মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও তাসকিন আহমেদের ব্যাটিংয়ে দিনের প্রথম অংশটা নিজেদের করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। নবম উইকেটে তাঁদের দুজনের রেকর্ড ১৯২ রানে প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রানে তুলেছিল বাংলাদেশ। দিনের শেষটায় দাপট দেখিয়ে জিম্বাবুয়ে ১ উইকেটে তোলে ১১৪ রান। তাতে ৩৫৪ রানে পিছিয়ে স্বাগতিকরা।
দ্বিতীয় দিন শেষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে ৪১ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ১১৪ রান। ৩৭ রানে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলর ও ৩৩ রানে অপরাজিত রয়েছেন তাকুজওয়ানাশে কাইতানো। বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র উইকেটটি নিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৪৬৮ রানের জবাব দিতে নেমে সাবধানী শুরু করে জিম্বাবুয়ে। যেখানে তাসকিন-এবাদত হোসেনদের পেস বোলিং বেশ ভালোভাবেই সামলেছেন কাইতানো ও মিল্টন শুম্বা। ব্যাটিংয়ের প্রথম ঘন্টায় ১৩ ওভারে ৩৫ রান যোগ করে এই জুটি। এরপর ২৫ ওভার পর্যন্ত দেখেশুনে খেলে দলের রান পঞ্চাশের ওপর নিয়ে যান। কাইতানোর চেয়ে শুম্বা একটু হাত খুলেই ব্যাটিং করেন।
কিন্তু ইনিংসের ২৮তম ওভারে ধৈর্য হারিয়ে সাকিবের ফুলার লেন্থের বলকে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন এই ওপেনার। ৮৩ বলে ৭ বাউন্ডারির সাহায্যে ৪১ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন শুম্বা। তাতে দলীয় ৬১ রানে প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। এরপর তিনে নেমে কাইতানোকে দারুণভাবে সঙ্গ দেন টেলর। শেষ বিকেলে আর কোন উইকেট হারাতে দেয়নি তাঁরা দুজন। টেলর ও কাইতানোর জুটি থেকে আসে ৫৩ রান। যেখানে বেশিরভাগ অর্থাৎ ৩৭ রান করেছেন টেলর।
এর আগে লিটন দাসের সঙ্গে ১৩৮ রানের জুটি গড়ে প্রথম দিন বাংলাদেশকে শুরুর বিপর্যয় থেকে সামলে নিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপর তাসকিন আহমেদের সঙ্গে বাংলাদেশের হয়ে নবম উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়েন তিনি। সেই সঙ্গে নিজে খেলেছেন দেড়শ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। তাতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশও ৪৬৮ রানের বড় সংগ্রহ পায়।
৮ উইকেটে ২৯৪ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করে বাংলাদেশ। যেখানে শুরু থেকেই দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন মাহমুদুল্লাহ ও তাসকিন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রান বাড়াতে থাকেন তাঁরা দুজন। প্রথম সেশনে কোন উইকেট না হারিয়ে প্রথম সেশনে রাজত্ব করে বাংলাদেশ। যেখানে ২৪ ওভারে ১১০ রান তোলেন এই দুই ব্যাটসম্যান।
এর মাঝে অবশ্য সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন দীর্ঘদিন পরে জাতীয় দলে ফেরা মাহমুদুল্লাহ। প্রায় ১৭ মাস পর টেস্ট দলে ফিরে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে প্রত্যাবর্তনটা স্মরণীয় করে রাখলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। অথচ সিরিজের শুরুতে স্কোয়াডেই ছিলেন তিনি। তবে জিম্বাবুয়ে সফরের বিমান ধরার দুদিন আগে তাঁকে দলভূক্ত করা হয়েছিলো।
এদিকে, ৩২ রানে প্রাণ পাওয়া তানকিন আহমেদ প্রথম সেশনেই ফিফটির দেখা পান। এটি তার ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় দিনের সকাল থেকে দারুণ ব্যাটিং করলেও একবার জীবন পেয়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত ৩২ রানে পেসার রিচার্ড এনগারাভার বলে জীবন পান তাসকিন। দ্বিতীয় স্লিপে সহজ ক্যাচ ছাড়েন মিল্টন শুম্বা।
মধ্যাহৃ বিরতি থেকে ফিরেও দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন তাঁরা দুজন। ব্যাট হাতে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর সেঞ্চুরি করারও সুযোগ ছিল তাসকিনের। তবে সেই লুফে নিতে পারেননি তিনি। শুম্বার বলে তুলে মারতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে ফিরলে ভেস্তে যায় তাঁর সেই সুযোগ। তবে ১৩৪ বলে ৭৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে দারুণ ভূমিকা পালন করেছেন তাসকিন।
ইনিংসটি খেলতে ১১টি চার মেরেছেন তিনি। তাসকিনের বিদায়ে ভাঙে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে গড়া ১৯১ রানের জুটি। অনবদ্য জুটির পরও আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে তাঁদেরকে। মাত্র ৫ রান করলেই নবম উইকেট জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক বাউচার ও প্যাট সিমকক্সের করা ১৯৫ রানের রেকর্ড জুটি ছাড়িয়ে যেতে পারতেন তাঁরা। সুযোগ লুফে নিতে না পারায় মাহমুদুল্লাহ-তাসকিনের জুটিটি দ্বিতীয় হয়ে থাকলো।
যদিও বাংলাদেশের হয়ে নবম উইকেট জুটিতে রেকর্ড গড়েছেন তাঁরা দুজন। পেছনে ফেলেছেন মাহমুদুল্লাহ ও আবুল হাসান রাজুর ১৮৪ রানের জুটি। সেই জুটিতে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন আবুল। এদিকে তাসকিন সেঞ্চুরি হাতছাড়া করলেও দেড়শো রান করেছেন মাহমুদুল্লাহ। ব্লেসিং মুজারাবানির ইয়র্কার লেন্থের বল ডিপ স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে ২৭৮ বলে দেড়শ পূরণ করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
ইনিংসটি খেলতে ১৭টি চার ও একটি ছক্কা মেরেছেন তিনি। ক্যারিয়ারে এটিই তাঁর প্রথম দেড়শ রানের ইনিংস। এর আগে ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। মাহমুদুল্লাহ প্রান্ত বদল করার এক বল পরই আউট হয়েছেন এবাদত হোসেন। মুজারাবানির ফুল লেন্থ বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি।
তাতে বাংলাদেশ অল আউট হয় ৪৬৮ রানে আর ২৭৮ বলে ১৫০ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন মাহমুদুল্লাহ। জিম্বাবুয়ের হয়ে মুজারাবানি চারটি উইকেট নিয়েছেন। এ ছাড়া ডোলান্ড ট্রিপানো ও ভিক্টর নিয়াউচি নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।