সেই ২০০০ সালের নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক। তারপর ঢাকায় এই টেস্টের আগে ১৬ বছরে ঘরের মাঠে ৫২ টেস্টে চারটি মাত্র জয়। যার সবগুলোই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বৃষ্টির সাহায্য ছাড়াও প্রায় নিজেদের শক্তি- সামর্থ্যরে ওপর ভর করে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মত পরাশক্তির সাথে ড্র করার রেকর্ডও আছে।
এই তো গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩০০’র বেশি রানে পিছিয়ে থেকেও সাফল্যের সঙ্গে টেস্ট ড্র করার অসামান্য কৃতিত্ব আছে। তামিম ইকবালের ডাবল সেঞ্চুরি ও ইমরুলের শতরানে দারুণ সংগ্রামী ড্র এখনো সবার স্মৃতিতে ভাস্বর।
এছাড়া ২০১৪ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষেও ব্যাটসম্যানদের সাফল্যে ড্র করা গেছে। কুমারা সাাঙ্গাকারার ট্রিপল সেঞ্চুরিতে (৩১৯) সাজানো রানের পাহাড়ের নিচে চাপা না পড়ে প্রথমে ইমরুল কায়েস-শামসুর রহমান শুভর জোড়া সেঞ্চুরি আর শেষ ইনিংসে মুমিনুল হকের শতরানে ম্যাচ ড্র করে বাহবা কুড়ায় মুশফিকের দল।
এর বাইরে বৃষ্টির পরোক্ষ সাহায্য নিয়ে কয়েকটি টেস্ট ড্র হয়েছে। কিন্তু ‘বড় দলে’র তকমা মাখা দলের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে এটাই প্রথম টেস্ট জয়। অবশ্য এর আগে জয় ধরা না দিলেও, জয়ের হাতছানি যে ছিল না, তা নয়। ছিল।
২০০৩ সালে মুলতানে, ২০০৬ সালে ফতুল্লায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে, আর ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের সাথে দুটি টেস্ট প্রায় জয়ের অবস্থায় হয়েছে হতাছাড়া। এই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চলতি সিরিজে চট্টগ্রামেও জয়ের হাতছানি ছিল। অল্পের জন্য তা ধরা দেয়নি।
কিন্তু এবার ঠিক জয়ের দেখা মিললো। প্রথমে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করা। তারপর সত্যি সত্যি জয় তুলে নেয়া। এ সাফল্যে মিললো এক নতুন বার্তা। তা হলো এই প্রথম, দুই টেস্টে টানা ভাল খেললো টাইগাররা।
এর আগে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক টেস্ট ড্র করার পর পরই হেরে বসা। এই তো গত বছর যে ম্যাচের উপমা টানা হলো সেই খুলনায় পাকিস্তানের সাথে ড্র-এর পর শেরে বাংলায় পাকিস্তানের কাছে শেষ টেস্টে ৩২৮ রানের হিমালয় সমান ব্যবধানের হার ছিল সঙ্গী।
কিন্তু এবার আর সেই ভালোর পর আর খারাপ গ্রাস করতে পারেনি। এই প্রথম টানা দুই টেস্ট ভাল খেলে দেখাল টাইগাররা। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আমরা ওয়ানডের পাশাপাশি টেস্টেও এখন ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলতে শিখেছি।
সেদিন হয়ত খুব দুরে নয়, যেদিন ওয়ানডের মত টেস্টেও বলে-কয়ে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলতে শুরু করবেন মুশফিক, তামিম ও সাকিবরা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক এই জয়ের পর ঠিক সে কথাই বলেছেন মুশফিক।
টাইগার অধিনায়ক বোঝাতে চাইলেন, এ জয়ই শেষ নয়। এটাই নতুন পথে যাত্রা শুরু। তাই তো মুখে এমন সংলাপ, ‘টেস্ট ক্রিকেটে জয়-পরাজয় এখনই আমার কাছে খুব বড় ব্যাপার নয়। তবে শেষ দুটি ম্যাচ আমরা যেভাবে খেলেছি তাতে শুধু ইংল্যান্ড নয়, যে কোনো দলের বিপক্ষেই জেতা সম্ভব হবে। এটা হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া। আপনি যে দলের বিপক্ষেই খেলবেন, ধারাবাহিকভাবে তিন-চার-পাঁচটা দিন আপনাকে ভালো ক্রিকেট খেলতেই হবে। আমার মনে হয়, সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।’
টেস্টেও ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। মুশফিকের ভাবনা, ‘টেস্টেও এটা খুব দরকার ছিল। কারণ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দল বিশ্বাস করে, যে কোনো জায়গায় থেকে যে কোনো দলকে হারাতে পারবে। এখন আমি বিশ্বাস করি, টেস্টেও আমরা ধীরে ধীরে সে জায়গার দিকে যাচ্ছি। সেই বিশ্বাসটা আমাদের আছে। আমার বিশ্বাস, যে কোন বড় ধরনের বিপর্যয়ের পরও আমরা এখন ঘুরে দাড়ানো শিখেছি। ’
ভাবার কোনই কারন নেই যে, মুশফিক একটি জয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে অমন কথা বলেছেন। চট্রগ্রামের অমন নজরকাড়া পারফরমেন্সের পর পর ঢাকায় যে সে সত্যরই দেখা মিললো।