সিলেট টেস্ট স্পিনবান্ধব উইকেটে হতে যাচ্ছে এমন আভাস মিলছিল দুই দলে স্পিনারদের ছড়াছড়ি দেখেই। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে এখন পর্যন্ত উইকেটের পতন হয়েছে ১৮টি। যার মধ্যে ১৪ উইকেটই তুলে নিয়েছেন স্পিনাররা। বাংলাদেশের বিপক্ষে ত্রাস ছড়ানো নিউজিল্যান্ডের পার্ট-টাইমার গ্লেন ফিলিপসের চার উইকেটের পর দ্বিতীয় দিনে আজ সমান চার উইকেট তুলে নিয়ে বদলা নিলেন টাইগার স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তার বোলিং নৈপুণ্যে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে লিডের আশা স্বাগতিকদের।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩১০ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৬৬ রান তুলেছে সফরকারীরা। বিরুদ্ধ কন্ডিশনে বাকি ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার বিপরীতে একপ্রান্ত আগলে রেখে অনবদ্য সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন সাবেক কিউই অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন। এ ছাড়া চলিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস রয়েছে গ্লেন ফিলিপস ও ড্যারিল মিচেলের।
বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে ৩০ ওভার বল করে ৭ মেইডেনে ৮৯ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন তাইজুল। এ ছাড়া একটি করে উইকেট দখলে নিয়েছেন বাকি চার বোলার শরিফুল, মিরাজ, নাইম ও মুমিনুল।
৪৪ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিনে ব্যাট করতে নামবেন দুই অপরাজিত ব্যাটার কাইল জেমিসন (৭) ও টিম সাউদি (১)। অবশ্য দিনের নির্ধারিত ৯০ ওভার খেলা মাঠে গড়ায়নি। আলোকস্বল্পতার কারণে ৮৪ ওভার পর্যন্ত খেলা হয়েছে। এর আগে গতকালও ৮৫ ওভারের বেশি বল গড়ায়নি।
এর আগে সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় দিনের প্রথম বলেই বাংলাদেশের শেষ উইকেটের পতন হয়। আগের দিন ১৩ রানে অপরাজিত থাকা শরিফুল ইসলামকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশ ইনিংসের ইতি টানেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক পেসার টিম সাউদি। ৮ রানে অপরাজিত থাকেন তাইজুল ইসলাম। আগের দিনে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩১০ রান করা বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে আর কোনো রান যোগ করতে পারেনি।
জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে সফরকারী দুই ওপেনার টম ল্যাথাম এবং ডেভন কনওয়ে শুরুটা করেছিলেন ধীরলয়ে। সিলেটের স্পিনিং উইকেটে ভালোই এগোচ্ছিলেন দুজন। তবে সেটা বেশিক্ষণের জন্য স্থায়ী হয়নি। ১৩তম ওভারে প্রথম বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন তাইজুল ইসলাম। টম ল্যাথাম সুইপ করতে চেয়েছিলেন। তবে সেটা ব্যাটে-বলে হয়নি। ফাইন লেগে ক্যাচ নেন নাঈম হাসান।
১৬তম ওভারে নিউজিল্যান্ড শিবিরে দ্বিতীয় আঘাত হানেন আরেক স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ডেভন কনওয়েকে ১২ রানে বিদায় দেন মিরাজ। ৪৪ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। দ্রুত দুই উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে উঠছিলেন কেন উইলিয়ামসন ও হেনরি নিকোলস।
অবশ্য মধ্যাহ্ন বিরতির পর নিকোলসকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি পেসার শরিফুল। দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে নিয়েই জুটি ভাঙলেন শরিফুল ইসলাম। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মারতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন হেনরি নিকোলস। ৪২ বলে ১৯ রান করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তার বিদায়ে ভাঙে কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে গড়া ৯৪ বলে ৫৪ রানের জুটি।
তিন উইকেট হারানোর পর ড্যারিল মিচেলকে সঙ্গে নিয়ে নতুন করে এগোচ্ছিলেন উইলিয়ামসন। দুজনের চতুর্থ উইকেট জুটির রানও পঞ্চাশ ছাড়ায়। পরে মিচেলকে ফিরিয়ে জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন তাইজুল। অফ স্টাম্পের বাইরের ঝুলিয়ে দেওয়া বল বেরিয়ে এসে মারতে চেয়েছিলেন মিচেল। কিন্তু ব্যাটে ছোঁয়াতে পারেননি। উইকেটের পেছনে বল ধরেই বেলস ফেলে দেন সোহান। ৪১ রান করে ফিরেছেন মিচেল।
বিরুদ্ধ কন্ডিশনে ব্যাট হাতে খেললেন লড়াকু এক ইনিংস। ক্যারিয়ারের ২৯ তম সেঞ্চুরি হাঁকালেন কেইন উইলিয়ামসন। ছবি-সংগৃহীত
অবশ্য মাত্র ৪ রানে থাকা অবস্থায় মিচেলকে সাজঘরে পাঠানোর দারুণ সুযোগ মিস করেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের ৩৫ তম ওভারে শরিফুল ইসলামের অফ স্টাম্পের বাইরে বল মিচেলের ব্যাটের কানা ঘেঁষে চলে যায় উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে।জয়-সোহানরা আবেদন করেছিলেন। যদিও তেমন জোরালো আবেদন ছিল না। কিন্তু আম্পায়ার সাড়া দেননি তাতে। টাইগার অধিনায়ক শান্তও আর রিভিউ নেননি। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, মিচেলের ব্যাটের কানা ছুঁয়েছে ওই বল। অর্থাৎ রিভিউ নিলে সাফল্য পেত বাংলাদেশ।
মিচেলের পর ক্রিজে নামা টম ব্লান্ডেলকে অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে দেননি নাইম। কট বিহাইন্ড হওয়ার আগে ২৩ বলে ৬ রান করেন উইকেটকিপার এই ব্যাটার। এরপর ফিলিপসকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে আবারও পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়েন উইলিয়ামসন। এক ইনিংসে তৃতীয় পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটির অংশ হলেন উইলিয়ামসন।
উইলিয়ামসন তখন সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে, সেসময় ফিলিপসের সঙ্গে তার জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন মুমিনুল। এই উইকেটটিতে শান্তর অবদানও কম নয়। প্রথম স্লিপে অনেকটা নিচু হয়ে দারুণ ক্যাচ নেন টাইগার অধিনায়ক। অবশ্য ৪২ রানে গ্লেন ফিলিপস ফিরলেও তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন উইলিয়ামসন।
বাংলাদেশি ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় অন্তত দুইবার নিশ্চিত জীবন পেয়েছিলেন। নতুন জীবন পেয়ে কাজে লাগাতে ভুললেন না বাংলাদেশকে অনেকবার ভোগানো কিউই এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। স্পিনারবান্ধব পিচে বাকি ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার বিপরীতে একপ্রান্ত আগলে রেখে ছুঁলেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। ১৮৯ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৯ তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন তিনি। তাইজুলের তৃতীয় শিকার হওয়ার আগে করেছেন ২০৫ বলে ১০৪ রান। এরপর শূন্য রানে ইশ সোধিকে ফিরিয়ে চতুর্থ উইকেট পূর্ণ করেন তাইজুল।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।