ইংল্যান্ডের একি হাল! আগের ম্যাচে আফগনিস্তানের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারের পর শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্রেফ উড়ে গেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। মনে হয়েছে প্রোটিয়ারা যেন ইংলিশদের নিয়ে ছেলেখেলায় মেতেছে। এদিন মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে প্রোটিয়া ব্যাটারদের কাছে তুলোধুনো হওয়ার পর বোলারদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছে জস বাটলারের দল। শনিবার ২২৯ রানের হারে ৪ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালের অঙ্ক জটিল করে ফেলেছে ইংলিশরা। প্রোটিয়াদের এমন দারুণ জয়ে ব্যাটে বলে অবদান রেখে ম্যাচ সেরা হয়েছেন মার্কো ইয়ানসেন।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মিডল অর্ডারের সৌজন্যে রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। হাইনরিখ ক্লাসেনের সেঞ্চুরি ও রিজা হেনড্রিকস, মার্কো ইয়ানসেন, রাসি ফন ডার ডুসেনের ৩ হাফ সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে ৪০০ রানের লক্ষ্য দেয় তারা। আগের ম্যাচে আফগানদের সঙ্গে হেরে এমনিতেই ইংল্যান্ড চাপে ছিল। ৪০০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে সেই চাপে যেন ব্যাটিং লাইনআপ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লো।
ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে নতুন কৌশল ‘বাজবল’। টেস্ট হোক, টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে সবখানেই আক্রমণাত্মক ‘বাজবল’ ক্রিকেট দুনিয়ায় নতুন তরঙ্গ তুলেছে। কিন্তু শনিবার বড় লক্ষ্যে খেলতে গিয়ে ‘বাজবল’ তো দূরের কথা, সহজ-স্বাভাবিক খেলাটাই বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা খেলতে পারেনি। ভাগ্য ভালো নবম উইকেট জুটিতে মার্ক উড ও গাস অ্যাটকিনসন মিলে ৩২ বলে ৭০ রানের জুটি না গড়লে আরও বড় ব্যবধানে হারের লজ্জায় পড়তে হতো ইংল্যান্ডকে। অ্যাটকিনসন আউট হতেই দ্রুত শেষ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। তাতে ২২ ওভারে ১৭০ রানে থামে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ইনিংস।
মার্ক উড ১৭ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকলেও অ্যাটকিনসন ২১ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের মধ্যে জেরাল্ড কোয়েটজে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নিয়েছেন। তবে ব্যাট হাতে ৪২ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলা মার্কো ইয়ানসেন দুটি উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন। এছাড়া লুঙ্গি এনগিডি দুটি এবং কেশব মহারাজ ও কাগিসো রাবাদা একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ার ম্যাচে চোটের কারণে নিয়মিত অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা একাদশে ছিলেন না। তার না থাকায় শনিবার রিজা হেনড্রিকসের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন কুইন্টন ডি কক। কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ডি কক এদিন ব্যক্তিগত ৪ রানে সাজঘরে ফিরেছেন। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে রাসি ফন ডার ডুসেন ও হেনড্রিকস মিলে ১২১ রানের জুটি গড়ে ধাক্কা সামাল দিয়েছেন। ডুসেন ৬১ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলে আউট হলেও প্রোটিয়াদের রানের চাকা থামেনি। চারে নামা এইডেন মারক্রাম ইংলিশ বোলাদের ওপর চড়াও হন।
এদিকে সঙ্গীকে হারিয়ে হেনড্রিকসও বিদায় নেন তার পর। ৭৫ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৫ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। নেমে ঝড় তোলা মারক্রামকে ৪১ রানে থামিয়েছেন রিস টপলি। এরপর দ্রুত ডেভিড মিলারকে ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু ৬ষ্ঠ উইকেটে মার্কো ইয়ানসেনকে সঙ্গে নিয়ে হাইনরিখ ক্লাসেনের ১৫১ রানের বিধ্বংসী জুটিতে রানের পাহাড় গড়ে প্রোটিয়ারা। ক্লাসেন ৬১ বলে সেঞ্চুরির পর ১০৯ রানে আউট হয়েছেন। ১২ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৭ বলে ঝড়ো এই ইনিংসটি খেলেছেন ক্লাসেন।
প্রোটিয়া এই মিডল অর্ডার ব্যাটার আউট হওয়ার পরও রানের গতি কমেনি। সেঞ্চুরি না পেলেও ক্লাসেনের চেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটিং করেছেন ইয়ানসেন। ১৭৮.৫৭ স্ট্রাইকরেটে ৪২ বলে ৭৫ রান করেছেন। ক্লাসেন-ইয়ানসেনের ব্যাটেই শেষ ১০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৪৩ রান তুলেছে। ইংলিশদের বোলারদের যেন পাড়ার বোলার বানিয়ে ফেলেছিলেন তারা। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ৩৯৯ রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।
৮৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার ছিলেন রিস টপলি। আদিল রশিদ ও অ্যাটকিনসন দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, Bangladesherkhela.com এর দায়ভার নেবে না।