গল্পকেও হার মানালেন রাহুল তেওয়াটিয়া। তাতে মরু শারজায় আইপিএলের রেকর্ড রান তাড়া করে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবকে ৪ উইেকেট হারালো রাজস্থান রয়্যালস। ১৮ তম ওভারে পাঁচ ছক্কায় ম্যাচ ঘোরালেন রাহুল তেওয়াটিয়া। ২২৪ তাড়া করে ৪ উইকেটে পাঞ্জাব বধ রাজস্থানের।
খেলার ১৮ তম ওভারে কটরেলকে ৫টি ছক্কা হাঁকান তেওয়াটিয়া। ম্যাচে ৭টি ছক্কা হাঁকিয়ে তেওয়াটিয়া ৩১ বলে ৫৩ রান করে আউট হন। এটাই আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। ইতিহাস লিখল রাজস্থান রয়্যালস।
২২৪ রানের পাহাড় প্রমাণ টার্গেট তাড়া করতে নেমে, চার নম্বরে তেওয়াটিয়াকে পাঠানো নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছিল। প্রথম ২০ বলে ব্যাটে সংযোগ লাগাতে সমস্যা পড়ছিলেন বাঁ-হাতি। প্রথম ১৯ বলে তেওয়াটিয়া ৭ রান করেন। এরপরই অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেন তেওয়াটিয়া। ১৮ তম ওভারে কটরেলকে পাঁচ পাঁচটি ছক্কা হাঁকান। শেষ ১২ বলে তেওয়াটিয়া ৪৬ রান সংগ্রহ করেন। তার এই টর্নেডো ব্যাটিংয়েই ম্যাচ জিতল রাজস্থান।
২২৪ রান তাড়া করতে নেমে স্মিথ-সঞ্জু স্যামসনরাও দারুণ খেললেন। স্মিথ ২৭ বলে ৫০ ও স্যামসন ৪২ বলে ৮৫ হাঁকান। প্রায় হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়া ম্যাচ জিতে নিল রাজস্থান রয়্যালস। এই ম্যাচ যে স্টিভ স্মিথের দল জিতে নেবে, তা হয়তো অতি বড় রাজস্থান সমর্থকরাও ভাবেননি।
পঞ্জাবের পাহাড়প্রমাণ ২২৩ রান তাড়া করতে নেমে ১৫ ওভারে রাজস্থানের রান ছিল ২ উইকেটে ১৪০। তখনও জেতার জন্য রাজস্থানের দরকার ৩০ বলে ৮৪ রান। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে পাল্টা মারের খেলা শুরু করে রাজস্থান। ১৬.১ ওভারে সঞ্জু ফিরে যান ৮৫ রানে। চেন্না্ই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে সঞ্জু ৩২ বলে ৭৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এ দিনও কথা বলল তাঁর ব্যাট। ম্যাচের সেরাও তিনি।
কিন্তু গেম চেঞ্জার তো আসলে রাহুল তেওয়াটিয়া। এক সময়ে ১৯ বলে ৭ রানে ছিলেন তিনি। তাঁকে আগে ব্যাট করতে পাঠানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। এই অবস্থায় চোয়াল শক্ত করে পঞ্জাব বোলারদের নিধন করার কাজ শুরু করেন তিনি। শেলডন কটরেলের (১৮ তম) ওভারে পাঁচটা ছক্কা হাঁকিয়ে ৩০ রান নেন তেওয়াটিয়া। তাঁর এই বিস্ফোরণে জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করে রাজস্থান শিবির। শেষ ২ ওভারে রাজস্থানের দরকার ২১ রান। লোকেশ রাহুল বল তুলে দেন মোহাম্মদ শামির হাতে। দারুণ ইয়র্কার দিতে পারেন এই পেসার। সেই সুযোগ নিয়েই ওভারে ১৯ রান তোলে রাজস্থান। যদিও শামি রবিন উথাপ্পা ও রাহুল তেওয়াটিয়াকে ফেরান কিন্তু তত ক্ষণে ম্যাচ চলে যায় রাজস্থানের পকেটে। টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২২৩ রানও যে নিরাপদ নয়, তা দেখিয়ে দিল রাজস্থান। প্রথমে স্টিভ স্মিথ (২৭ বলে ৫০), পরে সঞ্জু স্যামসন (৪২ বলে ৮৫), রাহুল তেওয়াটিয়া (৩১ বলে ৫৩) ও জোফ্রা আর্চারের (৩ বলে ১৩) ঝড়ে পঞ্জাবকে মাটি ধরায় রাজস্থান।
কাজে এল না মায়াঙ্ক আগরওয়ালের দুরন্ত সেঞ্চুরি। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে গ্লোরি শট মারতে গিয়ে ডুবিয়েছিলেন কিংস ইলেভেন পঞ্জাবকে। ছয় মেরে ম্যাচ শেষ করার চেষ্টায় ফুলটস জমা দিয়েছিলেন ফিল্ডারের হাতে। মুহূর্তের ভুলে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরতে পারেননি মায়াঙ্ক আগরওয়াল। ৬০ বলে ৮৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে সেই ম্যাচে ট্র্যাজিক হিরো হতে হয়েছিল তাঁকে।
আর রবিবার মাত্র ৫০ বলে ১০৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেললেন। মারলেন ১০টি বাউন্ডারি ও ৭টি ওভার বাউন্ডারি। তাঁর অধিনায়ক লোকেশ রাহুলও ৫৪ বলে ৬৯ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেললেন। ওপেনিং পার্টনারশিপে মায়াঙ্ক ও রাহুল করলেন ১৮৩ রান। অল্পের জন্য ভাঙতে পারলেন না ডেভিড ওয়ার্নার ও জনি বেয়ারস্টোর রেকর্ড। হায়দরাবাদের দুই ওপেনার গতবারের আইপিএলে ১৮৫ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে। সেই রেকর্ডও প্রায় ভাঙতে বসেছিল। টম কারেনের বলে ময়ঙ্ক আউট হয়ে যাওয়ায় ওয়ার্নার-বেয়ারস্টোর রেকর্ড অক্ষত থেকে যায়। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে কিংস ইলেভেন করে ২ উইকেটে ২২৩ রান।