পল্টন শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে আজ সোমবার শেষ হয়েছে ৩৫তম জাতীয় পুরুষ ও নবম মহিলা কুস্তি প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন নদী চাকমা। মাত্র দুই দিনের অনুশীলন করে এসেই পাহাড়ি কন্যা জিতেছেন রৌপ্য পদক। ৫৫ কেজি ওজন শ্রেণিতে অংশ নিয়ে ফাইনালে সেনাবাহিনীর নদী হেরেছেন আনসারের স্বপ্না আক্তারের কাছে।
নদীর বাড়ি রাঙামাটি জেলায়। শুরুতে ফুটবল খেলতেন একসময়। ২০১১ সালে বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবলে খেলেছেন। সেখানে ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে ডাক পান বাফুফের ক্যাম্পে। কিন্তু চোটের কারণে শ্রীলঙ্কায় যেতে পারেননি।
এরপর অবশ্য ফুটবল থেকে বাদ পড়ে কুস্তি খেলায় মন দেন নদী। ২০১৪ সালে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান আনসারে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আনসারেই চাকরি করেছেন। এ পর্যন্ত ৯ বছরের ক্যারিয়ারে জাতীয় প্রতিযোগিতায় জিতেছেন ৩টি সোনা ও ৫টি রুপা। আর আন্তবাহিনী ও বিভিন্ন সার্ভিসেস সংস্থার প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩০টি সোনার পদক জিতেছেন। নদীর সর্বোচ্চ সাফল্য ২০১৬ গুয়াহাটি এসএ গেমসে ব্রোঞ্জ পদক।
কুস্তি খেলার সুবাদে পেয়েছেন সেনাবাহিনীর চাকরি। এবার আরেকটি সুসংবাদও পেলেন। জাতিসংঘ মিশনে যাওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে তাকে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে যাবেন দক্ষিণ সুদানে।
মেয়ে হিসেবে খেলাধুলা করতে গিয়ে নানা রকমের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে নদীকে। সেই কষ্টের কথা বলছিলেন তিনি এভাবে, ‘যখন শুরুতে খেলা শুরু করি, তখন অনেকে বলতো ছেলেদের মতো কেন চলাফেরা করি? অনেকে বাজে কথা বলতো। তবে আমি কানে নেইনি। কারণ ভালো কিছু করলে সুনাম একসময় হবেই। তাছাড়া বাবা-মা সমর্থন দিতেন আমাকে।’
কুস্তিগীরদের খাবারের দিকে বেশ নজর দিতে হয়। কিন্তু নদীর সেটা করতে বেশ কষ্ট হয়ে যায়, ‘আসলে কুস্তিবিদদের ভালো খাওয়া জরুরি। আমি যখন ক্যাম্পে থাকি তখন ভালো খাবার খাই। অন্য সময় ভালো ভালো পুষ্টিকর খাবার খেতে বেতনের অর্ধেক টাকা চলে যায়।’
নদীর বাবা কুমস্যা চাকমা এক সময় কৃষি কাজ করতেন। ৭ ভাইবোনের সংসারে টানাটানি লেগেই থাকতো। বর্তমানে নদীর চার ভাই আলাদা সংসার করছেন। দুই বোনেরও বিয়ে হয়ে গেছে। খেলাধুলার কারণে নদী এখনও বিয়ে করেননি। তবে বাবার সব দায়িত্ব নিজেই নিয়েছেন। বেশ গর্ব করে বলছিলেন, ‘বাবার এত ছেলে মেয়ে থাকতে আমার কাছে উনি থাকেন। আমার ওপর ভরসা করেন। আমি এতে অনেক গর্ব করি।’
কুস্তির প্যাঁচ দিয়ে প্রতিপক্ষকে আটকে ফেলতে ভালোবাসেন। জীবনের সব বাধাও পেরিয়ে এক সময় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান নদী, ‘স্বপ্ন দেখি একদিন এসএ গেমসে সোনার পদক জিতবো।’
উল্লেখ্য, এই প্রতিযোগিতায় পুরুষ ও মহিলা দুই বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ আনসার।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।