নারী ক্রিকেটার নুজহাত তানিয়া ও আলামিন দেওয়ান ওরফে আযানের পরিচয় হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। পরিচয়ের ১৭ দিন পর বিয়ে করেন তারা। তবে তানিয়া জানতেন না তার সঙ্গে প্রতারণা করতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন আলামিন। টার্গেট ছিল তানিয়া ও তার তিন বান্ধবীর ডলার, আইফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়া। সেই উদ্দেশ্য অনেকটা সফলও হয়েছিল। কিন্তু তার পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে দুই ক্রিকেটারের আইফোন ও সাড়ে তিন হাজার ডলার চুরির অভিযোগে মামলা করায়। দিনাজপুর থেকে গ্রেফতারের পর ঘটনার আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, আল আমিন দেওয়ান ওরফে আযান নারী ক্রিকেটার তানিয়ার স্বামী। আযান মূলত একজন প্রতারক। তার বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক নারীকে নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতারণার মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি।
গত ৩০ জানুয়ারি শেরেবাংলা থানায় একটি অভিযোগ করেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার স্বর্ণা আক্তার। তার অভিযোগের সূত্র ধরে আলামিনকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মঈন জানান, তানিয়া ও তিন নারী ক্রিকেটার পূর্ব রাজাবাজারের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। এরপর তানিয়ার সাথে পরিচয় হয় আলামিনের। ১২ দিন আগে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের পর আলামিন ও তানিয়া ওই ফ্ল্যাটের একটি রুমে থাকতেন। কিন্তু আলামিন যে চুরির মিশন নিয়ে বাসায় ঢুকেছেন তা জানতেন না চার নারী ক্রিকেটার। আলামিন নিজেকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার ফিল্ড অফিসার হিসেবে পরিচয় দিতেন। পাশাপাশি কাপড়ের বিজনেস করেন বলতেন। তিনি মাস্টার্স পাস করে ব্যবসাও করেন।
মঈন জানান, ১৭ দিনের পরিচয়ে তানিয়া আলামিনকে বিয়ে করেন। আর আলামিন বিয়ের পর থেকে সেই ফ্ল্যাটে থাকার সুবাদে সখ্যতা গড়ে ওঠে বাকি তিন ক্রিকেটারের সাথে। এরপর বিভিন্ন সময় ব্যবসার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ধার নেন। ২৯ জানুয়ারি তানিয়া ও স্বর্ণাসহ বাকিরা তেজকুনী পাড়া খেলাঘর মাঠে খেলতে যান। সুযোগ পেয়ে আলামিন তানিয়ার আইফোন, চেক, ভিসা কার্ড, স্বর্ণ ও নগদ ৬ হাজার টাকা নিয়ে মাঠে যান। সেখানে তাদের খেলার ভিডিও করার বাহানায় তানিয়া ও স্বর্ণার মোবাইল হাতে নেন। কয়েকটি ছবি তুলে তাদের দেখান। এরপর থেকে আলামিনকে আর খুঁজে না পেয়ে থানায় জিডি করেন স্বর্ণা।
যেভাবে সরানো হয়েছিল ডলার
র্যাবের মিডিয়া কর্মকর্তা জানান, বিয়ের পর তানিয়ার কাছে থাকা ডলার আলামিনকে রাখতে দেন। তিনি রুমের ড্রয়ারে সেই ডলার রাখেন। এরপর অল্প অল্প করে সেখান থেকে ডলার সরাতে থাকেন। আলামিন গা ঢাকা দেওয়ার পর তানিয়া ড্রয়ারে খুঁজে দেখেন তার ডলার নেই। পরে নারী ক্রিকেটাররা খোঁজ নিয়ে দেখেন তাদের ব্যাংক কার্ড ও চেকও সরিয়েছেন আলামিন।
একাধিক বিয়ে
আলামিন একাধিক বিয়ে করেছেন। তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে নারীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে তাদের প্রেমের ফাঁদে পেলেন। পরে তাদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কও করেন। একপর্যায়ে বিয়েও করেন তাদের।
ভারতে পালানোর চেষ্টা
র্যাব জানিয়েছে, নারী ক্রিকেটারদের দামি ফোন ডলারসহ বিভিন্ন জিনিস হাতিয়ে নেওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আলামিন। তিনি প্রথমে ঢাকা থেকে রংপুরে চলে যান। সেখানে একটি হোটেলে ১ রাত অবস্থান করেন। সেখান থেকে দিনাজপুর যান। রাতে দিনাজপুরে অবস্থান করে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি জামানোর পরিকল্পনা করেন তিনি। কিন্তু পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে র্যাব তাকে গ্রেফতার করে। এছাড়া আলামিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।