বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনে চলছিল জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতার ১২তম রাউন্ডের খেলা। এনামুল হোসেন রাজীবের বিপক্ষে খেলছিলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। শুক্রবার দুপুর ৩টায় শুরু হওয়া ম্যাচটিতে খেলাকালীন হঠাৎ করেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জিয়াউর। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর জানা গেল হার্ট অ্যাটাক করেছেন তিনি।
দাবা ফেডারেশন থেকে হাসপাতালে পৌঁছাতে ৯ মিনিট সময় লাগে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা দ্রুতই তার চিকিৎসা শুরু করেন। প্রায় ১৫ মিনিট পর্যন্তও তার পালস খুঁজে পাননি ডাক্তাররা। অবশেষে তাকে মৃত ঘোষণা করে ডাক্তার। দাবা ফেডারেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫০ বছর। গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার মুত্যতে শোকের ছায়া নেমেছে দেশের ক্রীড়াঙ্গণে। ১৯৭৪ সালে জন্ম নেওয়া জিয়া ১৯৯৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল আর ২০০২ সালে দেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাব অর্জন করেন। বাংলাদেশি দাবাড়ুদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫ শো ৭০ ফিদে রেটিংও তার।
১৯৮৮ সালে প্রথমবার জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হন জিয়াউর রহমান। টুর্নামেন্টে রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নও তিনি। যেখানে বাকি চার গ্র্যান্ডমাস্টার সম্মিলিতভাবে জিতেছেন ১৬ বার। হাসপাতালে পৌঁছানোর পরই জিয়ার স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েন। চিকিৎসকদের কাছ থেকে ৭টা ২০ মিনিটের দিকে মৃত্যুসনদ পাওয়ার পর কান্নার সেই বেগ আরও বাড়ে। কারও সান্ত্বনাই থামাতে পারছিল না তার সেই কান্না। শুধু জিয়ার স্ত্রীই নন, এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তার সহ-খেলোয়াড়দের অনেকেই।
দাবা ছিল জিয়াউর রহমানের ধ্যানজ্ঞান। জীবনের শেষ মুহূর্তটাও জিয়ার কাটালো দাবার বোর্ডেই। খেলার মধ্যে ক্রীড়াবিদদের মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। তবে বাংলাদেশে এমন ঘটনা এটাই প্রথম। বাবা পয়গাম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন জাতীয় পর্যায়ের দাবাড়ু। স্ত্রী তাসমিন সুলতানাও ছিলেন জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়। জিয়া-তাসমিন দম্পতির একমাত্র সন্তান তাহসিন তাজওয়ার জিয়াও দাবা খেলেন। তিনি এখন ফিদে মাস্টার। বাবা-পুত্র একসঙ্গেই খেলছিলেন চলমান জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। বাবা-পুত্র একসঙ্গে দাবা অলিম্পিয়ার্ড খেলে অনন্য রেকর্ড গড়েছিলেন। এশিয়াতে কোনো পিতা-পুত্রের একসঙ্গে অম্পিয়ার্ডে খেলার নজির নেই। বিশ্বতেই এমন ঘটনা হাতে গোনা কয়েকটি।
নিজেকে কিংবদন্তি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া জিয়ার স্বপ্ন ছিল তার ছেলেকেও গ্র্যান্ডমাস্টার বানাবেন। ফিদেমাস্টার তাহসিন হয়তো একদিন বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন। তখন জিয়াউর রহমান থাকবেন অন্তলোকে।
জিয়া রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।