নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এর আগে একটিমাত্র টেস্ট জিতেছিলো বাংলাদেশ। ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে জয় ছিল না। নেপিয়ারে আগের ম্যাচেই ওয়ানডে ইতিহাসে কিউইদের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে প্রথম জয়ের স্বাদ নিতে পেরেছিলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এবার টি-টোয়েন্টিতেও সেই অপেক্ষার অবসান হলো।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ। কিউইদের মাটিতে এখন আর কোনো ফরম্যাটেই স্বাগতিকরা অজেয় নয়। তিন ফরম্যাটেই তাদেরকে হারানোর স্বাদ নিয়েছে টাইগাররা।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ডের ছুঁড়ে দেয়া ১৩৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৮ বল হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় টাইগাররা। ৩৬ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন ওপেনার লিটন দাস। শেষ মুহূর্তে ১৬ বলে ১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন মেহেদী হাসান।
নেপিয়ারে আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা। একই সঙ্গে টস জিতে কিউইদের ব্যাট করতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রানের বেশি করতে পারেনি কিউইরা। জিমি নিশাম ৪৮ রান না করলে এই স্কোর আরও অনেক ছোট হতো।
১৩৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর ১৩ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে আউট হন রনি তালুকদার। ৭ বলে ১০ রান করেন তিনি। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত লিটন দাসের সঙ্গে ২৫ রানের জুটি গড়ে আউট হন ব্যক্তিগত ১৯ রানে। ১৪ বল খেলেন তিনি। সৌম্য সরকার ঝড় তোলার চেষ্টা করেছিলেন। ১৫ বলে খেলেছিলেন ২২ রানের ইনিংস। কিন্তু বেন সিয়ার্সের বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে যান।
তাওহিদ হৃদয় ব্যাট করতে নেমে কিছুটা সম্ভাবনা জাগালেও ১৮ বলে ১৯ রান করে আউট হয়ে যান মিচেল সান্তনারের বলে। আফিফ হোসেন মাঠে নেমে দাঁড়াতেই পারেননি। ৬ বলে ১ রান করে আউট হয়ে যান তিনি।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকলে শঙ্কায় পড়ে যায় বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা। শেষ পর্যন্ত লিটন দাস আর শেখ মেহেদী হাসান মিলে বাংলাদেশকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন।
৩৬ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন লিটন। মেহেদী হাসান ১৯ বলে ১ বাউন্ডারি এবং ১ ছক্কায় করেন ১৯ রান। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও ওঠে তার হাতে।
১৩৪ রানে নিউজিল্যান্ডকে বেঁধে রাখলো বাংলাদেশ
টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেয়ার যথার্থতা প্রমাণ করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে বেধে রাখতে পারলেন ৯ উইকেটে ১৩৪ রানে। জয়ের জন্য ১৩৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামবে বাংলাদেশ।
ওয়ানডে সিরিজের শেষ ওয়ানডের মতোই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের প্রায় সব বোলার কিউইদের কম রানে বেঁধে রাখতে ভুমিকা রাখেন। সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন পেসার শরিফুল ইসলাম। মেহেদী হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান নেন ২টি করে উইকেট। তানজিম সাকিব এবং রিশাদ হাসান নেন ১টি করে উইকেট। শেষ দিকে কয়েকটি ক্যাচ মিস এবং মিস ফিল্ডিং হয়েছিলো। না হয় নিউজিল্যান্ডের রান হয়তো আরও কম হতে পারতো।
টস হেরে ব্যাট করতে নামার পর প্রথমে মেহেদী হাসান, পরে শরিফুলের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ১ রানে ৩ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। এরপর ২০ রানের মাথায় হারায় চতুর্থ উইকেট। এই দুই বোলারের সঙ্গে উইকেট নেয়ার উৎসবে মেতেছেন রিশাদ হাসানও। ৫০ রানেই ৫টি উইকেট হারিয়ে ফেলে কিউইরা।
মাঝে ধারাবাহিকতা ভেঙে দেন জেমস (জিমি) নিশাম। ২৯ বলে ৪৮ রান করে বসেন তিনি। তবে হাফ সেঞ্চুরির জন্য মোস্তাফিজকে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন কিউই এই ব্যাটার। বোলিংয়ের শুরুতেই শেখ মেহেদী হাসানকে দিয়ে ওপেন করালেন অধিনায়ক শান্ত। তার আস্থার দারুণ প্রতিদান দিলেন মেহেদী। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই টিম সেইফার্টকে বোল্ড করে দিলেন তিনি। ১ রানে প্রথম উইকেটের পতন ঘটলো।
দ্বিতীয় ওভার করতে আসেন শরিফুল ইসলাম। এই ওভারে ফিন অ্যালেন এবং গ্লেন ফিলিপসকে ফিরিয়ে দেন শরিফুল। ১ রানে বিদায় নিলেন কিউইদের সেরা ৩ ব্যাটার।
প্রথম ওভারের ৪র্থ বলে স্লোয়ার বলে বিভ্রান্ত হলেন টিম সেইফার্ট। হালকা নিচু হয়ে যাওয়া বলটি মিস করলেন তিনি। অফ স্ট্যাম্প ভেঙে দিলো মেহেদীর বল। ৩ বলে কোনো রান না করেই বোল্ড হয়ে গেলেন তিনি।
পরের ওভারের দ্বিতীয় বলেই ফিন অ্যালেন ক্যাচ দিলেন স্লিপে। শরিফুলের লেন্থ বলে খোঁচা দিতে গিয়ে ক্যাচ তুললেন প্রথম স্লিপে। সৌম্য সরকার সেই ক্যাচ ধরেন। পরের বলেই গ্লেন ফিলিপসের উইকেট তুলে নেন শরিফুল। এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। পরে ডিআরএস নিয়ে ফিলিপসকে সাজঘরে পাঠায় বাংলাদেশ।
৫ম ওভারে ড্যারিল মিচেল বোল্ড হয়ে গেলেন মেহেদী হাসানের বলে। ১৫ বলে ১৪ রান করে আউট হলেন আইপিএলে সাড়ে ১৪ কোটির ব্যাটার।
উইকেট নিতে পারেননি কেবল অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিব। তবে বোলিংয়ে এসেই উইকেট নিলেন লেগ স্পিনার রিশাদ হাসান। ১০ম ওভারেই তিনি ফিরিয়ে দেন মার্ক চাপম্যানকে। ১০ম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারতে গিয়ে তানজিম সাকিবের হাতে ধরা পড়েন চাপম্যান।
চাপম্যান আউট হওয়ার পর ৪১ রানের একটি জুটি গড়ে তোলেন জিমি নিশাম এবং মিচেল সান্তনার। তবে শরিফুলের বলে সৌম্যর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান কিউই অধিনায়ক। যদিও ক্যাচটি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছিলো। টিমি আম্পায়ার বারবার রিপ্লে দেখে আউটের সিদ্ধান্ত দেন। ২২ বলে ২৩ রান করেন সান্তনার।
দলীয় ১১০ রানের মাথায় আউট হন নিশাম। এরপর টিম সাউদি ৮ রানে এবং ইশ সোধি আউট হন ২ রান করে। ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন অ্যাডাম মিলনে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।