পুরো ম্যাচ একচেটিয়া খেলেও গোলের দেখা পাচ্ছিলো না আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসিদের সামনে যেন চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কোপার ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক, চিলির গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভো। চিলিও ৩বার গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিলো। ৩টিই নিশ্চিত গোল হওয়ার মতো। সেখান থেকে আর্জেন্টিনাকে বাঁচান গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
তবে, লিওনেল মেসিদের আক্রমণের সয়লাব শেষ পর্যন্ত রুখতে পারেননি ক্লদিও ব্রাভো। ৮৮তম মিনিটে মেসির নেয়া কর্নার কিক থেকে ভেসে আসা বল ক্লিয়ার হলেও জটলার ভেতরে ফিরতি বল বাঁ-দিকে ফাঁকায় দাাঁড়ানো পেয়ে যান লওতারো মার্টিনেজ। ডান পায়ের দারুণ এক শটে চিলির জালে জড়িয়ে দেন পরিবর্তিত হিসেবে মাঠে নামা এই ফুটবলার।
এই এক গোলের সুবাধেই চিলিকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে কোপা আমেরিকার `এ‘ গ্রুপ থেকে সবার আগে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের শুরু থেকেই চিলির জালে প্রভাব বিস্তার করে খেলে যাচ্ছিলো আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধ তো বলতে গেলে এককভাবেই খেলেছে মেসিরা। তাদের আক্রমণ ঠেকানোই যেন কাজ ছিল চিলির। এই অর্ধে চিলির জালে ১৩ বার শট নিয়েছিলো লিওনেল মেসি অ্যান্ড কোং। এর মধ্যে ৩টি শট ছিল গোলপোস্ট লক্ষ্যে।
পুরো খেলায় আর্জেন্টিনা মোট ২২টি শট নিয়েছে চিলির পোস্টে। এর মধ্যে ৯টি ছিল জালে। যার ৮টিই অসাধারণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন ক্লদিও ব্রাভো। কিন্তু ৮৮তম মিনিটে শুধু একটি শট ঠেকাতে পারেননি। যার ফলে পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদেরকে।
একের পর এক গোল মিস করায় একটা সময় মনে হচ্ছিলো গতকালের ব্রাজিল-কোস্টারিকা ম্যাচের কথা। ১৯টি শট নিয়ে ব্রাজিল একটি গোলও দিতে পারেনি। আর্জেন্টিনা গোলের দেখা পেয়েছে ২১তম শটে।
জিততে পারতো চিলিও। যে তিনটি শট তারা আর্জেন্টিনার গোল লক্ষ্যে নিয়েছিলো, এমিলিয়ানো মার্টিনেজ অসাধারণ দক্ষতায় সেগুলো রুখে দেন। না হয় পরাজয়ের কাতারে মেসিরাও থাকতে পারতো। যদিও ৭২তম মিনিটের আগে আর্জেন্টিনার পোস্ট লক্ষ্যে কোনো শটই নিতে পারেনি চিলি। ম্যাচে এটা ছিল চিলির ২১তম শট। যদিও রেফারি তিন মিনিট অপেক্ষা করেন, ভিএআরের মাধ্যমে গোল চেক করতে। সবশেষে বৈধতা দেন তিনি গোলের।
৮৭তম মিনিটে পরপর দুটি কর্নার কিক নেন মেসি। প্রথম শটটিও ছিল একেবারে পোস্টে। পাঞ্চ করে কোনোমতে সেই শটকে পোস্টের ওপর দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেন ব্রাভো। কিন্তু আবারও কর্নার। এক মিনিটের ব্যবধানে কর্নার শট নেন মেসি। এই শট থেকে আর বাঁচতে পারেনি চিলি।
একদিন আগেই ৩৭তম জন্মদিন পালন করেন মেসি। সতীর্থরাও তাই মরিয়া হয়েছিলো মেসিকে গোল উপহার দিতে। ম্যাচের শুরু থেকেই মেসিই ছিলেন আর্জেন্টিনার আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু। ৩৬ মিনিটে দারুণ একটি শট নিয়েছিলেন তিনি। এনজো ফার্নান্দেজের পাস থেকে পেয়ে মেসির নেয়া বাঁ-পায়ের শট বক্সের বাইরে চলে যায়। ২ মিনিট পরই অবশ্য ডান উরুতে হালকা চোট পান তিনি। মাঠের বাইরে গিয়ে হালকা চিকিৎসা নিতে হয় মেসিকে।
তার আগেই ২২ মিনিটে হুলিয়ান আলভারেজের শট ঠেকিয়ে দেন ক্লদিও ব্রাভো। ২৭ মিনিটে নিকো গঞ্জালেজের পাস থেকে বল পেয়ে এনজো ফার্নান্দেজের ডান পায়ের শট ঠেকিয়ে দেন ব্রাভো। এরমধ্যে হুলিয়ান আলভারেজ, রদ্রিগো ডি পল, নাহুয়েল মোলিনারা একের পর এক গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন।
৫০তম মিনিটে নাহুয়েল মোলিনা মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ এক শট নেন চিলির পোস্ট লক্ষ্যে। এবারও ক্লদিও ব্রাভো দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে গোল হলো না। ৭ মিনিট পর অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার আরও একবার শট নেন চিলির গোললক্ষ্যে। এবারও সেই শট ঠেকিয়ে দেন ব্রাভো। ৬১ মিনিটে মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে বাম পায়ের শট নেন নিকো গঞ্জালেজ। এবারও ঠেকিয়ে দেন ব্রাভো।
৭১তম মিনিটে হুলিয়ান আলভারেজকে তুলে লওতারো মার্টিনেজকে মাঠে নামান কোচ লিওনেল স্কালোনি। একই সময় নিকো গঞ্জালেজের পরিবর্তে মাঠে নামেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া।
৭২তম মিনিটে চিলি প্রথম শট নেয় আর্জেন্টিনার গোল লক্ষ্যে। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রদ্রিগো এচেভেরিয়ার নেওয়া প্রথম শটেই গোল হতে পারত। পাল্টা আক্রমণ থেকে বক্সের বাইরে ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে তার নেওয়া শট ডাইভ দিয়ে ঠেকান মার্তিনেজ। ৩ মিনিট পর বক্সের মাথা থেকে আবারও এচেভেরিয়ার শট এবং এবারও ত্রাতা সেই মার্তিনেজ!
অবশেষে ৮৮ মিনিটে এলো কাঙ্খিত গোলের দেখা। এরপর যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে আনহেল দি মারিয়ার পাস থেকে অবশ্য অবিশ্বাস্যভাবে একটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন মার্তিনেজ। ডান প্রান্তের ফাঁকা জায়গা দিয়ে বল নিয়ে টান দেওয়া ডি মারিয়া বক্সে ঢুকে ক্রস বাড়ালেও ব্রাভোকে ফাঁকি দিতে পারেননি মার্তিনেজ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।