ভারতীয় ক্রিকেটে ১০ নম্বর জার্সির একটা বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে। দীর্ঘ ক্রিকেট জীবনের একটা লম্বা সময় ধরে এই ১০ নম্বর জার্সি পরতেন মাস্টার ব্লাস্টার শচীন টেন্ডুলকার। ২০১৩ সালে যে দিন লিটল মাস্টার ২২ গজকে বিদায় জানালেন, সে দিনও তাঁর পরনে ছিল এই জার্সি। এরপর মাত্র একবারই ‘ভুলবশত’ এক ক্রিকেটারের গাযে উঠেছিলো এই বিশেষ নম্বরের জার্সিটি। কিন্তু তারপর থেকে সে ভুল আর কোনোদিন করেনি ভারতিয ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)।
তবে প্রথম দিকে এই ১০ নম্বর জার্সি পড়তেন না শচীন। প্রথম যখন ভারতের রঙিন জার্সি গায়ে মাঠে নামেন, তখন তাঁর জার্সির নম্বর ছিল ৯৯। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সময়েও এই জার্সি পরেই খেলেছিলেন শচীন। কিন্তু সেই ‘৯৯ বিশ্বকাপেই ঘটে যায় দুটি বড়সড় অঘটন। সে বছরই বিশ্বকাপ চলাকালে শচীনের বাবা রমেশ টেন্ডুলকারের মৃত্যু হয়। আর সেই বিশ্বকাপেই শচীন টেনিস এলবোয় ভয়ংকর আঘাত পান। যার যন্ত্রণা তাঁকে খেলার শেষ দিনগুলোতেও তাড়িয়ে বেড়িয়েছে।
এরপরই শচীন ৩৩ নম্বরকে আপন করে নেন। কিন্তু সেই ৩৩ নম্বর জার্সিও তাঁকে খুব একটা ভালো ফলাফল দেয়নি। তারপরই টেন্ডুলকার ১০ নম্বর জার্সি গায়ে খেলা শুরু করেন। বাকিটা ইতিহাস। একের পর এক সেঞ্চুরি। ২০০৩ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্ম। টেস্ট ওয়ানডে মিলিয়ে ১০০ সেঞ্চুরি- সব ইতিহাসের সাক্ষী এই ১০ নম্বর জার্সি।
তবে শচীনের পর ভারতের মাত্র একজন ক্রিকেটারই এই ১০ নম্বর জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু সেই ক্রিকেটারকে এই ১০ নম্বর জার্সি পরার অনুমতি দেওয়ায় ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। চাপের মুখে এক ম্যাচের পর ঐ ১০ নম্বর জার্সি আর পড়তে হেয়া হয়নি কাউকে।
মহারাষ্ট্রের পেসার শার্দূল ঠাকুর বহুকাঙ্খিত ডেব্যু ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন ২০১৭ সালের ৩১ অগাস্ট। কলোম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে চতুর্থ এক দিনের ম্যাচে নামানো হয়েছিল তাঁকে। আর সেই ম্যাচেই শার্দূলের পরনে ছিল ১০ নম্বর জার্সি। চাপের মুখে জার্সি নম্বর বদলে ৫৪ করে নিলেন শার্দূল। আর ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর শচীনের মতোই ১০ নম্বরটিরও অবসর ঘোষণা দেন বোর্ড কর্তারা।
ফুটবলে যদিও বেশির ভাগ সময়েই দেখা গিয়েছে আইকনিক প্লেয়ারদের এই ১০ নম্বর জার্সি গায়ে মাঠে নামতে। দিয়েগো মারাদোনা থেকে শুরু করে লিওনেল মেসি, পেলে থেকে নেইমার সকলেরই জার্সির নম্বর ১০। ক্রিকেটে শচীন ছাড়া এই ১০ নম্বর জার্সি গায়ে দেখা গিয়েছে পাকিস্তানের শাহিদ আফ্রিদি, অস্ট্রেলিয়ার ড্যারেন লেহমান এবং পিটার সিডল, নিউজিল্যান্ডের ক্রেইগ ম্যাকমিলান এবং ইংল্যান্ডের জেয়ারান্ট জোনসও এই ১০ নম্বর জার্সি পরে দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলেছেন।
শচীন টেন্ডুলকরের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার হ্যান্সি ক্রোনিয়ে এবং অস্ট্রেলিয়ার ফিল হিউজের জার্সি নম্বর ব্যবহার করার অনুমতি এই দুই দলের কোনও প্লেয়ারেরই নেই। হ্যান্সি ক্রোনিয়ের জার্সি নম্বর ছিল ৫। আর ফিল হিউজের ৬৪। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক হ্যান্সি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর মাত্র একজন প্লেয়ারই ৫ নম্বর জার্সি গায়ে দিয়েছিলেন। মূলত হ্যান্সিকে শ্রদ্ধা জানাতেই টপ অর্ডার সাউথ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান অ্যাশয়েল প্রিন্স জার্সির পিছনে লিখেছিলেন ৫+০। অন্যদিকে ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ফিল হিউজের মৃত্যুর পর আর কোনও প্লেয়ারকে জার্সির পিছনে ওই ৬৪ নম্বর লেখার অনুমতি দেওয়া হয়নি।