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে নেমে দলের জয়ের নায়ক তিনি।
এরপর স্লোভাকিয়া বাকি সময়ে কয়েকবার ইংল্যান্ডের বক্সে হানা দিলেও পিকফোর্ডের পরীক্ষা নিতে পারেনি।
আগামী ৬ জুলাই ইংল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।