অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন ইংল্যান্ডের। রুদ্ধশ্বাস শেষ তিন ওভারে ফিল্ডাররাও চাপ বাড়ালেন ভারতীয় বোলারদের ওপরই। অনভিজ্ঞ নটরাজনের ইয়র্কার তবুও পড়ল জায়গায় এবং তরুণ হার্দিক পান্ডিয়ার ৪৯তম ওভারে দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর শেষ ওভারে চমৎকার ফিল্ডিং। ম্যাচের সেরা স্যাম কুরানকে অপরাজিত ৯৫ রানে দাঁড়িয়ে দেখতে হল দলের পরাজয়। আর, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির পর শেষ একদিনের ম্যাচ ৭ রানে জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিলেন বিরাট কোহলিরা।
ম্যাচটা অবশ্য মনে রাখার জায়গায় নিয়ে গেলেন স্যাম কুরান। ১৬৮ রানে ৬ উইকেট হারানো ইংলিশদের হয়ে লড়াই করলেন কুরান। আউট হন ডেভিড ম্যালান ২৫.৪ ওভারে। রয়-বেয়ারস্টো-স্টোকস-বাটলার-ম্যালান ফিরে যান সাজঘরে। কোহলিদের সিরিজ জয় অনায়াস হয়ে যায়। ১৬২ রান তুলতে হবে, ২৪.২ ওভারে। কিন্তু হাতে তো উইকেটই নেই!
বল হাতে ৫ ওভারে কুরান ৪৩ রান দিয়ে ঋষভ পান্টের উইকেট নিয়েছিলেন, অবশ্য জস বাটলারের অসাধারণ ক্যাচের কারণেই উইকেট প্রাপ্তি। এমন বোলিংয়ের পর তাঁকে আর বল করতে ডাকেননি বাটলার। কিন্তু সেই কুরানই প্রায়-অসম্ভবকে সম্ভবের জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন। ৮৩ বলে ৯৫ রানে অপরাজিত, ৯ চার ও তিন ছয়ে।
কেমন চাপে ফেলেছিলেন ভারতকে? ম্যালানের ৫০ বলে ৫০, লিভিংস্টোনের ৩১ বলে ৩৬, স্টোকসের ৩৯ বলে ৩৫ বা মঈনের ২৫ বলে ২৯। কোনও কিছুই ভয়টা চালান করতে পারেনি ভারতীয়দের মনে, যা করেছিল কুরানের ইনিংস। আট নম্বরে নেমে ৪৭তম ওভারে ১৮ রান নিলেন শার্দূলের বলে। শেষ তিন ওভারে, ১৮ বলে চাই ২৩, হাতে দুই উইকেট। ডাগ-আউটে রবি শাস্ত্রী চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠলেন। ম্যাচে হঠাৎ পাল্লাভারী ইংল্যান্ডের!
চাপে ভুবনেশ্বর কুমারেরও পরপর দুটি বল ওয়াইড! মাঠের আম্পায়ার মার্ক উডকে এলবিডব্লু দিলেন, ডিআরএস দেখাল বল উইকেটে লাগছে না। দু-ওভারে ১৯, হার্দিক এলেন ৪৯তম ওভার করতে, সামনে স্যাম। শার্দূল সহজ ক্যাচ ফেললেন উডের! পরের বলে নটরাজন ফেললেন স্যামের ক্যাচ, কঠিন হলেও হাতে পেয়েছিলেন। হার্দিক ওই পরিস্থিতিতে পাঁচ রান দিলেন ওভারে, দুটি ক্যাচ না-পড়লে আরও তিন রান কমত! শেষ ওভারে ১৪ চাই ইংল্যান্ডের জিততে, বল নটরাজনের হাতে।
তরুণ, অনভিজ্ঞ নটরাজনের প্রথম বলই নিখুঁত ইয়র্কার। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে পিছলে পড়লেন স্যাম, হার্দিকের দুরন্ত থ্রো পান্টের হাতে, উড রান আউট। এক রান নিয়ে স্ট্রাইক স্যামকে ফেরালেন টোপলে। চার বল, ১২ রান। পরপর দুটি বলে এক নেওয়ার সুযোগ ছিল, নেননি স্যাম। ওভারের পঞ্চম বলে চার, অর্থাৎ শেষ বলে ৮ রান চাই। স্নায়ুর চাপ কাবু করতে পারেনি নটরানজনকে, এক রানের সুযোগ নিলেন না স্যাম। একদিনের আন্তর্জাতিকে আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে একক সর্বোচ্চ রানের সুযোগ ছিল। দল সিরিজ হেরেছে, ব্যক্তিগত রেকর্ড দিয়ে আর হবেটা কী– স্যাম কুরান ইতিহাসে থেকে গেলেন।
টানা তৃতীয় ম্যাচে টস হেরেছিলেন কোহলি। চিত্রনাট্য একই। আগে ব্যাট করে বড় রান তুলতে হবে। আটকাতে হবে ইংরেজদের। তিনটি ম্যাচেই আগে ব্যাট করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে তিনশোর বেশি রান তুললেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। একমাত্র দ্বিতীয় ম্যাচে শুরুটা শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন ইংরেজরা। ভারতীয়রা উপর্যুপরি তৃতীয় টস হেরেও ভয় পায়নি। শিখর ধাওয়ান আর রোহিত শর্মা জুটিতে একশো পেরলেন, ১৪.৪ ওভারে ১০৪ রানে প্রথম উইকেট পড়ল। রোহিত আউট আদিল রশিদের গুগলিতে, ব্যক্তিগত ৩৭ রানে। কিন্তু পরের দশ ওভারের মধ্যে একে একে ধাওয়ান, কোহলি এবং কেএল রাহুল আউট, বোর্ডে ১৫৭ রান। দশ চারে ধাওয়ানের ৫৬ বলে ৬৭ রানের ভিতের ওপর ইমারত তৈরির দায়িত্ব তখন ঋষভ পান্ট আর হার্দিক পান্ডিয়ার।
পঞ্চম উইকেটে ৯৯ রানের জুটির পর ঋষভ আউট, একদিনের ক্রিকেটে নিজের সর্বোচ্চ (৭৮, ৬২ বল, পাঁচটি চার ও চার ছক্কা) রানে। প্রতিক্রিয়ায় দুরন্ত ক্যাচ জোস বাটলারের উইকেটের পেছনে। হার্দিকও আউট (৪৪ বলে ৬৪, পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কা)। বুক ঠুকে শার্দূল ঠাকুর দেখালেন, ২১ বলে ৩০ করে, তিনটি বিরাট ছক্কায়।
ভারতীয় বোলিংয়ে সেই শুরুর পরও সিরিজ শেষ দু-বল পর্যন্ত জীবিত রেখে স্যাম কুরান অবশ্য বুঝিয়ে দিলেন, সব শেষই আসলে নতুন শুরু।