লিগ ওয়ানে নঁতেকে ৪-২ গোলে পরাজিত করে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান আরো শক্তিশালী করেছে পিএসজি। একই সাথে বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলর ফিরতি লেগের ম্যাচকে সামনে রেখে প্রস্তুতিটাও ভালভাবেই সেরে রাখলো প্যারিসের জায়ান্টরা। এই ম্যাচে স্টপেজ টাইমে দলের পক্ষে শেষ গোলটি করে ক্লাবের পক্ষে সর্বোচ্চ ২০১তম গোল করার মাইলফলক স্পর্শ করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।
গত সপ্তাহে মার্সেইর বিরুদ্ধে দুই গোল করে ফরাসি এই তরুণ উরুগুইয়ান তারকা এডিনসন কাভানির ২০০ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেছিল। কাল পার্ক ডি প্রিন্সেসে গোল করে তিনি কাভানিকে ছাড়িয়ে গেলেন।
শনিবার ম্যাচের শুরুতেই দুই গোলের লিড পায় স্বাগতিকরা। লিওনেল মেসির প্রথম গোলের পর জাওয়েন হাজামের আত্মঘাতি গোলে ১৭ মিনিটেই পিএসজি ২-০ গোলে এগিয়ে যায়। এরপর ৩৮ মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে দারুণভাবে লড়াইয়ে ফিরে আসে নঁতে। লুডোভিচ ব্লাস এক গোল দেবার পর ইগনাটিয়াস গানাগো সফরকারীদের সমতায় ফেরান। কিন্তু এমবাপ্পের এ্যাসিস্টে ডানিলো পেরেইরা ৬০ মিনিটে আবারো পিএসজিকে এগিয়ে দেন। এরপর স্টপেজ টাইমে এমবাপ্পে তার রেকর্ড গোলটি করেন।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে ২০১৭ সালে মোনাকো থেকে পিএসজিতে আসার পর ২৪৭ ম্যাচে এমবাপ্পে গোলের নতুন এই মাইলফলক স্পর্শ করছেন। কাভানি সাত বছর খেলে ২০২০ সালে ২৯৮ ম্যাচে আগের রেকর্ডটি গড়েছিলেন। ম্যাচ শেষে ক্লাবের হয় অনন্য এই রেকর্ডের জন্য ২৪ বছর বয়সী এমবাপ্পেকে ট্রফি প্রদান করা হয়।
কাল অধিনায়কে হিসেবে ম্যাচ শেষ করেছেন এমবাপ্পে। ম্যাচ শেষে ফরাসি এই তারকা বলেছেন, ‘ইতিহাস গড়ার জন্যই আমি খেলি। আমি সবসময়ই বলেছি ফ্রান্সের হয়ে আমি ইতিহাস রচনা করতে চাই, নিজ শহরের হয়ে ইতিহাস রচনা করতে চাই। সেটা আমি করে দেখিয়েছি। এটা সত্যিই অনন্য। কিন্তু এখনো অনেক কিছু করার বাকি আছে। আমার কাছে এই রেকর্ডগুলো সত্যিই বিশেষ কিছু। কেউ যদি আমাকে বলে অধিনায়ক আর্মব্যান্ড পড়ার সময়ই শুধুমাত্র আমি গোল করে রেকর্ড ভাঙ্গতে চাই, তবে সেটা আমি বিশ্বাস করিনা।’
দারুন এই জয়ে পিএসজি লিগ টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থাকা মার্সেইর থেকে ১১ পয়েন্ট এগিয়ে গেছে। বুধবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফিরতি লেগের ম্যাচ খেলার আগে এই আত্মবিশ্বাসটা জরুরী ছিল। বাভারিয়ানদের বিরুদ্ধে প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ১-০ গোলে পরাজিত হয়েছিল পিএসজি। ইউরোপে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছাতে না পারলে মৌসুমের শেষে আবারো হতাশায় পড়তে হবে প্যারিসের জায়ান্টদের।
