তামিম ইকবাল ভিডিও বার্তায় অভিযোগ করেন, উচ্চ পর্যায়ের কেউ একজন তাকে ফোন করে প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রথম ম্যাচ না খেলতে। আর খেলতে হলে, তাকে মিডল অর্ডারে খেলতে হবে। এ কথা শুনে ফোনদাতা ব্যক্তির ওপর ক্ষেপে গিয়েছিলেন বলে নিজেই জানিয়েছিলেন তামিম ইকবাল।
তিনি নিজেই বলেছিলেন, ‘আমি ১৭ বছর পর এক পজিশনে ব্যাটিং করছি, আমি কোনোদিন ৩-৪ নম্বরে ব্যাটিংই করিনি। এমন যদি হতো, আগেও করেছি, তাহলে একটা কথা ছিল। স্বাভাবিকভাবেই আমি কথাটা ভালোভাবে নেইনি। আমি উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম।’
বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে ক্রীড়া বিষয়ক বেসরকারি টিভি চ্যানেল টি-স্পোর্টসের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তামিমের বলা এ প্রসঙ্গটি টেনে এনে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আগে জানতে চাওয়া হয় বিষয়টি নিয়ে।
এ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন সাকিব আল হাসান। তিনি জানিয়ে দেন, তামিম ইকবালকে মিডল অর্ডারে খেলার প্রস্তাব যদি কেউ দিয়েও থাকেন, তাহলে সেটি দলের ভালোর জন্যই দেওয়া হয়েছে।
সাকিবের মতে, দলের প্রয়োজনে যে কারও যেকোনো পজিশনে খেলতে রাজি থাকা উচিত। কেউ এসবের বাইরে গিয়ে যদি ভেবে থাকেন, তাহলে তিনি দলের আগে নিজের কথা ভাবছেন।
তামিমের দল থেকে বাদ পড়ার পেছনে সাকিবের ‘হাত’ আছে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, ‘আমি অনূর্ধ্ব-১৫ থেকে খেলা শুরু করেছি বাংলাদেশের হয়ে, তখন থেকে দেখে আসছি, খুব ভালোভাবে যে প্লেয়ার দলের জন্য অবদান রাখছে, ভালো করছে, তাকে কখনো বাদ দেয়নি বাংলাদেশের কোনো দল। কোনো দিনও না। সিম্পল একটা উদাহরণ দিই- রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) ছিলেন না, হঠাৎ করে বিশ্বকাপ দলে আসলেন। হয়তো যে দুই ম্যাচে খেলেছেন, সেভাবে অবদান রাখতে পারেননি, সেভাবে। সুযোগ ছিল, পারফেক্ট স্টেজ ছিল ভালো করার ওনার জন্য। তবে ওনার যে নিবেদন, দলের প্রতি দায়বদ্ধতা, ইচ্ছা ছিল, সবাই দেখেছে সবকিছু। পার্থক্য আছে।’
এরপর তিনি যোগ করেন, ‘আমার তো দায়িত্ব না পুরো দল নির্বাচন করা। এটা হলে তো এশিয়া কাপের এক দিন আগে দল ঘোষণা করে দল দিতে পারত না। অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়। শুধু মাঠের পারফরম্যান্স না, মাঠ ও মাঠের বাইরে, ড্রেসিংরুম, আবহ—অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়। বলছি না যে আমি সম্পৃক্ত। কারণ, এগুলোতে এখন খুবই কম সম্পৃক্ত।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে তামিমকে না খেলানো কিংবা খেললে মিডল অর্ডারে নেমে ব্যাট করার যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তাতে দোষের কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না সাকিব। তিনি বলেন, ‘আমি যেটা বললাম, আলোচনাই হয়নি এটা নিয়ে আমার সঙ্গে। কেউ যদি বলে থাকে, সেটা অথোরাইজড কেউ। আগে থেকে আলাপ করে রাখতে চেয়েছিল, যাতে দুই পক্ষের জন্যই ভালো হয়। এতে খারাপের কিছু দেখি না। খারাপের জন্য তো বলবে না। আমি নিশ্চিত, কেউ যদি বলে থাকে, দলের কথা চিন্তা করেই বলেছে যে- “ওকে, ঠিক আছে, এমন কম্বিনেশন যদি করি! এ রকম বানালে কী হতো।” অনেক থাকে এমন। ম্যাচকে কেন্দ্র করে অনেক কিছু হয়। সে হিসাবে চিন্তা করে আগে থেকে পরিষ্কার করে রাখতে চায়, (তাহলে) আলোচনা দোষের কিছু না। নাকি প্রস্তাবই দেওয়া যাবে না? একজনকে বলা হবে, “যে যা ইচ্ছা তা-ই করো।” দল আগে না ব্যক্তি আগে?’
সাকিব এখানে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার উদাহরণ টেনেছেন। একই সঙ্গে তামিমের আচরণকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, ‘এ রকম প্রস্তাবে কি দোষের কিছু আছে, নাকি এ রকম প্রস্তাবই দেওয়া যাবে না? দল আগে, নাকি কোনো ব্যক্তি আগে? রোহিতের (শর্মা) মতো ক্রিকেটার নাম্বার সেভেন থেকে ওপেনিং পর্যন্ত খেলে ১০ হাজার রান করে ফেলেছে। মাঝে মাঝে সে-ও যদি তিন–চারে খেলে, ব্যাটিংয়ে না নামে, খুব একটা কি সমস্যা হয়? এটা আসলে আমার কাছে মনে হয়, একদম বাচ্চা মানুষের মতো, “আমার ব্যাট আমি খেলব। আর কেউ খেলতে পারবে না।”’
তামিম টিম ম্যান কি না- সে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, ‘দলের প্রয়োজনে যে কারও যেকোনো জায়গায় খেলা উচিত। টিম ফার্স্ট। কেউ ১০০-২০০ করলো; কিন্তু দল হারল, তাতে কিছু যায় আসে না। ব্যক্তিগত অর্জন দিয়ে কী করবেন আপনি আসলে? আপনি শুধু নিজের নাম কামাবেন? তাহলে কী? ইউ আর নট থিঙ্কিং অ্যাবাউট দ্য টিম, ইউ আর নট থিঙ্কিং অ্যাবাউট দ্য টিম অ্যাট অল…। মানুষ এই পয়েন্টগুলাই বোঝে না। যখন দেখলেন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, কেন দেওয়া হয়েছে? হয়তো দলের ভালো হবে। অবশ্যই আলোচনা আছে যে না আমি পারব, আমি নিজের সেরাটা দেব। তাহলে আপনি টিমম্যান। না হলে আপনি টিমম্যান না। নিজের রেকর্ড, সাফল্য, খ্যাতির জন্য খেলছেন।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।