দীর্ঘদিন ধরে চোটে ভুগছেন, চিকিৎসাও চলছে। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হতে পারছেন না জাতীয় নারী ফুটবল দলের সাফজয়ী ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার। সদ্য শেষ হওয়া মেয়েদের প্রিমিয়ার লিগে নাসরিন স্পোর্টস একাডেমির হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন কৃষ্ণা। শিরোপা তুলে ধরেছে তার দল। তবে জাতীয় দলে খেলার মতো যথেষ্ট ফিট না তিনি। এতে করে চীনা তাইপের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের জন্য ঘোষিত বাংলাদেশ দলে তাকে রাখেননি ব্রিটিশ কোচ পিটার বার্টলার।
এরপরই তার চিকিৎসা নিয়ে বাফুফে অবহেলা করছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাতে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন নারী ফুটবলে দেশের অন্যতম সেরা এই স্ট্রাইকার। তবে একদিন পর শুক্রবার (৩১ মে) কৃষ্ণার এমন অভিযোগ সত্যি নয় বলে জানিয়েছেন বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন চিকিৎসার অবহেলা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় কৃষ্ণা রানিকে কারণ দর্শাোর নোটিশ দেবে বাফুফে।
কৃষ্ণা রানী সরকার ফেসবুকে নিজের চোট ও তার চিকিৎসা করানো নিয়ে বাফুফের অবহেলার কথা জানাতে গিয়ে লিখেন, প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে। পা আগের থেকে ভালো, কিন্তু এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়ে উঠতে পারিনি। প্র্যাকটিস করলেই ব্যথা হয়। বাফুফের ফিজিও দিয়ে আমার চিকিৎসা চলছে। সবাই জানে ইনজুরিটা অনেক জটিল। ব্যথা নিয়েই প্র্যাকটিস করছি। দেশে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফিজিও দেবাশীষ চৌধুরী স্যারকে দেখিয়েছিলাম। উনি প্রায় আমাকে অনেক দিন দেখেন, যখন ব্যথা কমছিল না। স্যার বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়া-ভারত গিয়ে চিকিৎসা করাতে। কিন্তু যখন আমি বাফুফেকে জানাই, তারা বলেছিল আর কিছুদিন দেশে ডাক্তার দেখাতে। আমি অনেকদিন তাদের বলেছি ভারতে যাওয়ার কথা। কিন্তু ওনারা আমার কথায় কোনো গুরুত্ব দেননি। আজ পর্যন্ত ব্যথা নিয়ে প্র্যাকটিস করছি।
স্ট্যাটাসে কৃষ্ণা আরও লিখেন, ২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ দলে সুযোগ পাই এবং ২০১৪ সালে সিনিয়র জাতীয় দলে সুযোগ পাই, সেখান থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কখনো কোনো দলের বাইরে থাকতে হয়নি। প্রায় ১০ বছর একটানা জাতীয় দলের হয়ে খেলেছি। টুকটাক ইনজুরিতে পড়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে এত বড় ইনজুরিতে পড়ব, কখনো ভাবিনি। অনেক দিন রেস্টে থাকার পর আর ভালো লাগছিল না এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিলাম। তাই ব্যথা নিয়ে প্র্যাকটিস চালিয়ে যাচ্ছি। চীনে যখন এশিয়ান গেমস খেলতে যাই, তিনটা ম্যাচ বেঞ্চে বসে কাটিয়েছি। ব্যাক টু ব্যাক দুটা টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে গেলাম। একজন প্লেয়ার হিসেবে এটা মেনে নেয়া খুব দুঃখজনক। কষ্ট একটাই, কখনো কোনো টিমমেট, প্লেয়ার বা কোচকে বলতে শুনলাম না কৃষ্ণা ইনজুরিতে, তাকে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করানো হোক। কারও কোনো মাথাব্যথাই নেই। ১০ বছরের পরিশ্রম এক নিমেষে শেষ। অনেক প্লেয়ারকে দেখেছি এভাবে হারিয়ে যেতে। মনে হয় সেই দিনটা আর বেশি দিন নেই কৃষ্ণার জন্য। সবাই আমার জন্য আশীর্বাদ এবং দোয়া করবেন। যাতে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ি। আবার আগের মতো মাঠে ফিরতে পারি।
কৃষ্ণার এমন স্ট্যাটাসের পর সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। কৃষ্ণার স্ট্যাটাসের একদিন পর শুক্রবার (৩১ মে) বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হতে পারে উল্লেখ করে জানান, কোনো ইনজুরি আক্রান্ত খেলোয়াড়কে কিন্তু কন্টাক্টে রাখা হয় না, আমরা তাকে কন্টাক্টে রেখেছি। তারপর ৫০ হাজার টাকা করে বেতনও দিচ্ছি। আমার মনে হয় সে বোকার মতই একটা কাজ করেছে। আপনারা জানেন ফুটবল ফেডারেশন ওইভাবে সলভেন্ট না। তারপরও আমাদের সামর্থের ভেতর থেকে আমরা ভারতের চিকিৎসা করার মতো যেটা করার সেটা আমাদের জিএস ইতোমধ্যে তাকে বলেছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।