ইনজুরিতে থাকা মরোক্কান তারকা আশরাফ হাকিমিকে পাক ডি প্রিন্সেসের স্ট্যান্ড থেকেই কাল ম্যাচটি উপভোগ করতে হয়েছে। নেইমারও কাল দর্শক হয়ে মাঠে এসেছিলেন। বায়ার্নের বিরুদ্ধেও ব্রাজিলিয়ান এই সুপারস্টার খেলতে পারছেন না। এদিকে পেশীর ইনজুরির কারনে পুরো মৌসুমের জন্যই মাঠের বাইরে চলে গেছেন সেন্টার-ব্যাক প্রিসনেল কিম্পেম্বে।
কালকের ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে কোচ ক্রিস্টোফে গাল্টিয়ার আরো দুই ডিফেন্ডারকে হারিয়েছেন। অধিনায়ক মারকুইনহোস ও অস্থায়ী রাইট-ব্যাক নোর্ডি মুকিয়েলে উভয়ই ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন।
ম্যাচ শুরুর আগে ফ্রান্সের কিংবদন্তী স্ট্রাইকার জাস্ট ফন্টেইনের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। ১৯৫৮ বিশ^কাপে ১৩ গোল করা ফন্টেইন গত বুধবার ৮৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। পিএসজির কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন ফন্টেইন। ১৯৭৪ সালে ফন্টেইনের অধীনে পিএসজি প্রথমবারের মত ফ্রেঞ্চ ফুটবলের শীর্ষ সারির লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছি।
ম্যাচের ১২ মিনিটে এগিয়ে যায় প্যারিসের জায়ান্টরা। নুনো মেনডেসের ডিফ্লেকটের লো ক্রস থেকে মেসি গোল করে পিএসজিকে এগিয়ে দেন। এবারের মৌসুমে এটি মেসির ১৩তম লিগ গোল। হাজামের আত্মঘাতি গোলটি নঁতের জন্য দূর্ভাগ্যই ছিল। কিন্তু ৩১ মিনিটে ব্লাসের গোলে গিয়ানলুইগি ডোনারুমা পরাস্ত হলে নঁতে নড়েচড়ে বসে। সাত মিনিট পর ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড গানাগোর হেডে সমতায় ফিরে নঁতে। এসময় পুরো স্টেডিয়াম নিস্তব্ধ হয়ে যায়। মাত্র ১৫ দিন আগে লিলির বিপক্ষে শেষ হোম ম্যাচটিতেও দুই গোলে এগিয়ে থেকে পিএসজি ৩-২ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল। পরে অবশ্য ৪-৩ গোলের স্বস্তিদায়ক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। ঐ ম্যাচেও জয়ের নায়ক ছিলেন এমবাপ্পে। কালও এমবাপ্পের এ্যাসিস্টে ডানিলোর গোলে ৬০ মিনিটে এগিয়ে যায় পিএসজি। এর কিছুক্ষন রেই মুকিয়েলেকে ফাউলের অপরাধে নঁতের বিরুদ্ধে পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি জারেমি স্টিনাট। কিন্তু ভিএআর প্রযুক্তিতে ধরা পড়ে ফাউলটি বক্সের সামান্য বাইরে সংঘটিত হয়েছে। ম্যাচের শেষটা যেন এমবাপ্পের জন্যই রাখা ছিল। স্টপেজ টাইমে গোল করে এমবাপ্পে শুধুমাত্র জয়ের ব্যবধানই বাড়াননি, ক্লাবের ইতিহাসে রেকর্ড বইয়ে নিজেকে আরো একবার অনন্য করে রাখলেন।
এর আগে দিনের শুরুতে লিলির সাথে ১-১ গোলে ড্র করে মার্সেইকে টপকে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসার সুযোগ হাতছাড়া করেছে লেন্স। লিলির হয়ে সমতাসূচক গোলটি করেছেন কানাডিয়ান তারকা জোনাথন ডেভিড।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।