প্রিমিয়ার লিগে কাল সবগুলো বড় দলের জন্যই ছিল এক হতাশার রাত। শীর্ষে থাকা দুই দল টটেনহ্যাম ও লিভারপুল যথাক্রমে ক্রিস্টাল প্যালেস ও ফুলহ্যামের সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছে। অন্যদিকে পিয়েরে-এমেরিক অবামেয়াংয়ের আত্মঘাতি গোলে বার্নলির কাছে ১-০ গোলের হতাশাজনক পরাজয়েল স্বাদ পেয়েছে আর্সেনাল।
শীর্ষ দুই দলের পয়েন্ট হারানোর সুযোগটি ভালভাবেই কাজে লাগিয়েছে লিস্টার । জেমস ম্যাডিসনের জোড়া গোলে ব্রাইটনকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকা লিস্টার এখন টটেনহ্যাম ও লিভারপুলের থেকে মাত্র এক পয়েন্ট পিছিয়ে আছে। শেফিল্ড ইউনাইটেডকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে সাউদাম্পটন।
বুধবার এ্যানফিল্ডে টটেনহ্যামের মুখোমুখি হবে লিভারপুল। শনিবার জিততে পারেনি অপর তিন ফেবারিট চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও। প্রত্যেকেই শীর্ষে থাকা দলগুলোর সাথেষ পয়েন্টের ব্যবধান কমানোর সুযোগ হাতছাড়া করেছে।
লন্ডনের ক্রাভেন কটেজে ম্যাচ শেষের ১১ মিনিট আগে মোহাম্মদ সালাহ পেনাল্টির গোলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা হার এড়াতে সক্ষম হয়। প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটাই ছিল স্বাগতিক ফুলহ্যামের দখলে। রেডস বস জার্গেন ক্লপকে টাচলাইনে বসে দলের অসহায়ত্ব দেখতে হয়েছে। ম্যাচ শেষে ক্লপ বলেছেন, ‘ম্যাচে ফিরে আসতে আমাদের প্রায় আধা ঘন্টা সময় লেগেছে। সে কারনেই আমি তাদের প্রতি একটু বেশী উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। আমি মনে করি প্রথমার্ধে আমরা ম্যাচের আবহ বুঝতে পারিনি। শেষ ৬০ মিনিটে অবশ্য আমাদের জয়ী হওয়া উচিত ছিল। তবে দিনের শেষে এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছি, এটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
২৫ মিনিটে ববি ডিকরডোভা-রেইডের গোলে স্কট পার্কারের দল এগিয়ে গেলেও বিরতির আগে ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা গোলরক্ষক এ্যালিসন বেকারের কারনে ব্যবধান বাড়ানো থেকে রক্ষা পায় লিভারপুল। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য পুরোটাই ছিল লিভারপুলের দখলে। তারপরেও সমতা ফেরানোর জন্য তাদের পেনাল্টির প্রয়োজন হয়। জর্জিনিও উইজনালডামের ফি-কিক থেকে বক্সের ভিতর আবুবাকার কামারা হ্যান্ডবলে পেনাল্টি উপহার পায় অল রেডসরা। স্পট কিক থেকে সালাহ ফুলহ্যাম গোলরক্ষক আলফোনসে আরেওলাকে পরাস্ত করতে কোন ভুল করেননি। তবে শেষ ১০ মিনিট ফুলহ্যাম নিজেদের প্রতিরোধ করার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগও তৈরী করেছিল।
সেলহার্স্ট পার্কে দ্বিতীয়ার্ধের উজ্জীবিত পারফরমেন্সে শীর্ষে থাকা টটেনহ্যামকে দারুনভাবে রুখে দিয়েছে প্যালেস। নয় মাস পর মাঠে ফেরার সময়টাকে তাই দারুনভাবে উপভোগও করেছে স্বাগতিক সমর্থকরা। ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেনের দুর পাল্লার শট বুঝতে পারেননি প্যালেস গোলরক্ষক ভিসেন্টে গুইয়াটা। ২৩ মিনিটে তাই পিছিয়ে পড়তে হয় স্বাগতিকদের। এরপর অবশ্য স্পার্সরা নিজেদের এই লিড ধরে রাখতে পারেনি। একইসাথে টানা ছয় ম্যাচে হুগো লোরিসের গোল হজমের রেকর্ডও কাল শেষ হয়েছে। ৮১ মিনিটে এবারেচি এজের ফ্রি-কিক ধরতে ব্যর্থ হন লোরিস। ফিরতি বল থেকে স্বাগতিক সমতায় ফেরান জেফ্রি স্লাপ।
স্পার্স বস হোসে মরিনহো বলেছেন, ‘আমরা দুই পয়েন্ট নষ্ট করলাম। ৪৫ থেকে ৭৫ মিনিট পর্যন্ত আমরা নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিনি, প্রতিপক্ষকে প্রতিরোধও করতে পারিনি। এই ম্যাচে আমরা বেশ কিছু ভুল করেছি।’
গুইয়াটা এরপর কেন ও এরিক ডায়ায়ের দুটি প্রচেষ্টা অসাধারণ দক্ষতায় রুখে দিয়ে স্পার্সদের হতাশ করেছেন।
এদিকে নিজেদের ভুলে গোল হজম করে রেলিগেশন জোন থেকে এখন মাত্র পাঁচ পয়েন্ট দুরে রয়েছে আর্সেনাল। এমিরেটস স্টেডিয়ামে ৫৪ মিনিটে এ্যাশলে ওয়েস্টউডকে ফাউলের অপরাধে গ্রানিত জাকা লাল কার্ড দেখে মাঠ ত্যাগে বাধ্য হন। আর একজন বেশী নিয়ে খেলার সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে বার্নলি। ম্যাচ শেষের ১৭ মিনিট আগে ওয়েস্টউডের কর্ণার ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে বল জড়ান অবামেয়াং।
ম্যাচ শেষে গানার্স বস মিকেল আর্তেতা বলেছেন, ‘আরো একবার বাজে একটি লাল কার্ডে আমাদের পয়েন্ট হারাতে হলো। আবারো আমি একই কথা বলবো, এই ধরনের পরিস্থিতিতে এই ধরনের ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না।’
এবারের মৌসুমে আট ম্যাচের মধ্যে সপ্তমবারের মত গানার্সরা পেনাল্টি ছাড়া কোন গোল করতে ব্যর্থ হলো। প্রিমিয়ার লিগে এই প্রথমবারের মত আর্সেনালের মাটিতে জয়ের স্বাদ পেল বার্নলি। আর দারুন এই জয়ে রেলিগেশন জোন থেকে উপরে উঠে এলো দলটি।
কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধের তিন গোলে ব্রাইটনকে বিধ্বস্ত করেছে লিস্টার। দীর্ঘ ইনজুরি সমস্যা কাটিয়ে সম্ভবত নিজের সেরা পারফরমেন্স কাল দেখিয়েছেন ইংলিশ মিডফিল্ডার ম্যাডিসন। ২৭ ও ৪৪ মিনিটে তিনি দুই গোল দিয়েছেন। মাঠে জেমি ভার্দির এক গোলে বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে লিস্টার। মৌসুমে এটি ভার্দির ১২তম গোল।