শক্তিশালী একটি টি-টোয়েন্টি দল গড়ায় অঙ্গীকার করেছিলেন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়ে। কারণ, এই একটি সংস্করণেই সবচেয়ে খারাপ খেলে বাংলাদেশ। বাকি দুই সংস্করণে বাংলাদেশ যে বিশ্বমানের দল হয়ে গেছে, তা নয়। তবে উন্নতির ধারায় রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সেদিক থেকে বলা যায়, আজ থেকে চন্ডিকার লড়াই শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। এই অভিযানের প্রথম প্রতিপক্ষ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। স্বাগতিকরা যে দলের কাছে এক দিনের ক্রিকেট সিরিজটি হেরেছে ২-১ ব্যবধানে। যদিও ইংলিশ চ্যাম্পিয়ন দলের অনেক সদস্যই এই সিরিজে নেই। অপেক্ষাকৃত কম শক্তির দলের বিপক্ষে সিরিজ হওয়ায় কয়েকজন নতুন ক্রিকেটারকে সুযোগ করে দিচ্ছে তারা।
বাংলাদেশও টি-টোয়েন্টি দলে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। সিনিয়র ক্রিকেটার বলতে একমাত্র সাকিব আল হাসান। লিটন কুমার দাস অভিজ্ঞ হলেও বাকিরা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ছাপ ফেলার মতো পারফরম্যান্স করতে পারেননি। তৌহিদ হৃদয়ের মতো রনি তালুকদার, শামিম হোসেন পাটোয়ারীও জাতীয় দলে অনভিজ্ঞ। রনি একটি আর শামিম ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। সেদিক থেকে বলতে গেলে তরুণ একটি দল নিয়ে ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন শুরু হচ্ছে আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে।
এবারের টি-টোয়েন্টি দলটা গড়া হয়েছে মূলত বিপিএলের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে। তিন ব্যাটার– রনি তালুকদার, তৌহিদ হৃদয়, শামিম হোসেন; পেসার রেজাউর রহমান রাজা ও বাঁহাতি স্পিনার তানভির আহমেদ বিপিএলে ভালো খেলে জাতীয় দলে জায়গা করে নেন। তাঁদের আসল পরীক্ষা দেওয়া শুরু বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে সিরিজে। ২০২৪ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত কে বা কারা টিকে থাকবেন তারই মহড়া দিতে ক্রিকেটাররাও প্রস্তুত। গতকাল চন্ডিকা যেমন বললেন, ‘২০২৪ সালের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হলো। এই সময়ের ভেতরে ব্রিজের নিচ দিয়ে অনেক জল গড়াবে। আমাদের কি রিসোর্স আছে, তারাই আরেকটি পর্যবেক্ষণ শুরু। এর পর খেলোয়াড়দের কোথায় উন্নতি করতে হবে এবং সামর্থ্য দিয়ে কীভাবে খেলতে পারে তা দেখা হবে।’ বাংলাদেশ এক দিনের ক্রিকেটের মতো টি-টোয়েন্টিতে অতটা ভালো করতে পারেনি। বিশ্বকাপ বা দ্বিপক্ষীয় সিরিজ কোথাও বড় দলের মতো খেলার অভিজ্ঞতা নেই। সেই দলটিই সিরিজ খেলতে নামছে ইংল্যান্ডের মতো চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে। প্রত্যাশার লাগামটা তাই টেনে রাখাই ভালো। একে তো এ দুই দলের সামর্থ্যে পার্থক্য রয়েছে, তার ওপর সেভাবে টি-টোয়েন্টিও খেলেনি। ২০ ওভারের ক্রিকেটে একটি মাত্র ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড। ২০২১ সালের বিশ্বকাপের সে ম্যাচে বড় পরাজয় জুটেছিল আবুধাবিতে। গত ১৫-১৬ বছরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বে জনপ্রিয়তা পেলেও এ দু’দল দ্বিপক্ষীয় কোনো সিরিজ খেলেনি। ১৬ বছর পর তিন ম্যাচের একটি সিরিজ খেলছে, যেখানে ফলাফলের চেয়েও স্বাগতিকদের কাছে গুরুত্ব পাবে প্রসেস।
চট্টগ্রামের যে পিচে ওয়ানডে ম্যাচ হয়েছে, সেখানেই হবে প্রথম টি২০। স্লো এবং লো উইকেটে টি২০ ম্যাচ খেলার অর্থ হলো, লো স্কোরিং ম্যাচ। দেশে খেলার সুবিধা কাজে লাগাতেই এ উদ্যোগ। এ ধরনের উইকেটে স্পিনারদের জন্য সুবিধা থাকে। এক দিনের ম্যাচের মতো টি-টোয়েন্টিতেও তিনজন স্পিনার রেখে বোলিং ইউনিট সাজাতে পারেন কোচ। সাকিবের সঙ্গে নাসুম আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজকে বেছে নেওয়া হতে পারে। পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে তাসকিন আহমেদ বা হাসান মাহমুদকে নেওয়া হতে পারে। কারণ, চট্টগ্রামের স্লো ও লো উইকেটে স্লোয়ার, ইয়র্কার, ব্লক হোল ডেলিভারি কার্যকর। হাসান মাহমুদ ও তাসকিনের বলে গতি এবং বৈচিত্র্য দুই রয়েছে। ইংলিশরাও বুঝে গেছেন চট্টগ্রামে কীভাবে বল করতে হবে। ক্রিস ওকস সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হিসেবে বলেন, স্লোয়ার এবং লো ডেলিভারি বেশি কার্যকর হবে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মর্যাদা ধরে রাখতেই ইংল্যান্ড রণকৌশল সাজাবে। কোনো সন্দেহ নেই, ম্যাচ জিততে অলআউট ক্রিকেট খেলবে সফরকারীরা। স্বাগতিকদের ভিশন এবং মিশনও তো তাই– জিততে চাই, জিততে চাই। ১৪৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ৪৯টিতে জয় পাওয়া বাংলাদেশ দলের কাছে এটি একটি স্বাভাবিক চাওয়া। কারণ, দেশের মাটিতে ওয়ানডের মতো টি২০ সংস্করণেও ধারাবাহিক হয়ে ওঠার একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে সাকিবদের সামনে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।